‘অ্যাসেসমেন্ট ইয়ার’, ‘ফিনান্সিয়াল ইয়ার’-এর বিভ্রান্তি কাটিয়ে এ বার আয়কর জমার ক্ষেত্রে শুধু ‘ট্যাক্স ইয়ার’ মনে রাখলেই চলবে। নতুন আয়কর বিলের প্রস্তাব অনুযায়ী, এখন থেকে যে বছরের আয়ে কর জমা দিতে হবে, তাকে ‘ট্যাক্স ইয়ার’ বলা হবে। যাতে ‘অ্যাসেসমেন্ট ইয়ার’, ‘ফিনান্সিয়াল ইয়ার’, ‘প্রিভিয়াস ইয়ার’-এর মতো শব্দ নিয়ে বিভ্রান্তি কাটে।
আয়কর আইনকে আরও সরল, সহজবোধ্য করতে মোদী সরকার সংসদে নতুন আয়কর আইনের বিল পেশ করতে চলেছে। লোকসভায় আগামিকাল, বৃহস্পতিবার এই বিল পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। এই বিলের খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার জন্য তা অর্থ মন্ত্রক বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হবে। মোদী সরকারের পরিকল্পনা, ২০২৬-এর ১ এপ্রিল থেকে নতুন আয়কর আইন চালু করা।
বর্তমান আয়কর আইনে যে বছরে আয়কর জমা দিতে হয়, তাকে ‘অ্যাসেসমেন্ট ইয়ার’ বলা হয়। আর তার আগের বছর, অর্থাৎ যে বছরের আয়ের উপরে কর জমা দিতে হয়, তাকে ‘ফিনান্সিয়াল ইয়ার’ বলে। তাতে অনেকেই বিভ্রান্ত হন। কারণ এমনিতে যে কোনও অর্থ বছরকেই সরকারি খাতায়-কলমে ‘ফিনান্সিয়াল ইয়ার’ বলা হয়। নতুন আয়কর বিল
অনুযায়ী, যে অর্থ বছরের আয়ের উপরে কর জমা দিতে হবে, তাকে ‘ট্যাক্স ইয়ার’ বলা হয়। তা শুধু হবে ১ এপ্রিল থেকে। শেষ হবে পরের বছরের ৩১ মার্চ। কেউ যদি বছরের মাঝখানে নতুন ব্যবসা শুরু করেন, তা হলে তখন থেকেই তার ‘ট্যাক্স ইয়ার’ বা কর বছর শুরু হবে। সেই অর্থবর্ষের সঙ্গে কর বছর শেষ হয়ে যাবে। ট্যাক্স কানেক্ট অ্যাডভাইসরি সার্ভিসেস-এর কর বিশেষজ্ঞ বিবেক জালান বলেন, ‘‘অ্যাসেসমেন্ট ইয়ার-এর বদলে ট্যাক্স ইয়ার চালু হলে গত ষাট বছরের বিভ্রান্তিতে ইতি পড়বে। অর্থ বছরের মতোই ১ এপ্রিল থেকে শুরু ১২ মাসকে কর বছর ধরা হবে।’’
অর্থ মন্ত্রক সূত্রের দাবি, পুরনো আয়কর আইনের তুলনায় নতুন আয়কর বিলের ভাষা অনেক সহজ, অনেক সহজবোধ্য। তবে আইনের বহর যে কমানো গিয়েছে, তা নয়। বহু বার আয়কর আইনে সংশোধনের পরে বর্তমান আইনের বহর ৮২৩ পৃষ্ঠা। নতুন আয়কর আইনের বিলের বহর ৬২২ পৃষ্ঠার। বর্তমান আইনে ২৯৮টি ধারা রয়েছে। সহজ করে ভেঙে লিখতে গিয়ে আইনের ধারা বেড়ে ৫৩৬টি হয়েছে। যদিও ধারা, উপধারা মিলিয়ে বর্তমান আইনে ধারার সংখ্যা ৯৩১টি। পুরনো আইনের মতো নতুন বিলেও ২৩টি অধ্যায় রয়েছে।
আয়কর বিলে অবশ্য আয়কর, কর্পোরেট করের হার অপরিবর্তিত থাকছে। সম্প্রতি বাজেটে আয়করের হারে রদবদল করে, ১২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়ে কোনও কর দিতে না হওয়ার যে ব্যবস্থা চালু হয়েছে, তা-ই বজায় থাকছে। তবে এখন নেট দুনিয়ায়, ফেসবুক-ইউটিউবে ভিডিও বা পডকাস্ট থেকে অনেকেই আয় করছেন। সেই ‘ডিজিটাল কনটেন্ট ক্রিয়েটর’, সমাজমাধ্যমের ‘ইনফ্লুয়েন্সার’, ফ্রিল্যান্সারদের আয়ের উপরে কর বসানোর দিকে জোর দেওয়া হয়েছে। ভারতে কৃষকদের উপরে বা কৃষি থেকে আয়ের উপরে আয়কর দিতে হয় না। কেউ যাতে নিজের আয়কে কৃষি থেকে আয় হিসেবে দেখিয়ে কর ফাঁকি দিতে না পারেন, তাই আইনি ব্যবস্থা আরও শক্তপোক্ত করা হয়েছে। আয়কর দফতরের তল্লাশির সময় এখন ক্রিপ্টোকারেন্সি বা অনলাইনে কিনে রাখা সোনা বা অন্যান্য সম্পদেরও তল্লাশি হবে। এত দিন শুধু নগদ টাকা, গয়না, সোনাদানার তল্লাশি হত।
ডেলয়েট ইন্ডিয়া-র কর বিশেষজ্ঞ রোহিনটন সিধওয়া বলেন, ‘‘নতুন আয়কর বিলের সাফল্য নির্ভর করছে এর মসৃণ রূপায়ণ এবং করদাতারা কী ভাবে পরিবর্তনের সঙ্গে নিজেকে খাপ খাইয়ে নেবেন, তার উপরে।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)