কী দেখে ভোট দেবেন? রামমন্দির নির্মাণ না ৩৭০ রদ? কোভিড মোকাবিলা না তিন তালাক? কর্মসংস্থান, মূল্যবৃদ্ধি না কি রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি, দুর্নীতি?

জানতে চাইছেন নরেন্দ্র মোদী নিজেই। তাঁর মোবাইল অ্যাপে প্রধানমন্ত্রী ‘শেয়ার ইয়োর ওপিনিয়ন’ নামে আজ থেকে অনলাইন সমীক্ষা শুরু করেছেন। উত্তরপ্রদেশ, পঞ্জাব-সহ পাঁচ রাজ্যে আগামী বছরের গোড়ায় নির্বাচন। তার আগে প্রধানমন্ত্রী যে ভোটারদের মন বুঝে নিতে চাইছেন, তা স্পষ্ট। কিন্তু অনলাইন সমীক্ষায় প্রশ্নের তালিকা দেখে রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, উত্তরপ্রদেশের ভোটে এ বার মোদী-হাওয়ায় কাজ হবে কি না, তা নিয়ে মোদীই সংশয়ে। কারণ, প্রধানমন্ত্রী সমীক্ষায় জানতে চেয়েছেন, ভোটারদের কাছে কোনটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ? দেশে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্ব? না কি রাজ্য বা স্থানীয় স্তরের বিষয়? কোভিড মোকাবিলা ও টিকাকরণ নিয়ে মানুষ কতটা সন্তুষ্ট, তা-ও জানতে চাইছেন মোদী।

২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনে মোদীর জয়ের পিছনে উত্তরপ্রদেশে অধিকাংশ আসনে বিজেপির জয় অন্যতম কারণ ছিল। দেশে মোদী-ঝড়কে কাজে লাগিয়ে বিজেপি ২০১৭-র বিধানসভা ভোটে উত্তরপ্রদেশ দখল করে। ২০২৪-এর লোকসভা ভোটের আগে বিজেপি যে কোনও মূল্যে উত্তরপ্রদেশের ক্ষমতা দখলে রাখতে চাইবে। বিরোধীরা বলছেন, লোকসভা ভোটে মোদী-ম্যাজিক কাজ করলেও, পশ্চিমবঙ্গ-সহ একাধিক বিধানসভা ভোটে রাজ্যের বিষয়ই বড় হয়ে উঠেছে। মোদীও যে তা নিয়ে চিন্তিত, তা সমীক্ষা থেকেই স্পষ্ট। তিনি এখন নিজেই জানতে চান, তাঁর নেতৃত্ব না রাজ্যের বিষয়, কোনটি বড় প্রশ্ন? ‘ডাবল ইঞ্জিন’-এর সাফল্য দাবি করে আসা এখন জানতে চাইছেন, কেন্দ্র ও রাজ্যে এক সরকার থাকলে উন্নয়নে লাভ হচ্ছে কি না। উত্তরপ্রদেশের ভোটে বিজেপি রামমন্দির নির্মাণ ঘিরে আবেগকে কাজে লাগাতে চাইলেও, যোগী আদিত্যনাথের রাজত্বে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি, কোভিড মোকাবিলায় ব্যর্থতা বিজেপির চিন্তার কারণ। মোদী জানতে চেয়েছেন, রাজ্য কাজের ভিত্তিতে কত নম্বর পাবে!

পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা ভোটের পর থেকেই বিরোধী জোট নিয়ে আলাপ-আলোচনা শুরু হয়েছে। সংসদের বাদল অধিবেশনেও বিরোধীরা মোটের উপর এককাট্টা। উত্তরপ্রদেশে বিরোধী শিবিরে অবশ্য এখনও জোটের লক্ষণ নেই। কিন্তু মোদী তাঁর অ্যাপে জানতে চেয়েছেন—‘আপনার বিধানসভা কেন্দ্রে কি বিরোধী জোটের কোনও প্রভাব পড়বে?’

প্রায় এক কোটি মানুষ মোদীর অ্যাপ ব্যবহার করেন। পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা ভোটের আগে কিন্তু মোদীর অ্যাপে এমন সমীক্ষা হয়নি। শেষ বার হয়েছিল ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের আগে এবং নোট বাতিলের পরে। মোদীর এই অনলাইন সমীক্ষার ফল উত্তরপ্রদেশ-সহ পাঁচ রাজ্যের ভোটে প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে, মনে করছেন বিজেপি নেতারা। কারণ, মোদী রাজ্যের সবথেকে জনপ্রিয় তিন নেতার নাম জানতে চেয়েছেন। বিধায়কদের কাজ, ফের তাঁদের ভোট দেবেন কি না, তা-ও জানতে চেয়েছেন। বিজেপি নেতারা তাই মনে করছেন, প্রধানমন্ত্রী মুখ্যমন্ত্রী-মুখ বাছাই, টিকিট বিলির প্রাথমিক কাজও সেরে ফেলছেন।