Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪

দেশ জুড়ে এনআরসির ঘোষণা হয়নি, অমিতভাষণ খণ্ডন করে বিজ্ঞাপন মোদী সরকারের

সদ্য সমাপ্ত অধিবেশনে খোদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ কিন্তু বিরোধীদের বলেছিলেন, কোনও সংশয় রাখবেন না, এনআরসি গোটা দেশেই হবে।

বিজ্ঞাপন দিয়ে কেন্দ্র জানাল, সারা দেশে এনআরসির ঘোষণা হয়নি। —ফাইল চিত্র

বিজ্ঞাপন দিয়ে কেন্দ্র জানাল, সারা দেশে এনআরসির ঘোষণা হয়নি। —ফাইল চিত্র

অনমিত্র সেনগুপ্ত
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৪:২৬
Share: Save:

দেশ জুড়ে কোনও এনআরসি-র ঘোষণা হয়নি। যদিও কখনও (এনআরসি)-এর ঘোষণা হয়......! জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) ও নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) ঘিরে বিভ্রান্তি এড়াতে আজ সংবাদপত্রে দেওয়া বিজ্ঞাপনে এ বাক্যই লিখল নরেন্দ্র মোদী সরকার। বিজ্ঞাপনের বক্তব্য হল, যদি কখনও দেশ জুড়ে এনআরসি-র ঘোষণা হয়, তা হলে সেই পরিস্থিতিতে নিয়ম ও নির্দেশিকা এমন ভাবে তৈরি করা হবে যাতে কোনও ভারতীয় নাগরিক অসুবিধায় না পড়েন।

সদ্য সমাপ্ত অধিবেশনে খোদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ কিন্তু বিরোধীদের বলেছিলেন, কোনও সংশয় রাখবেন না, এনআরসি গোটা দেশেই হবে। ওই বক্তব্যের ভিত্তিতে বিজেপি সাংসদেরাও দেশব্যাপী এনআরসি তৈরির দাবিতে সরব হন। আর আজ কেন্দ্রের বিজ্ঞাপনে এনআরসি সম্পর্কে ওই বক্তব্য (যদি কখনও হয়) আসায় সংশয় তৈরি হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে কে ঠিক? স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী না কেন্দ্রের বিজ্ঞাপন! দিনের শেষে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী জি কিষেণ রেড্ডি মেনে নেন, এনআরসি নিয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠক হয়নি, বিষয়টি কবে হবে কেউ জানে না।

সংসদে দিনক্ষণ না বললেও, অমিত শাহ মাসের শুরুতে ঝাড়খণ্ডের রাঁচীতে নির্বাচনী প্রচারে দাবি করেছিলেন, ২০২৪-এর লোকসভা ভোটের আগেই দেশে এনআরসি তৈরি করে ফেলা হবে। চিহ্নিত করা হবে প্রত্যেক অনুপ্রবেশকারীকে। তার পর আজকের বিজ্ঞাপন ও মন্ত্রকের ছোট মন্ত্রীর শাহের বক্তব্য খণ্ডনকে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।

শাসক শিবিরের একাংশের মতেই, দেশব্যাপী ওই বিক্ষোভে বেশ বেকায়দায় সরকার। আমজনতার মধ্যে বিশেষ করে মুসলিমদের পাশাপাশি হিন্দুদের মধ্যেও এনআরসি এবং সিএএ ঘিরে যে উদ্বেগ এবং প্রতিবাদ ছড়িয়েছে, তাতে অশনি সঙ্কেত দেখছে দল। হিন্দু ভোটের মেরুকরণ করতে গিয়ে উল্টো দল বিপাকে বলেই মত বিজেপির নেতাদের। তাই আজ বিজ্ঞাপন দিয়ে দেশবাসীকে ভরসা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়।

স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জি কিষেণ রেড্ডিও বলেন, ‘‘এনআরসি নিয়ে আইন মন্ত্রক বা কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় কোনও আলোচনা হয়নি। এর কোনও খসড়া তৈরি হয়নি। আমি জানাতে চাই, এনআরসি দ্রুত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। সময় লাগবে। বিজ্ঞাপনেও সেই কথা বলা হয়েছে। এনআরসি করে সরকার মুসলিমদের ভারত থেকে তাড়াতে চাইছে বলে কিছু দল প্রচার চালাচ্ছে।’’ কিন্তু অমিত যে বলেছিলেন, দেশ জুড়ে ২০২৪ সালের মধ্যে এনআরসি হবে? জবাবে মুখ খুলতে চাননি কোনও স্বরাষ্ট্রকর্তাই। রেড্ডি বলেন, ‘‘আনা হবে বলা হয়েছিল। কবে আনা হবে তার দিনক্ষণ নেই।’’

বিরোধী শিবির বলছে, প্রথমে শাহ রাজ্যসভায় এনআরসি হবে বলে দাবি, তারপরে সিএএ পাশ হয় সংসদে। সব দেখে পথে নামেন সাধারণ মানুষ। বিরোধীদের দাবি, সরকার প্রতিরোধ দেখে আসলে পিছু হটছে।

নয়া নাগরিকত্ব আইন ঘিরেও উঠেছে প্রশ্ন। অমিত শাহদের দাবি ছিল, ওই আইনে তিন প্রতিবেশী দেশ থেকে আসা অ-মুসলিমদের নিঃশর্ত নাগরিকত্ব দেবে সরকার। কিন্তু মন্ত্রক পরে জানায়, সব শরণার্থী নাগরিকত্ব পাবেন না। প্রতিটি শরণার্থীকে অনলাইনে নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানাতে হবে। কর্তৃপক্ষ তা খতিয়ে দেখে সিদ্ধান্ত নেবে। আইনে বলা হয়েছে, যাঁরা ধর্মীয় উৎপীড়নের কারণে পালিয়ে এসেছেন, তাঁদেরই ওই সংশোধিত আইনে নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। শরণার্থীর আবেদনের সত্যতা বিচার করে দেখবে রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিটিক্যাল উইং বা র’। ফলে শরণার্থীদের নিঃশর্ত নাগরিকত্ব দেওয়ার যে প্রতিশ্রুতি সরকার বিল পাশের সময়ে দিয়েছিল, তা কতটা পালন হচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বিজেপির অন্দরমহলেই।

নাগরিকত্ব প্রশ্নে চলতি সপ্তাহে নতুন বিতর্ক সৃষ্টি করেছেন সেই অমিত শাহই। একটি বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যমে তিনি জানান, আধার ও ভোটার কার্ডও কোনও ব্যক্তির নাগরিকত্ব প্রমাণ করে না। একমাত্র নাগরিক পঞ্জিতে নাম থাকাটাই নাগরিকত্বের প্রমাণ। ফলে বিরোধীদের প্রশ্ন, মোদী-শাহেরা তা হলে কোন নাগরিকদের ভোটে জিতে এসেছেন? নাগরিকত্বের মাপকাঠি কি তা জানতে চেয়ে স্বরাষ্ট্র ন্ত্রকে লিখিত প্রশ্ন করেও জবাব পাওয়া যায়নি।

প্রতিমন্ত্রী রেড্ডি বিরোধীদের অভিযোগ সম্পর্কে বলেন, ‘‘দেশে কত লোক আসছেন, যাচ্ছেন তা জানা নেই। সে কারণে রেজিস্টার হওয়া দরকার। যাতে সব নাগরিকের নাম থাকবে।’’ কিন্তু নাগরিকত্ব পাওয়ার মাপকাঠি বা সিএএ-র নিয়মবিধি কী হবে সে প্রশ্নে রেড্ডির জবাব, ‘‘আগে পরিস্থিতি শান্ত হোক। তারপরে সিএএ নিয়মাবিধি তৈরি হবে।’’ প্রশ্ন উঠেছে, যখন কয়েকশো কোটি টাকা খরচ করে আধার কার্ড তৈরি করা হল, তখনই সেটিকে নাগরিকত্বের মাপকাঠি পাশ করানোর মতো কেন করা হয়নি। সরকারের জবাব, ‘‘দু’টি সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়। দু’টিরই ভিন্ন উদ্দেশ্য রয়েছে।

অন্য বিষয়গুলি:

CAA NRC Amit Shah Narendra Modi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy