সাক্ষাৎ: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার নয়াদিল্লিতে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে। ছবি: পিটিআই।
‘উনি কিন্তু টিভি দেখছেন। উনি কিন্তু আপনাদের দেখছেন’— আজ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে ‘অসাধারণ’ বৈঠক করে এই ভাষাতেই সাংবাদিকদের সতর্ক করে দিলেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘‘উনি জানেন, আপনারা কী চেষ্টা করছেন! তাই থেমে যান।’’
কী চেষ্টা? অভিজিতের উত্তর, ‘‘প্রধানমন্ত্রী আজ শুরুতেই ঠাট্টা করে বলেছেন, সংবাদমাধ্যম আমাকে কী ভাবে মোদী-বিরোধী কথা বলানোর জন্য ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করছে।’’ আজ সকালে সাত নম্বর লোক কল্যাণ মার্গে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে যান অভিজিৎ। পরে সাংবাদিক বৈঠকে এসেই তাঁর সাবধানবাণী, ‘‘উনি কিন্তু আপনাদের দেখছেন। তাই, থেমে যান।’’
অর্থনীতিতে নোবেল জয়ের পরেই দেশের অর্থনীতি ‘দুর্বল জমি’-র উপর দাঁড়িয়ে বলে দুশ্চিন্তা প্রকাশ করেছিলেন অভিজিৎ। খুব তাড়াতাড়ি অর্থনীতি চাঙ্গা হচ্ছে বলে সরকারের দাবি মানতে চাননি। এর আগে প্রশ্ন তুলেছিলেন নোট বাতিল নিয়ে। নোবেল-জয়ের পরেও তুলেছেন। অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে মোদী সরকারের কর্পোরেট কর ছাঁটাইয়ের নীতিকেও সমর্থন করেননি তিনি। লোকসভা ভোটের আগে কেন্দ্রের পরিসংখ্যান মন্ত্রক বেকারত্ব সংক্রান্ত পরিসংখ্যান ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করায় অর্থনীতিবিদরা প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছিলেন। তাঁদের মধ্যে অভিজিৎও ছিলেন। আজ মোদীর সঙ্গে আলোচনার পর সাংবাদিক বৈঠকে অভিজিৎ অবশ্য সেই বেকারত্বের সমস্যা নিয়ে প্রশ্নের উত্তর দিতে চাননি।
নোবেল জয়ের পরে দেশের মাটিতে পা দিয়ে ‘মত প্রকাশের স্বাধীনতা’, ‘বিরুদ্ধ মত প্রকাশের অধিকার’-এর কথা বলেছিলেন। আজ মোদীর সঙ্গে বৈঠকের পর দিল্লিতে জল্পনা চলেছে, অভিজিতের কি ‘ভোলবদল’ ঘটল? নাকি জেএনইউ-এর প্রাক্তনী ঘুরিয়ে মোদী সরকারকে ‘সর্বত্র নজরদারি’ করা ‘বিগ ব্রাদার’-এর আখ্যা দিয়ে গেলেন?
এ দিন মোদীর সঙ্গে বৈঠক সেরে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন থেকে বেরোনোর আগেই অভিজিতের প্রতিক্রিয়া ভিডিয়ো রেকর্ড করে রাখা হয়। পরে তা সরকারের তরফে প্রচার করা হয়। সেখানে অভিজিৎ বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক একেবারে অন্য রকম। কারণ আমরা সবাই নীতির কথা শুনি, তার পিছনে ভাবনা-চিন্তার কথা শোনা হয় না। উনি প্রশাসনকে কী ভাবে দেখেন, কেন মাঝে মাঝে মানুষের অবিশ্বাস প্রশাসনে ছাপ ফেলে, কী ভাবে প্রশাসন অভিজাতদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়, সরকার আর সংবেদনশীল থাকে না, তা নিয়ে কথা বলেছেন।’’ প্রশাসনের এই সংস্কারকে দেশের জন্য ‘গুরুত্বপূর্ণ আখ্যা’ দিয়ে অভিজিৎ বলেন, ‘‘এমন আমলাতন্ত্র তৈরি করা জরুরি, যা বাস্তবের জমিতে দাঁড়িয়ে থাকে। বাস্তবের জীবন থেকে চাঙ্গা হওয়ার দাওয়াই পায়।’’ মোদীকে ‘ধন্যবাদ’ জানিয়ে তাঁর মন্তব্য, এই বৈঠক তাঁর কাছে ‘অনন্য অভিজ্ঞতা’।
বিজেপির নেতা-মন্ত্রীরা অভিজিৎকে ‘বাম ঘেঁষা’ আখ্যা দিলেও মোদীও আজ নোবেল-জয়ীর সঙ্গে বৈঠককে ‘অসাধারণ’ বলেছেন। টুইট করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মানুষের ক্ষমতায়নের জন্য ওঁর আবেগ খুব স্পষ্ট। ওঁর সাফল্যে ভারত গর্বিত’। গবেষণার ফাঁকে রান্না করতে পছন্দ করা অভিজিৎ সোমবার রাতেই বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী বস্টনে গেলে তিনি বাঙালি নিরামিষ রান্না করে খাওয়াবেন। দিল্লি থেকে কলকাতার বিমান ধরার আগে মেনুও জানিয়ে দিয়েছেন অভিজিৎ। লাউ-পোস্ত ও বিউলির ডাল। তবে রাজ্যের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্ত ও বর্তমান অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র বাড়িতে এলে তাঁর মেনু ‘রগরগে মাংস’।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy