Advertisement
০১ নভেম্বর ২০২৪
Water Reserve in Puri

পুরীর মিষ্টি জল রক্ষা করতে কড়া আদালত

পুরীর পুর কর্তৃপক্ষকে ২০২৫-এর ৩০ এপ্রিলের মধ্যে ‘সব কলে পানীয় জল’ (ড্রিঙ্ক ফ্রম ট্যাপ) প্রকল্প সম্পন্ন করতে হবে। এর পরে মাটির নীচের জল তোলা পুরীতে একেবারে বন্ধ করে ফেলতে হবে।

Puri Temple

পুরীর বাসিন্দারা ছাড়াও পর্যটকদের জন্য যথেচ্ছ জল তোলায় শ্রীক্ষেত্রের মাটির নীচে মিষ্টি জলের ভাঁড়ারে টান পড়তে শুরু করেছে। ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০২৩ ০৮:১৬
Share: Save:

তীর্থনগরী পুরী নিয়ে নানা সরকারি প্রকল্প জোর কদমে চললেও শহরের অন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহ্য এখন বিপন্ন। জাতীয় পরিবেশ আদালতে এক দশক ধরে শুনানি চললেও পুরীর দুর্লভ মিষ্টি জল ভান্ডারটি নানা গাফিলতিতে ঘোর সঙ্কটে। পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্তের মামলা এবং লাগাতার আবেদনের ভিত্তিতে সাম্প্রতিক একটি রায়ে জাতীয় পরিবেশ আদালত পুরীর পরিবেশরক্ষায় কয়েকটি নির্দেশ দিয়েছে। গত ১৭ এপ্রিলের রায়ে বলা হয়েছে, পুরীর পুর কর্তৃপক্ষকে ২০২৫-এর ৩০ এপ্রিলের মধ্যে ‘সব কলে পানীয় জল’ (ড্রিঙ্ক ফ্রম ট্যাপ) প্রকল্প সম্পন্ন করতে হবে। এর পরে মাটির নীচের জল তোলা পুরীতে একেবারে বন্ধ করে ফেলতে হবে। পুরীর বাসিন্দারা ছাড়াও পর্যটকদের জন্য যথেচ্ছ জল তোলায় শ্রীক্ষেত্রের মাটির নীচে মিষ্টি জলের ভাঁড়ারে টান পড়তে শুরু করেছে।

একই সঙ্গে পুরী শহরে বৃষ্টির জল সংরক্ষণ প্রকল্পটিও এ বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে পুরসভাকে শেষ করতে বলেছে পরিবেশ আদালত। পরিবেশবিদদের মতে, ঘরে ঘরে বৃষ্টির জল ধরলে তা মাটির নীচের মিষ্টি জলের সঙ্গে মিশিয়ে মিষ্টি জল ক্ষেত্রটিই আরও পুষ্ট করবে। বালিয়াপণ্ডার বর্জ্য আড়তের বর্জ্য থেকেও পুরীর মিষ্টি জল ভান্ডারের ক্ষতির আশঙ্কা করেছে আদালত। পুরী পুরসভার উদ্যোগে এই বর্জ্য আড়তের সংস্কার ব্যবস্থার ফিরিস্তি শুনে পরিবেশ আদালত বলেছে, ওড়িশার আবাসন এবং নগরোন্নয়ন দফতরের তরফে জৈব খনন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বালিয়াপণ্ডার জঞ্জাল আড়ত পুনরুদ্ধার করতে হবে। সময়সীমা ২০২৪এর ৩১ ডিসেম্বর।

পুরী পুরসভা, পুরী কোনার্ক ডেভলপমেন্ট অথরিটি, ওড়িশার জলসম্পদ বিভাগ, কেন্দ্রের ভূগর্ভস্থ জল রক্ষা কর্তৃপক্ষ, কেন্দ্র এবং ওড়িশার দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদকে দিয়ে এর আগে একটি কমিটি গড়ে দিয়েছিল পরিবেশ আদালত। পুরীর মিষ্টি জল ভান্ডার এবং পরিবেশরক্ষার বিষয়ে সেই কমিটির রিপোর্ট দেওয়ার কথা ছিল। এ যাত্রা সংশ্লিষ্ট সবার হলফনামা খতিয়ে দেখে আদালত। সুভাষ দত্তও গত জানুয়ারিতেই পুরী ঘুরে পরিস্থিতির হালহকিকত দেখে আদালতে নানা ছবি তুলে পাঠিয়েছিলেন। তাতে স্পষ্ট, বাঁকিমোহনে দূষিত জল শুদ্ধিকরণ প্রকল্পের জল সমুদ্রে ঢুকে দূষণ ঘটাচ্ছে। বালিয়াপণ্ডায় জঞ্জাল সংস্কারেও খামতি রয়েছে, স্বর্গদ্বার শ্মশান থেকে এখনও খোলা বাতাসে মড়া পোড়ার ধোঁয়া মিশছে। কলকাতার নিমতলা শ্মশানের ছবি দিয়ে তিনি বুঝিয়েছেন, ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণে কী করা উচিত। পরিবেশ আদালত এই সুপারিশগুলি মেনে চলতে বলেছেন।

পুরীর পুর কর্তৃপক্ষ আদালতে জানিয়েছেন, সমুদ্র সৈকত এবং জগন্নাথ মন্দির সংলগ্ন রথ চলার রাস্তা বড় দাণ্ডে পর্যটক ও ভক্তদের সাহায্যেই প্লাস্টিক শত্রুকেও নিকেশ করা চলছে। পরিবেশ আদালত, সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিজেদের হলফনামার আশ্বাসগুলি মানতে বলেছেন। পরিবেশ আদালতের নির্দেশে পরিবেশ ও বন দফতরের অতিরিক্ত মুখ্য সচিবের নেতৃত্বে পুরীর পরিবেশরক্ষা কমিটির সভা বসবে মে-র গোড়ায়। সুভাষ দত্তের কথায়, “উপকূলবর্তী চেন্নাই, মুম্বই পর্যন্ত শুদ্ধ জল পেতে হিমশিম খায়। সেখানে পুরীর মিষ্টি জল বিরল সম্পদ। সবার কলে শুদ্ধ জল এলে মিষ্টি জল ভাঁড়ারের লুট বন্ধ হবে।”

অন্য বিষয়গুলি:

puri temple
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE