Advertisement
২৯ নভেম্বর ২০২৪
Narendra Modi

Narendra Modi: ভোট-বিমানে মোদী, হেঁটে এলেন দর্শকেরা

দুপুর একটা। দু’পাশের আখক্ষেতে ভেঙে পড়ছে মানুষ। কেউ বিমানের ল্যাজা দেখছেন, কেউ বা শূন্যে পাক দেওয়া চাকার ঘূর্ণি।

এই প্রথম কোনও রাজ্যের মহাসড়কে নামল কোনও সামরিক পরিবহণ বিমান। আর বায়ুসেনার সেই উড়োজাহাজ থেকে নিজস্ব দর্পে নামলেন নরেন্দ্র মোদী।

এই প্রথম কোনও রাজ্যের মহাসড়কে নামল কোনও সামরিক পরিবহণ বিমান। আর বায়ুসেনার সেই উড়োজাহাজ থেকে নিজস্ব দর্পে নামলেন নরেন্দ্র মোদী।

অগ্নি রায়
লখনউ শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০২১ ০৬:৪৪
Share: Save:

দুপুর একটা। দু’পাশের আখক্ষেতে ভেঙে পড়ছে মানুষ। কেউ বিমানের ল্যাজা দেখছেন, কেউ বা শূন্যে পাক দেওয়া চাকার ঘূর্ণি। সবাই যৎপরোনাস্তি ঊর্ধ্ববাহু, মোবাইলে ভিডিয়ো তোলার চেষ্টায়। মনে হল না, বিষয়টির মধ্যে এসপি-বিজেপি-বিএসপি আছে। দিল্লির ‘পত্রকার’ এসেছে শুনে গায়ে লেগে থাকা সুলতানপুরের আখচাষি নির্মল মাথুর বলছেন, “সবাই তো জাহাজ দেখতে এসেছে। এখানে এই প্রথম তো!”

এই প্রথম কোনও রাজ্যের মহাসড়কে নামল কোনও সামরিক পরিবহণ বিমান। আর বায়ুসেনার সেই উড়োজাহাজ থেকে নিজস্ব দর্পে নামলেন নরেন্দ্র মোদী। সামরিক পরিবহণ বিমানের উত্তাপ তাঁর বহুবিজ্ঞাপিত ছাপান্ন ইঞ্চিতে নিয়েই যেন। সমবেত কানফাটানো হর্ষে মঞ্চে উঠে বললেন, “হনুমান যে ভূখন্ডে কালনেমিকে মেরেছিলেন, তাকে আমি প্রণাম জানাই। ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহে এই অঞ্চলের মানুষ ব্রিটিশের সঙ্গে লড়েছিলেন। এই অঞ্চলের সুঘ্রাণ স্বাধীনতা সংগ্রামের। আজ এই ভূখণ্ড পূর্বাঞ্চল এক্সপ্রেসওয়ে উপহার পেল।”

এ ভাবেই উত্তরপ্রদেশে আজ শুরু হয়ে গেল নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদীর ভোটযুদ্ধ। সেই সঙ্গে ২০২৪-এর লোকসভা ভোটের কথা মাথায় রেখে, নাম না করে কংগ্রেসের উদ্দেশেও তোপ দাগলেন তিনি। দাবি করলেন, যোগী আদিত্যনাথের সরকার কোনও ‘ভেদাভেদে’ বিশ্বাসী নয়। মোদীর কথায়, ‘পরিবারতন্ত্র’ দেশের এবং উত্তরপ্রদেশের বিকাশ ও উন্নয়নের প্রতিবন্ধক হয়ে থেকেছে দীর্ঘদিন।

মঞ্চে বসা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে ‘ওজস্বী, তেজস্বী, কর্মযোগী’ বলে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য, কেন্দ্র এবং রাজ্যের ‘ডাবল এঞ্জিন’ থাকার ফলে রাজ্যের মানুষ ২০১৭ সাল থেকে দ্বিগুণ লাভ পাচ্ছেন। অখিলেশ সিংহ যাদবের সরকারকে ব্যঙ্গ করে এবং মেরুকরণের ইঙ্গিত দিয়ে তাঁর মন্তব্য, “আমি যখন প্রধানমন্ত্রী হই, তখন উত্তরপ্রদেশে যে সরকার ছিল তারা আমার সঙ্গে সহযোগিতা করেনি। তাদের ভোটব্যাঙ্ক হারানোর ভয় ছিল। আমি উত্তরপ্রদেশে এলে রাজ্য সরকারের প্রতিনিধি বিমানবন্দরে দেখা করে কোথায় যে হারিয়ে যেতেন! আসলে ওঁরা লজ্জা পেতেন! কাজের হিসাব তো দিতে পারতেন না।”

আজ সকাল থেকেই সুলতানপুর এবং দূরের গ্রাম, শহর থেকে হাজার হাজার মানুষ এক্সপ্রেসমুখী হয়েছেন পায়ে হেঁটে, বাসে, ট্রাকে। গোটা বিষয়টিকে ব্যঙ্গ করছেন উত্তরপ্রদেশের দায়িত্বপ্রাপ্ত কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়ঙ্কা বঢরা। তাঁর টুইট, ‘‘লকডাউন চলাকালীন, যখন লক্ষাধিক শ্রমিক দিল্লি থেকে পায়ে হেঁটে উত্তরপ্রদেশে নিজেদের গ্রামে ফিরছিলেন, তখন বিজেপি সরকার শ্রমিকদের বাস দেয়নি। কিন্তু, প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর জনসভায় ভিড় তৈরি করতে সরকার জনগণের কষ্টার্জিত কোটি কোটি টাকা খরচ করছে। ‘জুমলা কি দোকান, থালা থালা’ বিজেপির রাজনীতি বুঝতে পেরেছে শিশুরাও। তাই কোটি টাকা বিনিয়োগ করে মুখ বাঁচানোর চেষ্টা চলছে।’’

মোদীর আক্রমণের জবাব দিয়েছেন এসপি নেতা অখিলেশ সিংহ যাদবও। তাঁর টুইট, “লখনউ থেকে রিবন আনা হয়েছে আর নয়াদিল্লি থেকে কাঁচি! এসপি-র কাজের কৃতিত্ব ছিনিয়ে নিতে টানাহেঁচড়া চলছে। আশা করি, আজও উত্তরপ্রদেশের মানুষ যখন একা বসে ভাবেন, তাঁদের মনে প়ড়ে সমাজবাদী পূর্বাঞ্চল হাইওয়ের কথা।” মোদীর হিন্দুত্ব-রাজনীতিকে ব্যঙ্গ করে অখিলেশ বলেন, “একটি মাত্র সম্প্রদায়ের প্রতি দায়বদ্ধ শাসকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে এসপি বহুবর্ণ ফুলের তোড়া জনতাকে উপহার দেবে।”
প্রসঙ্গত, অখিলেশের সময়ে আগরা থেকে লখনউ এক্সপ্রেসওয়ে তৈরি হয়।

জাতীয়তাবাদের সঙ্গে উত্তরপ্রদেশকেও আজ সংযুক্ত করতে চেয়েছেন মোদী। তাঁর কথায়, “দেশের সমৃদ্ধি যতটা জরুরি, ততটাই গুরুত্বপূর্ণ দেশের সুরক্ষা।” তাঁর বক্তৃতার পর এক্সপ্রেসওয়েতে একের পর এক যুদ্ধবিমানের মহড়ার প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, “একটু পরেই দেখব, আপৎকালীন পরিস্থিতিতে কী ভাবে এই এক্সপ্রেসওয়ে বায়ুসেনার বড় শক্তি হয়ে ওঠে। সমস্ত যুদ্ধবিমান যখন গর্জন করবে, যাঁরা দশকের পর দশক দেশের প্রতিরক্ষা পরিকাঠামো নির্মাণকে কোনও গুরুত্বই দেননি, তাঁদের কানেও তা পৌঁছবে।” এসপি-র দিকে একের পর এক প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে মোদী বলেছেন, “কে ভুলতে পারবেন, উত্তরপ্রদেশে বিদ্যুৎ সঙ্কটের কথা? কে ভুলতে পারবেন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির হাল? শুধু রাহাজানি হত। যারা রাহাজানি করত, এখন তারা সব জেলে।”

কংগ্রেস এবং এসপি-কে একই বন্ধনীতে এনে মোদী আজ বলেন, “দিল্লি এবং লখনউ, দু’জায়গাতেই পরিবারতন্ত্রের রমরমা। দীর্ঘ পরিবারতন্ত্রের এই জুটি উত্তরপ্রদেশের মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে বরবাদ করেছে।” পূর্বাঞ্চল এক্সপ্রেসওয়েকে ‘বিকাশ’, ‘প্রগতি’, ‘মজবুত অর্থনীতি’র এক্সপ্রেসওয়ে হিসাবে তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য, “তিন বছর আগে ফাঁকা জমিতে যখন আমি এর শিলান্যাস করি, ভাবিনি আজ এখানে আমি নিজে বিমান থেকে নামব।”

অন্য বিষয়গুলি:

Narendra Modi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy