চূড়ান্ত নাজেহাল দশা চলছে এনআইএ-র ফাইল চিত্র।
পশ্চিমবঙ্গে পরের পর দুর্নীতি-সহ নানা ঘটনার তদন্তভার ঘাড়ে চাপায় সিবিআই, ইডি-র নাভিশ্বাস উঠছে বলে ওই সব সংস্থার সূত্রের খবর। একই ভাবে এ রাজ্যে উপর্যুপরি বহু মামলার তদন্তের দায়িত্ব এসে পড়ায় চূড়ান্ত নাজেহাল দশা চলছে এনআইএ বা জাতীয় তদন্তকারী সংস্থারও।
বঙ্গে বোমা বিস্ফোরণ, বিস্ফোরক উদ্ধার, গোষ্ঠী-সংঘর্ষ, জঙ্গি গ্রেফতার-সহ বিভিন্ন মামলার তদন্তভার ন্যস্ত হয়েছে এনআইএ-র উপরে। অতীতেও রাজ্যের অনেক মামলার তদন্তভার নিয়ে ছিল তারা। কিন্তু গত এক বছরে এনআইএ-র হাতে মামলা তুলে দেওয়ার হার অনেকটাই বেশি। গত এক বছরে ১২টি মামলার ভার পেয়েছে এনআইএ। উত্তর দিনাজপুরের দাড়িভিটে দুই যুবকের রহস্যমৃত্যু সংক্রান্ত মামলার তদন্তভার বুধবার এনআইএ-র হাতে তুলে দিয়েছে কলকাতা হাই কোর্ট।
দিল্লির গোয়েন্দা দফতরের সূত্রের খবর, মূলত দেশ-বিরোধী কাজ বা জঙ্গি কার্যকলাপের তদন্ত করার জন্য এনআইএ গড়া হয়েছিল ২০০৯ সালে। বিস্ফোরক ধারায় কোনও মামলা থাকলে তারও তদন্ত করে ওই সংস্থা। সে-ভাবেই দেশের ১২টি শহরে এনআইএ-র থানা বা কেন্দ্র তৈরি করা হয়। তার মধ্যে কলকাতাও আছে। কলকাতা এনএইএ-র হাতে সাম্প্রতিক ১২টি মামলার (যে-সব মামলার চার্জশিট পেশ হয়নি, তদন্ত চলছে) তদন্তভার রয়েছে। সেই সঙ্গে রয়েছে বাংলার পুরনো বেশ কিছু মামলার তদন্ত। এর পাশাপাশি রয়েছে জঙ্গি কার্যকলাপের উপরে নজরদারি।
গোয়েন্দা সূত্রের খবর, কলকাতা এনআইএ-তে এখন আছেন এক জন এসপি, তিন ডিএসপি, চার জন ইনস্পেক্টর। তাঁদের সঙ্গে আছেন জনা কুড়ি সাব-ইনস্পেক্টর ও কনস্টেবল। তাঁদের হাতেই আছে ওই সব মামলার তদন্তভার। গোয়েন্দাদের একাংশের বক্তব্য, এনআইএ-র তদন্তের পদ্ধতি ভিন্ন। প্রতিটি মামলার গোড়ায় গিয়ে তদন্ত চালায় ওই সংস্থা। সেখানে একগাদা মামলা একই সঙ্গে চলে আসায় বিপাকে পড়েছেন এখানকার তদন্তকারীরা। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, রাজ্যের বাইরে থেকে অফিসার এনে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যায় কি না, সেই বিষয়ে ভাবনাচিন্তা চলছে।
বুধবার দাড়িভিটের তদন্তের দায়িত্ব দেওয়ার আগে আদালত গত মাসে এনআইএ-র হাতে তুলে দিয়েছে রামনবমীতে হাওড়া, হুগলি ও উত্তর দিনাজপুরের গোলমালের মামলা। সেই নির্দেশের প্রেক্ষিতে শিবপুর, রিষড়া, শ্রীরামপুর ও ডালখোলায় অশান্তির ঘটনায় রাজ্য পুলিশের হাত থেকে তদন্তভার নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করছে এনআইএ। ওই চার জায়গার অশান্তির ঘটনায় ছ’টি এফআইআর বা এত্তেলা দায়ের করেছে তারা। বৃহস্পতিবার কলকাতায় এনআইএ আদালতে তাদের তদন্তকারীরা সেই সব এত্তেলার প্রতিলিপি জমা দেন। ওই সব মামলার সমস্ত নথি রাজ্য পুলিশ যাতে তাদের হাতে তুলে দেয়, সেই নির্দেশ চেয়ে আবেদন করেছে এনআইএ। ওই অশান্তিতে রাজ্য পুলিশের হাতে ধৃত অভিযুক্তদেরও নিজেদের হেফাজতে চেয়েছে তারা।
এ ছাড়া এনআইএ-র হাতে রয়েছে গত অক্টোবরে বন্দর এলাকার একবালপুরে গোলমালের ঘটনার তদন্তের দায়িত্ব। আদালতের নির্দেশেই ওই মামলার তদন্ত করছে এনআইএ। ওই ঘটনায় প্রথম চার্জশিট পেশ হলেও পাঁচ অভিযুক্ত পলাতক।
জানুয়ারিতে কলকাতা পুলিশের এসটিএফের হাতে আইএস জঙ্গির গ্রেফতারি সংক্রান্ত মামলার তদন্তভারও আছে এনআইএ-র হাতে। হাওড়া থেকে মহম্মদ সাদ্দাম ওরফে সাদ্দাম মল্লিক, সৈয়দ আহমেদ এবং মধ্যপ্রদেশ থেকে আব্দুল রাকিব কুরেশিকে গ্রেফতার করে এসটিএফ। গত বছর বীরভূমের মহম্মদবাজারে ডিটোনেটর ও জিলোটিনের মতো প্রচুর বিস্ফোরক উদ্ধার করেছিল রাজ্য পুলিশের এসটিএফ। সেই মামলাও এখন রয়েছে এনআইএ-র হাতে। বেলডাঙা থানার রামেশ্বরপুর গ্রামে বিস্ফোরণে ইয়াসউদ্দিন শেখ ওরফে ছাদি শেখ নামে এক ব্যক্তি মারা যান বলে অভিযোগ। একটি পাম্পঘরে বোমা বাঁধার সময় ওই বিস্ফোরণ ঘটে। তারও তদন্ত করছে এনআইএ।
এ ছাড়াও ওড়িশায় মাওবাদী হানায় তিন সিআরপি জওয়ানের মৃত্যুর ঘটনার তদন্ত করছে কলকাতা এনআইএ। তাদের হাতে আছে উত্তর ২৪ পরগনার নৈহাটি থানা এলাকার হালিশহরে গঙ্গার ঘাটে বিস্ফোরণ, জগদ্দলে বোমা উদ্ধারের মামলাও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy