Not only Deepika Padukone’s but Laxmi Agarwal’s battle has inspired million hearts dgtl
laxmi agarwal
পেয়েছিলেন মরে যাওয়ার ‘উপদেশ’, অ্যাসিড-ছাই থেকে ফিনিক্স-উত্থান ‘ছপাক’-এর লক্ষ্মীর
আত্মীয় পরিজন বা পরিচিত মহলে অনেকে বলেছিলেন, মুখ ছাড়া অন্য শরীরের অন্য অংশ পুড়লে চিন্তার ছিল না! এই মেয়ের বিয়ে কী করে হবে! অনেকে নাকি ইঞ্জেকশন দিয়ে মেরে ফেলার ‘সদুপদেশ’-ও দিয়েছিলেন!
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০২০ ১০:৩৭
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৫
মনে হচ্ছিল সারা শরীরে কেউ যেন আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। জ্বলতে জ্বলতেই সংজ্ঞা হারান কিশোরী। কিন্তু কেউ এগিয়ে আসেনি সাহায্যের জন্য। শেষে এক সহৃদয় ব্যক্তি তাঁর গায়ে জল ছিটিয়ে নিয়ে যান হাসপাতালে। তখন সংজ্ঞার সঙ্গে ফিরে এসেছে অসহ্য যন্ত্রণাও।
০২১৫
হাসপাতালে প্রথমে তাঁর উপর কুড়ি বালতি জল ঢালা হয়েছিল। তারপরে ব্যান্ডেজে ঢেকে গিয়েছিল সারা গা। ওই ওয়ার্ডে কোনও আয়না ছিল না। রোজ সকালে নার্স একটি পাত্রে জল আনতেন ড্রেসিংয়ের জন্য। কিশোরী দেখার চেষ্টা করতেন নিজের মুখ। সাদা ব্যান্ডেজ ছাড়া কিছু নজরে পড়ত না প্রতিবিম্বে।
০৩১৫
চিকিৎসক বলেছিলেন, এই কিশোরী বাঁচবে না। তারপর সাত বছরে সাত বার অস্ত্রোপচার। কুড়ি লাখ টাকা খরচ যোগাতে নিঃস্ব হয়ে গিয়েছিল পরিবার। মধ্যবিত্ত পরিবারের সেই কিশোরীর তখন মনে হত, চিকিৎসকের কথাটা কেন সত্যি হল না! নিজেও চেষ্টা করেছিলেন আত্মঘাতী হওয়ার। কিন্তু পারেননি বাবা মায়ের কথা ভেবেই।
০৪১৫
এখন মনে হয়, বেঁচে থেকে কিছু ভুল করেননি। নইলে, কে জানত লক্ষ্মী আগরওয়ালের জীবনযুদ্ধ! কী করে তৈরি হত ‘ছপাক’? যেখানে দীপিকা পাড়ুকোন ‘মালতী’-র ভূমিকায় অভিনয় করে বলবেন লক্ষ্মীর দগদগে সংগ্রাম।
০৫১৫
সেই সংগ্রাম শুরু হয়েছে ২০০৫-এর এপ্রিলে। সে মাসেরই একদিন লক্ষ্মীর মুখে উড়ে এসেছিল অ্যাসিড। ‘ছপাক’ শব্দটার সঙ্গে শরীরের সঙ্গে পুড়ে গিয়েছিল জীবনের সব স্বপ্ন।
০৬১৫
পঞ্চদশী কিশোরীর ‘অপরাধ’ ছিল তিনি প্রেম প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। বন্ধুর ৩২ বছর বয়সি দাদা নঈমের বিয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। ‘না’ বলার প্রতিশোধ নিতে লক্ষ্মীর মুখে অ্যাসিড ছুড়ে মেরেছিল নঈম। দিল্লির খান মার্কেটের খোলা রাস্তায়, প্রকাশ্য দিনের বেলায়।
০৭১৫
আত্মীয় পরিজন বা পরিচিত মহলে অনেকে বলেছিলেন, মুখ ছাড়া অন্য শরীরের অন্য অংশ পুড়লে চিন্তার ছিল না! এই মেয়ের বিয়ে কী করে হবে! অনেকে নাকি ইঞ্জেকশন দিয়ে মেরে ফেলার ‘সদুপদেশ’-ও দিয়েছিলেন!
০৮১৫
সব উপেক্ষা করে লক্ষ্মীর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন তাঁর বাবা। যিনি একসময় মেয়েকে বলেছিলেন গায়িকা হওয়ার স্বপ্ন থেকে সরে আসতে তিনি-ই জীবনের শেষ সম্বলটুকু দিয়ে মেয়ের চিকিৎসা করিয়ে গিয়েছেন।
০৯১৫
আয়নায় প্রথমবার নিজের পুড়ে যাওয়া মুখের চেহারা দেখে চিৎকার করে উঠেছিলেন। তারপর থেকে নিজেকে ঢেকে রাখতেন ওড়না দিয়ে। তবু রেহাই ছিল না পরিচিতদের কটূক্তি থেকে। মনে হত, এরা যেন রোজ, প্রতি মুহূর্তে তাঁকে পুড়িয়ে মারছে!
১০১৫
একদিন ঠিক করলেন নিজেকে আর লুকিয়ে রাখবেন না। ফেলে দিলেন ওড়নার অবগুণ্ঠন। সরাসরি মুখোমুখি হলেন বাইরের দুনিয়ার। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ওপেন স্কুলিং থেকে ভোকেশনাপল ট্রেনিং নিলেন। নতুন করে শুরু করতে চাইলেন ছাই থেকে ওঠা ফিনিক্স পাখির মতো। এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হল তাঁর যুদ্ধ।
১১১৫
পাশাপাশি লক্ষ্মী শুরু করলেন আইনি লড়াই। আদালতের রায়ে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড হয়েছে নঈমের।
১২১৫
সে দিনের লক্ষ্মী আজ ঊনত্রিশের যুবতী। সমাজে তাঁর মতো ‘লক্ষ্মী’দের আর যেন লুকিয়ে থাকতে না হয়, তার জন্য চলছে তাঁর আন্দোলন। অ্যাসিড আক্রমণ বন্ধ করতে, আক্রান্তদের জীবনের মূলস্রোতে ফেরাতে লক্ষ্মী আজ বদ্ধপরিকর।
১৩১৫
আন্দোলনে সামিল হয়েই আলাপ হয়েছিল সমাজকর্মী অলক দীক্ষিতের সঙ্গে। আলাপ থেকে প্রণয়। কিন্তু তাঁরা ঠিক করেছিলেন বিয়ে করবেন না। কারণ, বিয়ের আসরে নিমন্ত্রিতদের মুখে কনের চেহারা নিয়ে কটাক্ষ বা কটূক্তি তাঁরা শুনতে চাননি। তাই লিভ-ইন সম্পর্কে ছিলেন অলক-লক্ষ্মী।
১৪১৫
একদিন ভেঙে গেল সেই ঘরও। মেয়ে পিহুর জন্মের পরে আলাদা হয়ে গেল দু’জনের চলার পথ। একরত্তি সেই মেয়ে এখন লক্ষ্মীর লড়াইয়ের নতুন প্রেরণা।
১৫১৫
সংগ্রামের স্বীকৃতিস্বরূপ লক্ষ্মী প্রাক্তন মার্কিন ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামার কাছ থেকে পেয়েছিলেন ‘ইন্টারন্যাশনাল উইমেন অব কারেজ অ্যাওয়ার্ড’। সাহসটুকু অবলম্বন করেই আগামী দিনেও পাড়ি দিতে চান লক্ষ্মী। একাই বড় করতে চান মেয়ে পিহুকে।
(ছবি: আর্কাইভ এবং ফেসবুক)