গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
এক দশক পরে বিধানসভা ভোট হল জম্মু ও কাশ্মীরে। আর তাতে ক্ষমতা ফের চলে এল আবদুল্লা পরিবারের হাতে। ৯০ আসনের বিধানসভা প্রাক্তন দুই মুখ্যমন্ত্রী ফারুক আবদুল্লা এবং তাঁর পুত্র ওমরের দল ন্যাশনাল কনফারেন্স (এনসি) জিতেছে ৪২টিতে। সহযোগী কংগ্রেস ছয় এবং সিপিএম একটিতে। অন্য দিকে, বিজেপি ২৯, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতির পিপল্স ডেমোক্রেটিক পার্টি (পিডিপি) তিনটি আসনে জিতেছে। প্রাক্তন বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা সাজ্জাদ লোনের পিপল্স কনফারেন্স এবং আম আদমি পার্টি (আপ) একটি করে আসনে জয়ী হয়েছে। নির্দল প্রার্থীরা সাতটিতে।
কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল জম্মু ও কাশ্মীরে ৯০ আসনে সরাসরি ভোট হয়েছে। কিন্তু ২০১৯-এর জম্মু-কাশ্মীর পুনর্গঠন আইন এবং ওই আইনের ২০২৩ সালের সংশোধনী অনুযায়ী কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এবং জম্মু-কাশ্মীরের উপরাজ্যপাল একযোগে পাঁচ জন অনির্বাচিত বিধায়ককে বেছে নিতে পারবেন। তার মধ্যে কাশ্মীরি পণ্ডিত এবং পাক-অধিকৃত কাশ্মীর থেকে আসা উদ্বাস্তুদের প্রতিনিধি থাকবেন। এমন পরিস্থিতিতে ৯৫ আসনের জন্য সংখ্যাগরিষ্ঠতার জাদুসংখ্যা ৪৮। ফলে বিধানসভা ত্রিশঙ্কু হলে উপরাজ্যপাল মনোজ সিংহ বিজেপিকে ক্ষমতা পাইয়ে দিতে তৎপর হতে পারেন বলে অভিযোগ উঠেছিল বিরোধীদের তরফে। কিন্তু আপের এক জয়ীকে ধরলে ‘ইন্ডিয়া’র বিধায়ক সংখ্যা দাঁড়াচ্ছে ৫০-এ। এই পরিস্থিতিতে এনসির তরফে মঙ্গলবার বিকেলে ঘোষণা করা হয়েছে, ওমর পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন।
মোট ৯০টি আসনের মধ্যে ২৪টিতে ভোট হয়েছিল প্রথম দফায়, গত ১৮ সেপ্টেম্বর। ২৫ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় দফায় ভোট হয়েছিল ২৬টিতে। ১ অক্টোবর বাকি ৪০টিতে। ভোটের ফল বলছে ২০১৪ সালের তুলনায় আসন বেড়েছে বিজেপির। কিন্তু হিন্দুপ্রধান জম্মুতে ভাল ফল হলেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের আবেদন সাড়া ফেলতে পারেনি মুসলিম প্রধান কাশ্মীর উপত্যকায়। এমনকি, ‘বিজেপির ঘনিষ্ঠ’ হিসাবে পরিচিত ‘আওয়ামি ইত্তেহাদ পার্টি’, ‘জম্মু-কাশ্মীর আপনি পার্টি’, পিপল্স কনফারেন্সের ফলও খারাপ হয়েছে উপত্যকায়।
ভোটের পাটিগণিতে পয়লা বিজেপি
শতাংশের হিসাবে বিজেপির সাড়ে ২৫, এনসির সাড়ে ২৩, কংগ্রেসের প্রায় ১২ এবং পিডিপির ঝুলিতে প্রায় ৯ শতাংশ ভোট। অর্থাৎ, সামগ্রিক ভাবে ভোটপ্রাপ্তির হিসাবে এক নম্বরে রয়েছে বিজেপি। ২০১৪ সালের বিধানসভা ভোটেও ভোটপ্রাপ্তির হিসাবে প্রথম ছিল বিজেপি। এ বারের মতোই আসন প্রাপ্তিতে দ্বিতীয়।
২০১৪ সালে ২৩ শতাংশ ভোট পেয়ে ২৫টি আসনে জয়ী হয়েছিল তারা। সাড়ে ২২ শতাংশের সামান্য বেশি ভোট পেয়ে পিডিপি ২৮টিতে। আলাদা ভাবে লড়ে এনসি প্রায় ২১ শতাংশ ভোট পেয়ে ১৫টি এবং কংগ্রেস ১৮ শতাংশ ভোট পেয়ে কংগ্রেস ১২টিতে জিতেছিল। পিপল্স কনফারেন্স দুই, সিপিএম এক, নির্দল ও অন্যেরা চারটিতে। এ বার এনসির আসন দ্বিগুণের বেশই বাড়লেও কংগ্রেস অর্ধেক হয়ে গিয়েছে। জম্মুতে একদা প্রভাবশালী ডোগরা সংগঠন প্যান্থারস পার্টির সঙ্গে জোট করে বিপর্যয় এড়াত পারেননি রাহুল গান্ধী, মল্লিকার্জুন খড়্গেরা।
আঞ্চলিক সমীকরণ এবং ভোটের মেরুকরণ
২০১৪-য় অবিভক্ত জম্মু ও কাশ্মীরে ৮৭টি আসন ছিল। ৩৭০ বাতিল এবং রাজ্য ভাগের পরে লাদাখের ৪টি আসন বাদ পড়ে। এর পর জম্মু ও কাশ্মীরের আসন পুনর্বিন্যাসের দায়িত্বে থাকা ‘ডিলিমিটেশন কমিশন’-এর রিপোর্টের ভিত্তিতে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের বিধানসভা আসনসংখ্যা ৮৩ থেকে বাড়িয়ে ৯০ করা হয়েছিল গত বছর। সাতটি আসনের মধ্যে ছ’টি বেড়েছে জম্মুতে (৩৭ থেকে ৪৩) এবং একটি কাশ্মীরে (৪৬ থেকে ৪৭)। কমিশন জানিয়েছে, ২০১১ সালের জনসংখ্যার ভিত্তিতেই আসন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যদিও অভিযোগ ওঠে, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে হিন্দুপ্রধান জম্মুতে মুসলিম প্রধান কাশ্মীর উপত্যকার তুলনায় বেশি আসন বাড়ানো হয়েছে। নতুন ব্যবস্থায় কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের প্রতিটি লোকসভায় ১৮টি করে বিধানসভা রয়েছে।
লোকসভা নির্বাচনেও জম্মু এলাকার দু’টি লোকসভা আসন উধমপুর এবং জম্মুতে জয় পেয়েছিল বিজেপি। কাশ্মীর উপত্যকার ফলে অবশ্য চমক ছিল। ফারুক আবদুল্লার দল মধ্য কাশ্মীরের শ্রীনগরে জয় পেলেও উত্তর কাশ্মীরের বারামুলা কেন্দ্রে নির্দল প্রার্থী শেখ এর রশিদের কাছে ২ লক্ষেরও বেশি ভোটে পরাজিত হয়েছিলেন ফারুক-পুত্র জম্মু ও কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এনসি নেতা ওমর আবদুল্লা। দক্ষিণ কাশ্মীর এবং জম্মুর একাংশ নিয়ে গঠিত অনন্তনাগ-রাজৌরি আসনে এনসি প্রার্থীর কাছে পরাজিত হয়েছিলেন আর এক প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা পিডিপির সভানেত্রী মেহবুবা মুফতি।
উল্লেখযোগ্য জয় এবং পরাজয়
এনসির ওমর আবদুল্লা শ্রীনগরের দু’টি আসন গান্ডেরওয়াল এবং বদগামে দাঁড়িয়ে দু’টিতেই জিতেছেন। পাম্পোরে জিতেছেন দলের অন্যতম নেতা, প্রাক্তন বিচারপতি হাসান মাসুদি। অন্য দিকে, দক্ষিণ কাশ্মীরের অনন্তনাগের শ্রীগুফওয়ারা-বিজবহেরায় হেরে গিয়েছেন মেহবুবার কন্যা ইলতিজ়া। জম্মু ও কাশ্মীর প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি সেন্ট্রাল সালতেঙ্গ আসনে এবং পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত এআইসিসি সাধারণ সম্পাদক গুলাম আহমেদ মির অনন্তনাগ জেলার ডোরু কেন্দ্রে জয়ী হয়েছেন। অনন্তনাগে জিতেছেন প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি পীরজাদা মহম্মদ সঈদ। প্রভাবশালী বিজেপি নেতা দেবেন্দ্র সিংহ রানা নাগরোতায় জিতলেও নওশেরায় হেরে গিয়েছেন দলের রাজ্য সভাপতি তথা ‘মুখ্যমন্ত্রিত্বের দাবিদার’ রবীন্দ্র রায়না। বারামুলার সাংসদ ইঞ্জিনিয়ার রশিদ তাঁর পুরনো কেন্দ্র লাঙ্গোটেতে নিজের ভাই খুরশিদকে দাঁড় করিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি হেরেছেন। শ্রীনগরের চান্নাপোরায় হেরেছেন আপনি পার্টির প্রধান আলতাফ বুখারি। পিপল্স কনফারেন্স প্রধান সাজ্জাদ হান্দওয়ারায় জিতলেও হেরে গিয়েছেন কুপওয়ারায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy