Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

যথাপূর্বম্: নেই নয়া দিশা, সাবধানি নির্মলা

ভুল! বাজেট পেশ করেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনই। কিন্তু ক্রিকেট বিশ্বকাপে ইদানীং ধোনি যেমন সাবধানি ইনিংস খেলছেন, সীতারামন অর্থমন্ত্রী হিসেবে সেই ধোনি-অবতারেই আবির্ভূত হলেন!

চিত্রণ: কুণাল বর্মণ।

চিত্রণ: কুণাল বর্মণ।

প্রেমাংশু চৌধুরী
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০১৯ ০২:৪৮
Share: Save:

লোকসভায় বাজেট পেশ করলেন মহেন্দ্র সিংহ ধোনি!

ভুল! বাজেট পেশ করেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনই। কিন্তু ক্রিকেট বিশ্বকাপে ইদানীং ধোনি যেমন সাবধানি ইনিংস খেলছেন, সীতারামন অর্থমন্ত্রী হিসেবে সেই ধোনি-অবতারেই আবির্ভূত হলেন!

ঝুঁকি নিলেন না। নিজের ‘সেফ জ়োন’ থেকে না বেরিয়ে, লোকসভা ভোটের আগের অন্তর্বর্তী বাজেটে যে দিশা দেখানো ছিল, সেই রাস্তাতেই চললেন দেশের প্রথম পুরো সময়ের মহিলা অর্থমন্ত্রী। লোকসভা ভোটের আগে অন্তর্বর্তী বাজেট পেশ করেছিলেন পীযূষ গয়াল। সে সময় গ্রাম-গরিব-কৃষকদের নানা প্রকল্পে যেখানে যেমন বরাদ্দ ছিল, দ্বিতীয় মোদী সরকারের অর্থমন্ত্রী কার্যত সেই পরিমাণ বরাদ্দই রেখে দিলেন। পেট্রল-ডিজেলে ২ টাকা বাড়তি কর, ২ কোটি টাকার বেশি আয়সম্পন্ন ধনীদের আয়করে বাড়তি সারচার্জ বসিয়ে রাজকোষ ঘাটতির অঙ্ক মেলালেন। ঘাটতি লাগামে রাখতে অর্থ মন্ত্রকের আশা, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ভাঁড়ারে থাবা বসিয়ে ৯০ হাজার কোটি টাকা ডিভিডেন্ড মিলবে।

করার অবশ্য অনেক কিছুই ছিল। আর্থিক বৃদ্ধিতে মন্দার টান। তাকে চাঙ্গা করতে পিক-ফর্মের ধোনির হেলিকপ্টার শটের মতো কিছু আর্থিক সংস্কার দরকার ছিল। তা হয়নি। শিল্পমহলের আশা ছিল, বিনিয়োগে উৎসাহ দিতে কিছু দাওয়াই দেওয়া হবে। সে পথেও নির্মলা হাঁটেননি। এমনকি সব শিল্প সংস্থার জন্য কর্পোরেট করও ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করেননি। সেখানেও শর্ত রেখেছেন, বছরে ৪০০ কোটি টাকা পর্যন্ত ব্যবসাতেই কর্পোরেট কর কমবে। অর্থনীতিবিদদের একাংশ বলছেন, বাজেট বক্তৃতায় আর্থিক নীতির রূপরেখার থেকে রাজনৈতিক দর্শনের প্রচার বেশি হয়েছে। প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের মন্তব্য, ‘‘উনি মনমোহন সিংহর মতো বৈপ্লবিক সংস্কার করতে পারেননি। অল্পবিস্তর বদল করেছেন।’’

বাজারে কেনাকাটা কমতির দিকে। প্রত্যাশা ছিল, গাড়ি বা অন্য পণ্যে কর ছাড় দেওয়া হবে। তা হয়নি। উল্টে অনেকটা ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো ‘রক্ষণশীল’ নীতি নিয়েছেন। দেশীয় শিল্পকে বাঁচাতে বেশ কিছু বৈদ্যুতিন পণ্যে আমদানি শুল্ক বাড়িয়েছেন। ফলে বাজারে ওই সব পণ্যের দাম বাড়তে পারে। কেনাকাটা বাড়ানোর আরেকটি উপায় ছিল, আমজনতার হাতে খরচ করার মতো নগদ টাকা জুগিয়ে দিতে আয়করে ছাড় দেওয়া। সেটাও হয়নি। তাই এ বাজেটে চাকুরিজীবী মধ্যবিত্তের জন্য কিছুই নেই। ধনীদের উপরে বাড়তি কর বসানোয় দামি পণ্য এবং পরিষেবার ব্যবসা কমতে পারে বলে আশঙ্কা।

মুখে ‘গ্রাম, গরিব, কৃষক’-এর জয়গান গেয়েছেন। কিন্তু গ্রামের বাজারে কেনাকাটা বাড়বে কী করে? সে প্রশ্নে অর্থমন্ত্রীর জবাব, ‘‘গ্রাম সড়ক যোজনা, আবাস যোজনার মতো গ্রামীণ পরিকাঠামোয় সরকারি খরচ বাড়ানো হবে।’’ কিন্তু সে টাকা কোথা থেকে আসবে, তার দিশা মেলেনি। অর্থমন্ত্রী দেশি-বিদেশি লগ্নির লাল ফিতের ফাঁস কাটানোর কথা বলেছেন। কিন্তু বাজারে চাহিদা না থাকলে, নতুন লগ্নি আসবে কেন?

স্বাভাবিক ভাবেই হতাশ শিল্পমহল। শেয়ার বাজার। হতাশ মধ্যবিত্ত।

হতাশ সাধারণ মানুষ। কারণ ভোটে জিতে এসে মোদী সরকার ‘তোফা’ দেবে বলে যে স্বপ্ন দেখিয়েছিল, সেই প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর অবশ্য দাবি, ‘‘এই বাজেট আশার, আকাঙ্খার, বিশ্বাসের। এই বাজেট থেকেই ৫ লক্ষ কোটি ডলারের অর্থনীতির স্বপ্নপূরণ হবে।’’ অর্থনীতিবিদরা বলছেন, হতাশাজনক হলেও একটাই স্বস্তির দিক। তা হল, বাজেটে নতুন কোনও বড় খরচের ঘোষণা অর্থমন্ত্রী করেননি। তাই রাজকোষ ঘাটতি লাগামছাড়া হয়নি। বরং রাজকোষ ঘাটতি আগের বছরের ৩.৪% থেকে এ বছর ৩.৩ শতাংশে নেমে আসবে বলে দাবি করেছেন।

তা কোন জাদুতে সম্ভব হবে?

আয় বাড়াতে পেট্রল-ডিজেলে ২ টাকা করে বাড়তি কর বসিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। সেই সুবাদে পরোক্ষ কর থেকে বাড়তি ২৫ হাজার কোটি টাকা আয় হবে। বছরে ২ কোটি টাকার বেশি আয়সম্পন্ন ধনীদের আয়করে সারচার্জ বসিয়েছেন। কর বাড়ালে তার ভাগ রাজ্যগুলিকেও দিতে হত। সারচার্জ বাবদ আয় পুরোটাই কেন্দ্রের ঘরে থাকবে। রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে চাপ দিয়ে ৯০ হাজার কোটি টাকা ডিভিডেন্ড আদায়ের লক্ষ্য নিয়েছে মোদী সরকার। আগের বছর যার পরিমাণ ছিল ৬৮ হাজার কোটি টাকা। বিলগ্নিকরণ থেকে আয় বাড়াতে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার মালিকানার সংজ্ঞা বদলে, সরকারি অংশীদারিত্ব ৫১% থেকে কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নির্মলা। এয়ার ইন্ডিয়া বেচতে বিমান ক্ষেত্রে বিদেশি লগ্নির দরজা খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

সরকারি খরচে ছাঁটাই করলে বৃদ্ধিতে আরও ধাক্কা লাগত। কিন্তু অন্তর্বর্তী বাজেটে এমনিতেই গয়াল খরচ ছাঁটাই করে ঘাটতির অঙ্ক মিলিয়েছিলেন। সব ক্ষেত্রে বরাদ্দ সেই মতোই রেখে দেওয়ায়, এই সরকারি খরচে বাজারে কেনাকাটা বা বৃদ্ধি চাঙ্গা করা যাবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই গেল। অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, এই বাজেটের পরে এ বছরের বৃদ্ধির হার ৬ শতাংশের ঘরেই থাকবে বলে ধরে নেওয়া যায়। গ্রামের বাজারে কেনাকাটা বাড়বে কি না, তার অনেকটাই নির্ভর করবে বর্ষার উপরে। আর আর্থিক বৃদ্ধি, লগ্নিতে জোয়ার আনতে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সুদ কমানোর মুখাপেক্ষী হয়েই থাকতে হবে।

এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।

অন্য বিষয়গুলি:

Nirmala Sitharaman Union Budget 2019
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE