নির্মলা সীতারামন। —ফাইল চিত্র।
লোকসভায় ‘এক দেশ, এক ভোট’ বিল পেশ হল। তার পরেই সংসদে দাঁড়িয়ে চলতি বছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরে আর্থিক বৃদ্ধির হার কমে যাওয়ার জন্য লোকসভা নির্বাচনকে দায়ী করলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। নির্বাচনের জন্য উন্নয়নে খরচের গতি কমে যায়, তা বোঝাতে চাইলেন। কিন্তু ‘এক দেশ, এক ভোট’ হলে খরচ আদৌ কতখানি কমবে, অর্থনীতির আদৌ মঙ্গল হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন আর্থিক বিশেষজ্ঞরা।
‘এক দেশ, এক ভোট’ চালু করে লোকসভা নির্বাচনের সঙ্গেই সব রাজ্যের বিধানসভা ভোট করানোর পিছনে মোদী সরকারের প্রধান যুক্তি, এতে খরচ কমবে। বার বার নির্বাচনের ফলে উন্নয়নের গতি থমকে যাবে না। কারণ বার বার নির্বাচনের আদর্শ আচরণবিধির ফলে সরকারের কাজে বাধা পড়ে।
চলতি অর্থ বছরের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক বা জুলাই-সেপ্টেম্বরে আর্থিক বৃদ্ধির হার ৫.৪ শতাংশে নেমে এসেছে। লোকসভায় এ নিয়ে বিরোধীদের প্রশ্নের মুখে আজ অর্থমন্ত্রীর যুক্তি, অর্থ বছরের প্রথম তিন মাস, এপ্রিল-জুনে বৃদ্ধির হার ৬.৭ শতাংশ ছিল। জুলাই-সেপ্টেম্বরে বৃদ্ধির হার ৫.৪ শতাংশে নেমে এসেছে। এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এই তিন মাস শুধু ভারত নয়, গোটা দুনিয়ার কাছেই চ্যালেঞ্জিং সময় ছিল। এ জন্য নির্বাচনকে দায়ী করে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘‘এ বছর সরকারি খরচ শুরুই হয়েছে অগস্ট থেকে। কারণ নির্বাচনের পরে জুলাই মাসে পূর্ণাঙ্গ বাজেট পেশ হয়েছে। ফলে সেপ্টেম্বর, অক্টোবরে বৃদ্ধির হার নীচের দিকে ছিল। অন্য বার যখনই লোকসভা ভোট হয়েছে, তার সঙ্গে এ বছরের পরিস্থিতি আলাদা কিছুই নয়।’’
অর্থমন্ত্রী ঘুরিয়ে ‘এক দেশ, এক ভোট’-এর পক্ষে সওয়াল করলেও এতে অর্থনীতির কতখানি লাভ হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কেন্দ্রীয় সরকারেরই প্রাক্তন অর্থসচিব সুভাষচন্দ্র গর্গ এক নিবন্ধে সওয়াল করেছেন, একসঙ্গে লোকসভা, বিধানসভার ভোট হলে খরচ সাশ্রয় হবে— এটা বাজে (বোগাস) যুক্তি। ২০১৯ থেকে ২০২৪-এর মধ্যে সরকারের নির্বাচনের জন্য ১৬,২৫৫ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। প্রতি বছর ৩,২৫১ কোটি টাকা। এর মধ্যে নির্বাচন কমিশন চালাতে ব্যয় হয়েছে ৩০০ কোটি টাকা। ১,৯১৬ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে নির্বাচন আয়োজন করতে। আর ইভিএমের পিছনে ১,০৩৫ কোটি টাকা। প্রতি বছরের কেন্দ্রীয় বাজেটের খরচ ৩৭.৩৫ লক্ষ কোটি টাকার মধ্যে নির্বাচনের পিছনে খরচ মাত্র ০.০৯ শতাংশ। অন্য দিকে, একসঙ্গে লোকসভা, বিধানসভা ভোট করাতে গেলে যে অতিরিক্ত ইভিএম প্রয়োজন হবে, তাতে ইভিএম সংক্রান্ত খরচ দ্বিগুণ বেড়ে যাবে।
আইনজ্ঞরা বলছেন, ‘এক দেশ এক ভোট’ বিলে বলা হয়েছে, কোনও রাজ্যে চার বছরের মাথায় সরকার পড়ে গেলে, সেখানে মাত্র এক বছর মেয়াদের সরকার নির্বাচনের জন্য ভোট হবে। কারণ, পঞ্চম বছরে রাজ্যটি ফের লোকসভা নির্বাচনের সঙ্গে ভোটে যাবে। রাজ্যে রাজ্যে দু’এক বছরের মেয়াদের সরকারের জন্য ভোট করাতে হলে খরচ কী ভাবে কমবে?
প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের নেতৃত্বাধীন উচ্চস্তরীয় কমিটি বলেছিল, ‘এক দেশ, এক ভোট’-এর ফলে যা ফায়দা হবে, তা সংখ্যায় মাপা সম্ভব নয়। কিন্তু নির্বাচন কমিশন কমিটিকে জানিয়েছিল, ২০২৯-এ লোকসভা ভোট করাতে খরচ হবে আনুমানিক ৭,৯৫১ কোটি টাকা। তার পরে ‘এক দেশ, এক ভোট’ করাতে হলে বিপুল সংখ্যক বাড়তি ইভিএম, কেন্দ্রীয় বাহিনী প্রয়োজন হবে। লোকসভায় কংগ্রেসের উপ-দলনেতা গৌরব গগৈ বলেন, ‘‘মোদী সরকার যুক্তি দিচ্ছে, একসঙ্গে নির্বাচন হলে না কি কোটি কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। ২০২৪-এর লোকসভা ভোট করাতে নির্বাচন কমিশনের ৩৭০০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। যা বছরের বাজেটের মাত্র ০.০২ শতাংশ। এই সামান্য সাশ্রয়ের জন্য গোটা যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো ভেঙে ফেলা কতটা জরুরি!”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy