সুরজপল অমূ। ফাইল চিত্র।
ওরা (মুসলিম) গোঁফ কাটে, আমরা গলা কাটতে পারি...এক এক জনকে ধরে ধরে মারব— করোনা আবহের মধ্যে প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই রীতিমতো মহাপঞ্চায়েত ডেকে সেই মঞ্চ থেকে হিন্দুদের উদ্দেশে এই ভাষায় উস্কানিমূলক মন্তব্য করার অভিযোগ উঠল হরিয়ানা বিজেপির মুখপাত্র এবং করণী সেনার সভাপতি সুরজপল অমূর বিরুদ্ধে। গত রবিবারের ওই অনুষ্ঠানের একাধিক ভিডিয়ো ছড়িয়েছে সামাজিক মাধ্যমে। অভিযোগ, পুলিশ-প্রশাসনের তোয়াক্কা না-করেই অমূ সরাসরি নিশানা করেছেন মুসলিম সম্প্রদায়কে। ওই সভায় রীতিমতো হুমকির সুরে জনতার উদ্দেশে অমূ আরও বলেন, ‘‘দেশে ইতিহাস গড়তে হবে, ইতিহাস হয়ে যাওয়া চলবে না।’’
ওই মহাপঞ্চায়েতের বিষয় ছিল পটৌডি এবং তার আশপাশে ছড়িয়ে পড়া ‘লাভ জেহাদ’। অন্তত অনুষ্ঠানের আগে বিভিন্ন গ্রামে ছড়িয়ে দেওয়া প্রচারপত্রে লেখা ছিল তেমনটাই। ‘মুসলিমদের পাতা ফাঁদে পা দিয়ে’ হিন্দু মহিলাদের ধর্মান্তরকরণ নিয়ে ‘বাড়তে থাকা চিন্তা’— তা নিয়েই বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, বজরং দল এবং স্থানীয় কয়েকটি সংগঠনের আয়োজিত ওই মঞ্চ থেকে অমূ বার্তা দেবেন বলে জানানো হয়েছিল সেখানে।
সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া অনুষ্ঠানটির একাধিক ভিডিয়োয় দেখা যাচ্ছে, প্রায় শ’খানেক পুলিশের সামনেই অমূ ওই আপত্তিজনক কথাগুলি বলছেন! ঘটনার সপ্তাহ ঘুরতে চললেও এখনও পর্যন্ত অমূর বিরুদ্ধে কোনও আইনি ব্যবস্থা নেয়নি হরিয়ানার বিজেপি সরকারের পুলিশ। বিষয়টি নিয়ে চোখ বুজে রয়েছে প্রশাসনও। কিন্তু কেন? উত্তরে সংশ্লিষ্ট এলাকার পুলিশ কমিশনার বরুণ সিংলা ভিডিয়োগুলো দেখার কথা স্বীকার করেও জানালেন, কেউ পুলিশে অভিযোগ না-জানানোয় কোনও পদক্ষেপ করা যায়নি। আইন যদিও বলছে, এ ধরনের বিদ্বেষমূলক এবং প্ররোচনামূলক মন্তব্যের ক্ষেত্রে স্বতঃপ্রণোদিত ভাবেই অভিযুক্তকে গ্রেফতারের ক্ষমতা রয়েছে পুলিশের হাতে। সে ক্ষেত্রে ধৃতের তিন বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে। বিরোধীদের দাবি, অমূ বিজেপি নেতা বলেই এমন হিংসাত্মক মন্তব্য করেও পার পেয়ে যাচ্ছেন।
তবে ওই মঞ্চে বিদ্বেষমূলক বক্তব্যে অমূকেও ছাপিয়ে গিয়েছিলেন রামভক্ত গোপাল নামে এক যুবক। ২০২০ সালে দিল্লির জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভরত ছাত্রছাত্রীদের উপর গুলি চালিয়ে ধরা পড়লেও বয়সের কারণে ছাড় পেয়ে যান তিনি। সেই রামভক্ত গোপাল ওই মঞ্চ থেকেই সরাসরি মুসলিম গণহত্যার ডাক দেন। মুসলিম মহিলাদের তুলে নিয়ে যাওয়ার ডাকও দেন জনতার উদ্দেশে। এমনকি এ কাজের জন্য তিনি যে গর্বিত, তা-ও ফেসবুক লাইভ করে জানান রামভক্ত। তাঁকে গ্রেফতারের দাবিতে নেটিজ়েনরা সরব হলেও হরিয়ানার বিজেপি পুলিশ অবশ্য কোনও পদক্ষেপই করেনি।
রামভক্তের উস্কানিমূলক মন্তব্য নিয়ে চুপ থাকলেও অমূ প্রসঙ্গে হরিয়ানা বিজেপির মিডিয়া সেলের প্রধান সঞ্জয় শর্মা বলেন, ‘‘অমূ যা বলেছেন, তা তাঁর নিজস্ব মতামত। তিনি শাসক দলের প্রতিনিধি হিসেবে কিছু বলেননি।’’
অমূর যদিও দাবি, অবশ্যই তিনি দলের একজন মুখপাত্র। পটৌডির এই মহাপঞ্চায়েতে তাঁর ‘হিন্দুত্ববাদী মন্তব্যের’ ভিডিয়ো ক্লিপিং টুইট করে সেখানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং বিজেপি-কেও ট্যাগ করেছেন তিনি। সঙ্গে ক্যাপশন, ‘‘বলা হয় হিন্দুরা সহনশীল, তারা সব সহ্য করে নেয়। তবে আমরা বলি, সহ্যেরও একটা সীমা আছে, কত দিন পর্যন্ত অন্ধের মতো লাভ জেহাদ এবং ধর্মান্তরকরণের ঘটনাগুলো সহ্য করে যাব ভাই?’’
পটৌডির মুসলিম জনসংখ্যা প্রায় ৩০%। অমূর মন্তব্যের জেরে আতঙ্কিত তারা। তাঁদেরই একজন সরফরাজ়। তাঁর কথায়, ‘‘এখানে হিন্দুদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক বেশ মজবুত এবং তেমনটাই থাকবে। তবে এ ধরনের উস্কানিমূলক মন্তব্য বন্ধ হওয়া দরকার।...পটৌডি কখনই এমন ছিল না।’’ বিজেপির আরও এক মুখপাত্র ডি পি কৌশিক অবশ্য অমূর মন্তব্যকে আপত্তিজনক আখ্যা দিয়ে জানান, দল নিশ্চয়ই বিষয়টি নিয়ে ভাববে।
যদিও তাতে কর্ণপাত করতে নারাজ অমূ। সেফ আলি খানকে বিয়ে করার জন্য বলিউড অভিনেত্রী করিনা কপূরকে নিশানা করেছেন তিনি। বাদ যায়নি তাঁদের ছেলে তৈমুরও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy