Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Narendra Modi

টিকা নিয়ে কি কোনও আশা দেখাবেন মোদী? নজরে লালকেল্লা

লালকেল্লায় এ বারের ‘অন্য রকম’ ১৫ অগস্টের আগের রাতে এ নিয়ে নানা জল্পনা দেশ জুড়ে।

নরেন্দ্র মোদী।ফাইল চিত্র।

নরেন্দ্র মোদী।ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০২০ ০৪:৪০
Share: Save:

কোভিড অতিমারির মধ্যেই আজ স্বাধীনতা দিবস। লালকেল্লায় পতাকা উত্তোলনের পরে দেশবাসীর উদ্দেশে বক্তৃতা দেবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। করোনা-মুক্তির পথে, বিশেষত টিকা নিয়ে কি কোনও আশা দেখাবেন তিনি? চলতি বছরের শেষেই কি টিকা পাবে ভারতবাসী? লালকেল্লায় এ বারের ‘অন্য রকম’ ১৫ অগস্টের আগের রাতে এ নিয়ে নানা জল্পনা দেশ জুড়ে। এমনিতেই হোঁচট খেতে থাকা ভারতের অর্থনীতি আরও ধাক্কা খেয়েছে করোনায়। তাই অতিমারির পাশাপাশি অর্থনীতির সঙ্কটমুক্তির নতুন কোনও পথ প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেন কি না, কৌতূহল রয়েছে তা নিয়েও।

বিজেপি শিবির বলছে, এমন কৌতূহল অস্বাভাবিক কিছু নয়। কারণ, অতীতে এই তারিখে লালকেল্লা থেকে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা করার নজির মোদীই তৈরি করেছেন। করোনার চিকিৎসা নিয়ে প্রত্যাশার পারদ আরও চড়িয়ে দিয়েছে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর)। ভারত বায়োটেকের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ১৫ অগস্টের মধ্যে টিকা বাজারে ছাড়ার উচ্চাকাঙ্ক্ষী পরিকল্পনা নিয়েছিল তারা। যদিও পরে সেই লক্ষ্য থেকে আইসিএমআর পিছিয়ে আসে।

এ দিকে, দেশে সংক্রমণ বাড়ছে তীব্র গতিতে। আগামিকালের মধ্যে ভারতে করোনা-আক্রান্তের সংখ্যা ২৫ লক্ষ পেরিয়ে যাবে। ফলে সব মিলিয়ে চাপ বাড়ছে সরকারের উপরে। যদিও সেই পরিসংখ্যানের ভিত্তিতেই সরকারের দাবি, দেশে সংক্রমণের হার আগের চেয়ে নিম্নমুখী। কমেছে মৃত্যুহার, যা বর্তমানে দুই শতাংশের নীচে নেমে এসেছে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন আজও দাবি করেছেন যে, ভারতে কোভিড রোগীদের সুস্থতার হার বিশ্বে সব চেয়ে বেশি এবং মৃত্যুহার সব চেয়ে কম। বিশেষজ্ঞদের মতে, আগামিকাল নিজের বক্তৃতায় সরকারের ‘সাফল্য’ হিসেবে মোদী এই বিষয়গুলি তুলে ধরতে চাইবেন। পরীক্ষা বাড়ানোর উপরেও ফের জোর দিতে পারেন তিনি।

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক আশ্বস্ত করলেও রাহুল গাঁধী-সহ বিরোধীরা বারবার বলছেন, করোনার সংক্রমণ লাগামছাড়া হয়ে পড়ছে দেশে। অন্যান্য দেশের মতোই প্রতিষেধকের মাধ্যমে পরিত্রাণের পথ খুঁজছে ভারত। চার দিন আগে রাশিয়া জানিয়েছে, করোনার টিকা ‘স্পুটনিক-ভি’ তৈরি করে ফেলেছে তারা। সেই টিকার পরীক্ষা ঠিকমতো হয়েছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন অবশ্য উঠেছে। কিন্তু ভারত কবে এমন ‘সুখবর’ দেবে— সেই অপেক্ষাও বাড়তে শুরু করেছে। অনেকেরই মতে, এই প্রতীক্ষাকে অমূলক বলা চলে না। দেশে-বিদেশে চিকিৎসা বিষয়ক গবেষণায় ভারতীয় বিজ্ঞানী তথা সংস্থাগুলির সাফল্যের খবর নিয়মিতই শোনা যায়। আর এই মুহূর্তে ভারতে দেশি-বিদেশি মিলিয়ে করোনার অন্তত চারটি সম্ভাব্য টিকার উ‌ৎপাদন তথা পরীক্ষা চলছে।

লালকেল্লা থেকে নরেন্দ্র মোদী

• ২০১৪: জনধন যোজনা, স্বচ্ছ ভারত চালু, যোজনা কমিশন তুলে দেওয়ার ঘোষণা

• ২০১৫: দুর্নীতি ও কালো টাকার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ডাক, সরকারি সি ও ডি পদে ইন্টারভিউ তুলে দেওয়া, সেনার এক পদ, এক পেনশনের দাবি
মেনে নেওয়া

• ২০১৬: অপ্রয়োজনীয় আইন তুলে দেওয়া, গিলগিট-বালুচিস্তান-পাক-অধিকৃত কাশ্মীরের মানুষ তাঁকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন বলে দাবি

• ২০১৭: ২০২২-এ নতুন ভারতের স্বপ্ন

• ২০১৮: ২০২২-এ মহাকাশে ভারতীয় নভশ্চর পাঠানোর ঘোষণা, জন আরোগ্য অভিযানের ঘোষণা, সেনার শর্ট সার্ভিস কমিশনে মহিলা অফিসারদের স্থায়ী কমিশন

• ২০১৯: ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদ করে এক দেশ, এক সংবিধান চালুর দাবি, ২০২৪-এর মধ্যে ঘরে ঘরে পানীয় জল সরবরাহের লক্ষ্য, চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ পদ তৈরি, প্লাস্টিক বর্জনের ডাক

কেন্দ্রীয় সরকারের টিকা সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ কমিটি দু’দিন আগেই বৈঠকে বসেছিল। তার জেরেও টিকা নিয়ে জল্পনা জোরালো হয়েছে। ওই কমিটির এক সদস্য জানিয়েছেন, সরকারকে বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করেছেন তাঁরা। এখনও পর্যন্ত দু’টি ভারতীয় সম্ভাব্য টিকা (নির্মাতা ভারত বায়োটেক এবং জ়াইডাস ক্যাডিলা) মানবদেহে পরীক্ষামূলক প্রয়োগের প্রথম বা দ্বিতীয় পর্যায়ে রয়েছে। প্রথম ধাপের পরীক্ষামূলক প্রয়োগে এখনও

আরও পড়ুন: আজও কি জপ আত্মনির্ভর মন্ত্র

পর্যন্ত কোনও নেতিবাচক রিপোর্ট আসেনি। সংস্থাগুলির আশা, খুব দ্রুত হলেও আগামী ছয় থেকে আট মাসের মধ্যে সব পরীক্ষা শেষ করে ফেলা সম্ভব হবে। সে ক্ষেত্রে অনেকে মনে করছেন, ভারতীয় সংস্থাগুলি কী ভাবে সাফল্যের দিকে এগোচ্ছে, কাল তা বলতে পারেন মোদী। কিন্তু ভারতীয় টিকা, বিশেষ করে ভারত বায়োটেকের ‘কোভ্যাক্সিন’ নিয়ে কি কোনও বিশেষ ঘোষণা করতে পারেন প্রধানমন্ত্রী? কমিটির ওই সদস্যের কথায়, “মানবদেহে ওই টিকা প্রয়োগের সবেমাত্র দ্বিতীয় ধাপের প্রয়োগ শুরু হতে চলেছে। এখনই এ নিয়ে কিছু ঘোষণা করলে টিকার গুণমান নিয়ে প্রশ্ন ওঠা শুরু হয়ে যাবে, যা পরবর্তী গবেষণায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।”

গোটা বিশ্বে করোনার টিকা তৈরির দৌড়ে এগিয়ে রয়েছে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়। ওই টিকার বাণিজ্যিক উৎপাদনের প্রশ্নে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজ়েনেকার সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেছে ভারতীয় সংস্থা সিরাম ইনস্টিটিউট। সিরাম খুব দ্রুত ভারতে ওই টিকার তৃতীয় পর্বের পরীক্ষামূলক
প্রয়োগ শুরু করতে চলেছে। ফল ইতিবাচক হলে এই বছরের শেষে দেশীয় বাজারে অক্সফোর্ডের টিকা ছাড়তে সক্ষম হবে সিরাম। এ ছাড়া মার্কিন সংস্থা নোভাভ্যাক্সের সঙ্গেও সম্ভাব্য টিকা তৈরির চুক্তি হয়েছে সিরামের। ফলে অনেকের মতে, সিরামের উদাহরণ দেখিয়ে কাল দেশবাসীকে টিকার জন্য আর মাত্র কয়েক মাস অপেক্ষা করতে বলতে পারেন প্রধানমন্ত্রী।

রাশিয়া থেকে টিকা আনানোর বিষয়ে কী ভাবছে ভারত ? এ নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মন্তব্য, তাড়াহুড়োয় টিকার তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ রাশিয়া এড়িয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। রাশিয়ার বিরুদ্ধে টিকা সংক্রান্ত গবেষণার তথ্য গোপনেরও অভিযোগ রয়েছে। ওই টিকার মান্যতা নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা-তেও প্রশ্ন রয়েছে। ফলে রাশিয়ার টিকা বাজারে এলেও তা আমদানি করা আদৌ ঠিক সিদ্ধান্ত হবে না বলেই মত বিশেষজ্ঞদের বড় অংশের। আজ নিজের বক্তৃতার অনেকটাই কোভিড অতিমারির জন্য বরাদ্দ রেখেছিলেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। কাল লালকেল্লায় মোদী কী বলেন, সেটাই দেখার।

অন্য বিষয়গুলি:

Narendra Modi Independence Day
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy