নূপুর শর্মা। ফাইল ছবি
‘নূপুর নবীন কো ওয়াপস লো’। ‘বয়কট কাতার এয়ারওয়েজ’।
নূপুর শর্মা ও নবীনকুমার জিন্দলকে বিজেপির ‘শাস্তি’ দেওয়া দেখে সমাজমাধ্যমে কার্যত দিশেহারা ছবি বিজেপির নেট-বাহিনীর। রবিবার রাত থেকে কখনও তাঁরা শাস্তিপ্রাপ্ত নূপূর শর্মা ও নবীনকে ফিরিয়ে আনার দাবি তুললেন। কখনও পাল্টা বয়কটের ডাক দিয়ে ‘বদলার’ চেষ্টা করলেন।
বিজেপির জাতীয় মুখপাত্রের পয়গম্বর সম্পর্কে নিন্দনীয় মন্তব্য ও দল থেকে তাঁদের সাসপেন্ড ও বহিষ্কারের পরে রবিবার রাত থেকেই নূপূর ও নবীনের এই শাস্তির প্রতিবাদে সমাজমাধ্যমে নেমে পড়েন বিজেপি সমর্থকেরাও। রাতেই ট্রেন্ডিং হয় ‘নূপুর নবীন কো ওয়াপস লো’। বিজেপি সমর্থক অনেকেই টুইটারে দলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন। এক জনের মন্তব্য, ‘‘যে দলের নেতারা কর্মীর পাশে না দাঁড়িয়ে তাঁকে ছুড়ে ফেলে দেন সে দলের হার হতে দেরি নেই।’’ প্রধানমন্ত্রী মোদীকে উদ্দেশ্য করে এক জনের মন্তব্য, ‘‘মোদীজি , আপনি দলের মুখপাত্রের পাশে দাঁড়াতে না পারলে বিশ্বাসযোগ্যতা হারাবেন।’’ এক জনের আক্ষেপ, ‘বিজেপি আর মতাদর্শগত দল নেই। ধীরে ধীরে তার কংগ্রেসিকরণ হচ্ছে।’’ একাধিক বিজেপি কর্মী জানান, তাঁদের দলের কাজ ছেড়ে দিতে ইচ্ছে করছে।
এত দিন যে সব টুইটার-প্রোফাইল গর্বিত গেরুয়া-বাহিনীর পরিচয়ে সরব ছিল, তেমন অজস্র অ্যাকাউন্ট থেকে নাগাড়ে টুইট করা হয় ‘শেম অন বিজেপি’ হ্যাশট্যাগে। দলীয় কর্মীদের পাশে না দাঁড়িয়ে তাঁদের বহিষ্কার করায় নেতৃত্বকে ‘ভিতু’ বলে আক্রমণ করতেও কসুর করেননি সমর্থকেরা। ‘নূপুর নবীন কো ওয়াপস লো’ এবং ‘শেম অন বিজেপি’ ট্রেন্ডিংয়ের শীর্ষে চলে আসে টুইটারে। কেবল আম সমর্থকবাহিনী নয়, খোদ প্রধানমন্ত্রী যাঁর পরিচালিত ছবি দেখতে দেশবাসীকে অনুরোধ জানিয়েছিলেন, কাশ্মীর ফাইলসের সেই পরিচালক সেই বিবেক অগ্নিহোত্রীও কার্যত দেবীর আসনে বসিয়ে সমর্থন করেছেন নূপূরকে। বিবেকের ক্ষোভে মোড়া টুইট, ‘‘আবার একবার আর্বান নকশালরা জিতে গেল। আমি নূপূর শর্মার পাশে আছি। আপনার টুইটার অ্যাকাউন্টের নাম রাখা উচিত নূপুর শর্মা দুর্গা।’’
কেবল দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ক্ষোভই নয়। সোমবার সকাল থেকে গেরুয়া সমর্থক বাহিনীকে মধ্য এশিয়ার দেশগুলির বিরুদ্ধে সমাজমাধ্যমে পাল্টা আক্রমণ শানানোর চেষ্টা করতেও দেখা গিয়েছে। ‘বদলা’ নিতে পাল্টা বয়কটের ডাক দিয়ে টুইটারে তারা সন্ধে পর্যন্ত ট্রেন্ডিং করায় ‘বয়কট কাতার এয়ারওয়েজ।’ কিন্তু আড়াই লক্ষ টুইট ছাড়িয়ে গেলেও সেই হ্যাশট্যাগে ‘বয়কট’ বানানটিই ছিল ভুল। রাতে আবার তা ঠিক করে নতুন হ্যাশট্যাগ চালু করা হয়। এমন কাণ্ডে বিরোধীদের টিপ্পনী, ‘‘এঁরা স্কুল বয়কট করেননি তো!’’
বস্তুত, এই বয়কটের ডাক ছিল সমাজমাধ্যমে গেরুয়া শিবিরের চেনা অস্ত্র। কখনও দীপাবলিতে পোশাকের বিজ্ঞাপনে উর্দু শব্দ থাকায় ধর্মের অনুভূতিতে ‘আঘাতের’ দাবি তুলে বয়কটের ডাক। কখনও আবার গয়নার বিজ্ঞাপনে মুসলিম পরিবারে হিন্দু পুত্রবধূকে দেখানোয় ‘লভ জিহাদের’ জিগির তুলে বয়কটের ডাক। গত কয়েক বছরে আরও একাধিক পণ্যের বিরুদ্ধে সংখ্যাগরিষ্ঠের ধর্মে আঘাত দেওয়ার অভিযোগ তুলে তাদের আক্রমণ করা হয়েছে গেরুয়া শিবিরের নেট-বাহিনীর তরফে। বিরোধীরা বলছেন, নূপুর শর্মার মন্তব্যের পরে যে ভাবে ভারতীয় পণ্য বয়কটের ডাক দেওয়া হয়, তাতে সেই বয়কট-অস্ত্রই ব্যুমেরাং হয়ে বিঁধছে তাদের।
ইরান-সহ নানা দেশে ভারতীয় পণ্য বয়কটের ডাক দেওয়া হয় রবিবার থেকেই। টুইটারে সেই বয়কটের ডাকের হ্যাশট্যাগ সোমবার অবধি ট্রেন্ডিং ছিল। টুইটারের নানা ভিডিয়োয় দেখা যাচ্ছে শপিং মল থেকে ভারতীয় পণ্য বার করে দেওয়া হচ্ছে।
সমাজমাধ্যমে এমন দাবিও অনেকে করেন যে ভারতীয় হিন্দুদের নাকি কাজ থেকেও ছাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। পাল্টা অস্ত্র হিসেবে গেরুয়া শিবিরের তরফে কাতার এয়ারওয়েজ বয়কটের ডাক দেওয়া হলেও তা বিশেষ কার্যকর হয়নি। বিরোধীদের পাল্টা কটাক্ষ, ‘‘ভারত ইরাক, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি থেকে সবচেয়ে বেশি তেল আমদানি করে। পারলে পেট্রল, ডিজেল বয়কট করুন!’’
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy