লোকসভায় পাশ হল নয়া অভিবাসন বিল (অভিবাসন এবং বিদেশি নাগরিক বিল, ২০২৫)। নতুন এই বিল নিয়ে বৃহস্পতিবার লোকসভায় প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে আলোচনা হয়। আলোচনা পর্বের শেষে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জানান, ভারত কোনও ধর্মশালা নয়। জাতীয় নিরাপত্তাকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে, এমন কাউকে এই দেশে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না বলেও জানান তিনি। শাহের বক্তৃতায় উঠে আসে বাংলাদেশি এবং রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশের চেষ্টার কথাও। অনুপ্রবেশ প্রসঙ্গে মন্তব্যের সময়ে তুললেন অসম এবং পশ্চিমবঙ্গের প্রসঙ্গও।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই বিলটি পেশ করেন লোকসভায়। বিল নিয়ে আলোচনার সময়ে শাহ বলেন, “যদি কেউ এই দেশের উন্নয়নে অবদান রাখার জন্য এখানে আসতে চান, তাঁদের সব সময় স্বাগত জানানো হবে। কিন্তু জাতীয় নিরাপত্তার জন্য যাঁরা ঝুঁকিপূর্ণ, তাঁদের এই দেশে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। এই দেশ কোনও ধর্মশালা নয়।” কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য, পর্যটক হিসাবে, ব্যবসার জন্য, শিক্ষা বা চিকিৎসার জন্য কেউ আসতে চাইলে তাঁদের সব সময় এ দেশে স্বাগত জানানো হবে। নয়া অভিবাসন বিলের মাধ্যমে দেশের নিরাপত্তা আরও মজুবত হবে বলে জানান তিনি। একই সঙ্গে দেশের অর্থনীতি এবং ব্যবসাতেও গতি আসবে বলে মনে করছেন তিনি।
দেশে অনুপ্রবেশ রুখতেও কড়া পদক্ষেপের বার্তা দিয়েছেন শাহ। অনুপ্রবেশ নিয়ে মন্তব্যের সময়েই শাহের বক্তৃতায় উঠে আসে বাংলাদেশি এবং রোহিঙ্গাদের প্রসঙ্গ। তাঁর দাবি, অসমে কংগ্রেস ক্ষমতায় থাকাকালীন সেই রাজ্য দিয়ে অবৈধ অনুপ্রবেশ হয়েছে। এখন তৃণমূল জমানায় পশ্চিমবঙ্গ দিয়ে অনুপ্রবেশকারীরা এ দেশে প্রবেশ করছেন বলে অভিযোগ তাঁর। যদিও বিজেপি-শাসিত অসম এবং ত্রিপুরা দিয়েও মাঝেমধ্যেই অনুপ্রবেশের চেষ্টার তথ্য প্রকাশ্যে আসে। কখনও স্থানীয় পুলিশ, আবার কখনও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর হাতে তাঁরা ধরা পড়েন। যদিও সে প্রসঙ্গে মন্তব্য করেননি শাহ।
আরও পড়ুন:
বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের কাছে ভুয়ো নথিও পৌঁছে যাচ্ছে বলে অভিযোগ শাহের। তাঁর প্রশ্ন, কোথা থেকে এই আধার কার্ডগুলি দেওয়া হচ্ছে? এর পরে নিজেই জানান, যে বাংলাদেশিরা ধরা পড়েছেন, তাঁদের সকলের কাছে পশ্চিমবঙ্গের ঠিকানার আধার কার্ড পাওয়া গিয়েছে। শাহের দাবি, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের থেকে জমি না-পাওয়ার কারণে সীমান্তে ৪৫০ কিলোমিটার কাঁটাতার দেওয়ার কাজ আটকে রয়েছে।
যদিও শাহের এই মন্তব্যে আপত্তি জানিয়েছে তৃণমূল। রাজ্যের শাসকদল সমাজমাধ্যমে জানিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গে বিএসএফের কাজের এলাকা ১৫ কিলোমিটার থেকে বৃদ্ধি করে ৫০ কিলোমিটার করে দেওয়া হয়েছে। অথচ গুজরাতে তা ৮০ কিলোমিটার থেকে ৫০ কিলোমিটারে কমিয়ে আনা হয়েছে। তৃণমূলের বক্তব্য, বিএসএফ সীমান্তে নিজের কাজ করতে ব্যর্থ হচ্ছে, তাই শাহ বাংলার উপর দায় চাপাচ্ছেন।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রেক্ষিতে মুর্শিদাবাদের তৃণমূল সাংসদ আবু তাহের খানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “অমিত শাহ আজ লোকসভায় যে কথা বলেছেন, তাতে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসাবে তাঁর ব্যর্থতাই প্রকাশ পেয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “তাই এই ব্যর্থতা নিয়ে তাঁর অবিলম্বে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করা উচিত। কারণ, তাঁর অধীনস্থ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক বিএসএফ পরিচালনা করে। সেই বিএসএফ যদি সীমান্তরক্ষার বদলে মানব পাচারকারী, নেশাদ্রব্য পাচারকারীর সঙ্গে যোগসাজশ করে অনৈতিক কাজকর্ম করে, তার দায় কি রাজ্য সরকারের? না কি অমিত শাহের নিজের? জমি না-দেওয়ার যে অভিযোগ তিনি করছেন, সেটিও রাজনৈতিক গিমিক ছাড়া আর কিছু নয়। আজ সংসদে অমিত শাহের মন্তব্যের আমরা তীব্র নিন্দা করছি।”