প্যাংগংয়ের পূর্ব তীরে ভারতীয় সেনার সঙ্গে আলোচনায় চিনা বাহিনী। ছবি: পিটিআই।
লাদাখে প্যাংগং হ্রদের তীর থেকে সেনা সরানোর কাজ শুরু হলেও দেপসাং নিয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছনো যায়নি। বরং এ নিয়ে চিনের সঙ্গে আলোচনার জন্য হাতে সময় নিয়ে ধীরে সুস্থে এগোতে চায় ভারত। প্যাংগংয়ে চিনের সঙ্গে ‘সমঝোতা’ নিয়ে বিরোধীদের আক্রমণে যখন জেরবার কেন্দ্র, সেই সময় সেনা সূত্রে এমনই খবর সামনে এল। জানা গিয়েছে, প্যাংগংয়ে সেনা সরানোর কাজ সম্পূর্ণ হলে তার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ভারত ও চিন, দুই দেশের মধ্যে ফের কম্যান্ডার স্তরের বৈঠক হবে। সেখানে দেপসাং সমতলে অবস্থিত গোগরা এবং উষ্ণ প্রস্রবণ এলাকা থেকে সেনা সরানো নিয়ে আলোচনা হবে।
তবে এ নিয়ে সেনার একাংশের মধ্যেই অসন্তোষ ধরা পড়েছে। দেপসাংয়ে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা সংলগ্ন হেলমেট টপ এবং ইয়েলো বাম্পের মতো এলাকাকে এই চুক্তির আওতায় না এনে শুধুমাত্র প্যাংগং থেকে সেনা সরাতে কেন রাজি হল ভারত, প্রশ্ন উঠছে তা নিয়ে। তবে কেন্দ্রীয় সরকারের দাবি, দেপসাং পুরনো সমস্যা। তাই তা আলাদা ভাবে মেটাতে হবে। কিন্তু ১৯৬২ সালের যুদ্ধের পর থেকে পারস্পরিক সম্মতিতে যেখানে হেলমেট টপ এবং ইয়েলো বাম্প অনধিকৃত এলাকা বলে চিহ্নিত ছিল এত দিন, সেখান থেকে চিনা বাহিনীকে সরাতে কেন চাপ দিচ্ছে না কেন্দ্র তা নিয়ে প্রশ্ন মাথাচাড়া দিচ্ছে।
শুধু তাই নয়, প্যাংগংয়ের উত্তর তীর থেকে এই মুহূর্তে পশ্চিম দিক বরাবর ফিঙ্গার ২ থেকে ফিঙ্গার ৩-এর মধ্যে অবস্থিত ধান সিংহ ধাপা পোস্টে ফিরে যাচ্ছে ভারতীয় সেনা। চিনা বাহিনী ফিঙ্গার ৮-এর সিরিজাপ থেকে অবস্থান সরিয়ে নিচ্ছে। এই ফিঙ্গার ৩ থেকে ফিঙ্গার ৮ পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার পর্যন্ত আপাতত ‘বাফার জোন’ হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। অর্থাৎ চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে না আসা পর্যন্ত কোনও পক্ষই সেখানে টহল দিতে পারবে না। ফিঙ্গার ৮ থেকে ফিঙ্গার ৪ পর্যন্ত সমস্ত বাঙ্কার এবং নির্মাণ ইতিমধ্যেই ভেঙে দিয়েছে চিন।
কিন্তু এ নিয়েও তীব্র সমালোচনার মুখে কেন্দ্রীয় সরকার। কারণ এত দিন ফিঙ্গার ৪ পর্যন্ত এলাকা ভারতের দখলে ছিল। কিন্তু নয়া চুক্তির আওতায় কার্যত জায়গা ছেড়ে দিয়ে ফিঙ্গার ৩-এ সরে আসতে হচ্ছে ভারতকে। তা নিয়ে ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দাগতে শুরু করেছেন বিরোধীরা। দেশের প্রাক্তন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী তথা কংগ্রেস নেতা এ কে অ্যান্টনি বলেন, ‘‘অত্যন্ত খারাপ উদাহরণ তৈরি হল। এর পরে অরুণাচল প্রদেশ ও সিকিমেও একই ভাবে আত্মসমর্পণ করতে হবে। কেন ফিঙ্গার ৪ থেকে ৩-তে পিছিয়ে এলেন মোদী? জবাব দিতে হবে সরকারকে।”
দক্ষিণে কৈলাস গিরিশৃঙ্গ দখল করে রণকৌশলগত যে সুবিধা ভারতীয় সেনা পেয়েছিল, তা-ও বিসর্জন দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন অ্যান্টনি। শুধু প্যাংগং-ই নয়, গলওয়ান উপত্যকার ১৪ নম্বর ভারতীয় পোস্ট থেকেও সেনাকে পিছিয়ে নিয়ে আসা এক অর্থে আত্মসমর্পণ বলেই দাবি তাঁর।
পারস্পরিক সম্মতিতে গত ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে প্যাংগংয়ের উত্তর ও দক্ষিণ তীর থেকে সেনা সরাতে শুরু করেছে ভারত ও চিন। আলাপ আলোচনার মাধ্যমে কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছতে ফেব্রুয়ারি পার হয়ে যেতে পারে বলে আগে মনে করা হয়েছিল। তবে শুধুমাত্র মুখের কথায় চিনাবাহিনীর উপর বিশ্বাস করা উচিত কি না ধন্দে ছিল দিল্লি। তাই গত সপ্তাহে দু’পক্ষের মধ্যে লিখিত চুক্তি হয়। তার পরই ধাপে ধাপে সেনা এবং যুদ্ধ সরঞ্জাম সরানোর কাজ শুরু হয়েছে।
চুক্তি মেনে প্যাংগংয়ের তীর থেকে ইতিমধ্যেই ট্যাঙ্ক, হাউইৎজার কামান সরিয়ে নিয়েছে দুই দেশ। প্যাংগংয়ের দক্ষিণ তীরে কৈলাস পার্বত্য অঞ্চলের চুসুল সেক্টর থেকে ভারীমাত্রার যুদ্ধ সরঞ্জামও সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। গত বছর অগস্টের শেষ দিকে থাকুং থেকে গুরুং পর্বত পর্যন্ত ৬-৭টি শৈলশিরায় সেনা মোতায়েন করেছিল ভারত। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় (এলএসি) দু’পক্ষের মধ্যে শূন্যে গুলি ছুড়ে পরস্পরকে সতর্ক করার ঘটনা ঘটেছে অন্তত ৪ বার। তবে এই মুহূর্তে দু’তরফই পিছু হটছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy