কান্নায় ভেঙে পড়েছেন পুলিশ আধিকারিক মুস্তাক আহমেদ লোনের পরিবারের সদস্যরা। ছবি: পিটিআই।
কফিনে মোড়া দেহ বাড়িতে ঢুকতেই কান্নার রোল উঠল। পুলিশের হাত থেকে প্রায় ছিনিয়ে নিয়ে সেই কফিনের উপর আছড়ে পড়ল পরিবারের সদস্যদের শোকাতুর শরীরগুলি। কেউ কফিনে মাথা ঠুকছিলেন। কেউ বুক চাপড়ে বিলাপ করছিলেন। কেউ আবার স্বজন হারিয়ে অচৈতন্য হয়ে পড়েছিলেন। আকুলি-বিকুলি, আছাড়ি-পিছাড়ি খাওয়া সেই মানুষগুলিকে কোনও রকমে সরিয়ে কফিনটি নিয়ে শেষকৃত্যের জন্য রওনা হয়েছিল পুলিশ।
মুস্তাক আহমেদ লোন। জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের এক আধিকারিক। গত বুধবার তাঁর গুলিবিদ্ধ নিথর দেহ শ্রীনগরের বাড়িতে এসে পৌঁছেছিল। মঙ্গলবার শ্রীনগরেই জঙ্গিদের সঙ্গে লড়াইয়ে নিহত হন মুস্তাক। বছর দু’য়েক আগেও এই বাড়িতে কান্নার রোল উঠেছিল। দু’বছরের মধ্যে দুই সদস্যকে হারিয়ে লোন পরিবার যেন বাক্রুদ্ধ হয়ে গিয়েছিল।
দু’বছরের মধ্যে বাবা এবং ছেলের মৃত্যু। প্রেক্ষিতটা একই, তবে বিপরীতমুখী। এক জন জঙ্গির গুলিতে নিহত হয়েছেন। অন্য জন জঙ্গি সন্দেহে জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের গুলিতে মারা গিয়েছেন। যে পুলিশের হাতে জঙ্গিদের সহযোগী সন্দেহে ছেলে আকিবের মৃত্যু হল, সেই জঙ্গিদের হাতেই মৃত্যু হল মুস্তাকের।
২০২০ সালের এপ্রিল মাস। বাড়ি থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে জঙ্গিদমন অভিযানে নিহত হয়েছিলেন লোন পরিবারের ছেলে আকিব মুস্তাক। তিনি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক করেছিলেন। অভিযোগ ছিল, জঙ্গিদের সহযোগিতা করেছিলেন আকিব। কুলগামে জঙ্গিদের সঙ্গে গুলির লড়াই হয় পুলিশের। চার জঙ্গি পালাতে সক্ষম হয়। তল্লাশি চালানোর সময় আকিবের গুলিবিদ্ধ দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশের দাবি ছিল, জঙ্গিদের সহযোগিতা করেছিলেন আকিব। কিন্তু সেই সংঘর্ষ নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। আকিবের পরিবারের পাল্টা দাবি ছিল, তাঁদের ছেলে কোনও ভাবেই জঙ্গিদের সহযোগিতা করেননি। তাঁরা অভিযোগ তুলেছিলেন ভুয়ো সংঘর্ষের। আকিবের পরিবারের দাবি, বিষয়টি তদন্ত করা হবে বলে জানিয়েছিল পুলিশ। কিন্তু আজও না কি সেই ঘটনার কিনারা হয়নি।
আকিবের দেহ পরিবারের হাতে তুলে দেয়নি পুলিশ। কুলগাম থেকে ১৫০ কিলোমিটার দূরে বারামুলা জেলায় তাঁকে সমাধিস্থ করা হয়। সন্তান হারিয়ে শোকে বিহ্বল হয়ে পড়েছিল লোন পরিবার। যে পরিবারে এক জন পুলিশ, এক জন ভারতীয় সেনার ইঞ্জিনিয়ার, সেই পরিবারের ইঞ্জিনিয়ার ছেলে জঙ্গি হতেই পারে না বলে দাবি পরিবারের।
সন্তান হারানোর আঘাত সামলে উঠতে না উঠতেই আবারও আঘাত স্তব্ধ করে দিয়েছে লোন পরিবারকে। পুলিশ সূত্রে খবর, শ্রীনগরের লালবাজারে চেকপয়েন্টে মুস্তাকের নেতৃত্বে তল্লাশি চালাচ্ছিল পুলিশ। সেই সময় একটি স্কুল থেকে জঙ্গিরা বেরিয়ে এলোপাথাড়ি গুলি চালাতে শুরু করে পুলিশকে লক্ষ্য করে। সেই গুলিতেই নিহত হন মুস্তাক। আহত হয়েছেন আরও দুই পুলিশকর্মী। দ্য রেজিসট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ) এই হামলার দায় স্বীকার করেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy