গবেষকদের দাবি, পশ্চিমী দেশগুলির তুলনায় এশীয় অঞ্চলে ডি৬১৪জি নামে করোনার একটি প্রজাতি তেমন দ্রুত গতিতে ছড়াতে পারেনি। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
এশীয়দের তুলনায় ইউরোপ-আমেরিকার বাসিন্দাদের দেহে একটি প্রোটিনের ঘাটতি বেশি হওয়ার জন্যই ওই দেশগুলিতে করোনার সংক্রমণ দ্রুত ছড়াচ্ছে। উল্টো দিকে, এশিয়াবাসীর দেহে ওই প্রোটিনের ঘাটতি কম হওয়ায় সে অঞ্চলে করোনার গতিরোধ হচ্ছে। সম্প্রতি একটি সমীক্ষায় এমনটাই দাবি করলেন কল্যাণীর গবেষকরা।
গবেষকদের মতে, ‘নিউট্রোফিল ইলাসটেস’ নামে একটি প্রোটিনই ইউরোপীয় বা আমেরিকায় করোনার এক প্রজাতির বাড়বাড়ন্তের জন্য দায়ী। তাঁদের দাবি, এশীয়দের থেকে ইউরোপীয় বা আমেরিকানদের মধ্যে এটির ঘাটতি বেশি হওয়ায় তা প্রত্যক্ষ ভাবে ওই অঞ্চলে করোনার সংক্রমণের গতিতে মদত দিচ্ছে।
কল্যাণীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োমেডিক্যাল জেনোমিকস (এনআইবিএমজি)-এর ওই সমীক্ষকদের নেতৃত্বে ছিলেন নিধান বিশ্বাস এবং পার্থ মজুমদার। ‘ইনফেকশন, জেনেটিক্স অ্যান্ড ইভোলিউশন’ নামে একটি আন্তর্জাতিক জার্নাল গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে। গবেষকদের পর্যবেক্ষণ, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে করোনার গতি সমান না হওয়ার পিছনে সামাজিক বা শারীরিক কারণের বদলে জৈবিক কারণ রয়েছে। গবেষকদের দাবি, পশ্চিমী দেশগুলির তুলনায় এশীয় অঞ্চলে ডি৬১৪জি নামে করোনার একটি প্রজাতি তেমন দ্রুত গতিতে ছড়াতে পারেনি। কেন এমনটা হয়েছে, তা বিশদে জানিয়েছেন তাঁরা। গবেষকেরা জানিয়েছেন, মানবদেহে নিউট্রোফিল ইলাসটেস নামে একটি প্রোটিনই করোনার একটি প্রজাতি (ডি৬১৪জি)-র সংক্রমণ দ্রুত গতিতে ছড়াতে সহায়ক হয়। কী ভাবে এমনটা হয়? গবেষকদের মতে, মানবদেহে নিউট্রোফিল ইলাসটেস-এর উৎপাদন কম হতে থাকলে আলফা-১ অ্যান্টিট্রাইপসিন (এএটি) নামে অন্য একটি প্রোটিন উৎপন্ন হয়। এএটি-র ঘাটতি হলেই মানবকোষে নিউট্রোফিল ইলাসটেস নামে প্রোটিনটির মাত্রা বেড়ে যায়। যা করোনাকে দেহে প্রবেশে সাহায্য করে। সেই সঙ্গে এই ভাইরাসের প্রজাতি (ডি৬১৪জি)-কে বহুগুণে বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে।
গবেষকেরা জানিয়েছেন যে সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, এশিয়ায় ৫০ শতাংশ ফ্রিকোয়েন্সিতে পৌঁছতে ডি৬১৪জি-র সময় লাগে সাড়ে ৫ মাস। অন্য দিকে, ইউরোপে ২.১৫ মাসেই সেই লক্ষ্যে পৌঁছে যায় ওই প্রজাতি। উত্তর আমেরিকার ক্ষেত্রে সেই সময়টাই হল ২.৮৩ মাস। তাঁদের সমীক্ষা অনুযায়ী, মালয়েশিয়ায় প্রতি ১ হাজার ব্যক্তির মধ্যে ৮ জনের এএটি প্রোটিনের ঘাটতি দেখা যায়। দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রতি হাজারে ৫.৪ জনের মধ্যে তা লক্ষ করা গিয়েছে। সিঙ্গাপুরে এই সংখ্যাই হল ২.৫। কিন্তু, স্পেনের মতো ইউরোপীয় দেশে প্রতি হাজারে ৬৭.৩ জনের মধ্যে এএটি প্রোটিনের ঘাটতি দেখা গিয়েছে। ব্রিটেনে হাজার প্রতি ৩৪.৬ জনের মধ্যে এই ঘাটতি রয়েছে। ফ্রান্স এবং আমেরিকায় তা হল যথাক্রমে ৫১.৯ ও ২৯ জন।
একটি সর্বভারতীয় ইংরেজি দৈনিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এনআইবিএমজি-এর গবেষক পার্থ মজুমদার বলেন, ‘‘কেন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে করোনার গতি অসমান, তা নিয়ে অনেকেই জল্পনা করছেন। অনেকের মতে, এশীয় অঞ্চলের দেশগুলিতে তাপমাত্রা বেশি থাকায়, তা করোনার সংক্রমণের গতিকে রোধ করেছে। তবে আমরা মনে করি যে এর পিছনে পরিবেশগত, সামাজিক বা শারীরিক কারণ নেই। বরং জৈবিক কারণই দায়ী।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy