Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪
Mallikarjun Kharge and Narendra Modi

সৌজন্য খড়্গে, খয়রাতি নিয়ে কংগ্রেসকে আক্রমণ মোদীর

যা মোকাবিলায় রাস্তাই এত দিন খুঁজে পাচ্ছিলেন না বিজেপি নেতৃত্ব। পাল্টা আক্রমণ শানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে কংগ্রেস নেতৃত্বের প্রশ্ন, ‘অচ্ছে দিন’, ‘বিকশিত ভারত’, বছরে দু’কোটি চাকরির প্রতিশ্রুতির কী হল?

কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০২৪ ০৮:৪৪
Share: Save:

চলতি মাসেই মহারাষ্ট্র এবং ঝাড়খণ্ডে নির্বাচন। তার আগে কংগ্রেসের খয়রাতির রাজনীতির বিরুদ্ধে আজ সরব হলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। যা মোকাবিলায় রাস্তাই এত দিন খুঁজে পাচ্ছিলেন না বিজেপি নেতৃত্ব। পাল্টা আক্রমণ শানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে কংগ্রেস নেতৃত্বের প্রশ্ন, ‘অচ্ছে দিন’, ‘বিকশিত ভারত’, বছরে দু’কোটি চাকরির প্রতিশ্রুতির কী হল?

আক্রমণ শানানোর সুযোগ প্রধানমন্ত্রীকে করে দিয়েছেন খোদ কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে। সম্প্রতি কর্নাটকের উপমুখ্যমন্ত্রী ডি শিবকুমার রাজ্যের শক্তি প্রকল্প (কর্নাটকের মহিলাদের বিনামূল্যে বাস সফর) পর্যালোচনা করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। মূলত পরিবহণ খাতে খয়রাতি কমানোই ছিল লক্ষ্য। তার পরেই গতকাল খড়্গে কংগ্রেসের নেতাদের পরামর্শ দেন, প্রচারে এমন-প্রতিশ্রুতি দিতে যা পূরণ করা সম্ভব।

আজ দুপুরে বিজেপি সাংসদ রবিশঙ্কর প্রসাদ এ নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করার পরে বিকেলে কংগ্রেসের খয়রাতির রাজনীতির সমালোচনা করেন মোদী। খড়্গের বক্তব্যের সূত্র ধরে সমাজমাধ্যমে তিনি লেখেন, “কংগ্রেস বুঝতে পেরেছে, অবাস্তব প্রতিশ্রুতি দেওয়া সহজ। কিন্তু সেগুলির বাস্তবায়ন করা কঠিন। বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয় জেনেও একের পর এক নির্বাচনী প্রচারে কংগ্রেস প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আর তা না করতে পেরে কংগ্রেস এখন ধরা পড়ে গিয়েছে।”

কর্নাটক কিংবা হিমাচলপ্রদেশের বিধানসভা নির্বাচনে মূলত কংগ্রেসের দেওয়া জনমোহিনী নীতির কাছে কার্যত পরাস্ত হতে হয়েছিল বিজেপিকে। তেলঙ্গানায় কৃষকের ঋণ মকুব করে দেওয়ার ঘোষণা ক্ষমতা দখলে সাহায্য করে কংগ্রেসকে। দিল্লিতেও গত দশ বছরে বিনামূল্যে পানীয় জল, বিদ্যুৎ ও মহিলাদের নিখরচায় বাসে চড়তে দেওয়ার নীতির কারণে ক্ষমতা ধরে রাখতে পেরেছেন অরবিন্দ কেজরীওয়াল। ওই কৌশলের মোকাবিলায় রাজ্যগুলিকে বিভিন্ন সময়ে আর্থিক শৃঙ্খলার কথা মনে করিয়ে দিতে দেখা গিয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে।

কিন্তু হিমাচল প্রদেশ, কর্নাটক, তেলঙ্গনায় কংগ্রেসের জয়, পশ্চিমবঙ্গে লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পকে সামনে রেখে তৃণমূলের জয় স্পষ্ট করে দিয়েছিল জনমোহিনী নীতির সাফল্যকে। যা উপেক্ষা করতে পারেনি প্রধানমন্ত্রীর দলও। সেই কারণে মধ্যপ্রদেশে বিধানসভা নির্বাচনের আগে ‘লাডলি বহেনা যোজনা’য় কংগ্রেসকে টক্কর দিতে ওই ভাতা বাড়াতে বাধ্য হয় তৎকালীন বিজেপি সরকার। যা বিজেপির ওই রাজ্যে জিতে আসার অন্যতম কারণ। এ ছাড়া, দেশের ১১ কোটি কৃষককে বছরে ছ’হাজার টাকার আর্থিক সাহায্য, দেশের ৮০ কোটি মানুষকে বিনামূল্যে খাদ্যশস্য বিতরণের মতো খয়রাতির রাস্তায় হাঁটতে হয়েছে মোদী সরকারকে। যদিও একে খয়রাতির রাজনীতি বলে মানতে চাননি বিজেপি সাংসদ রবিশঙ্কর প্রসাদ। তাঁর কথায়, “বিজেপি এমন প্রতিশ্রুতি দেয়, যা পালন করা সম্ভব। রাহুল ও খড়্গে প্রতিশ্রুতি রক্ষায় ব্যর্থ। তাই তাঁদের উচিত দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চাওয়া।”

যদিও ভোটমুখী মহারাষ্ট্রেও খয়রাতির রাজনীতিতেই ভরসা করছেন বিজেপি নেতৃত্ব। তাই মহারাষ্ট্রেও ‘লড়কি বহিন যোজনা’ চালু করেছে সে রাজ্যের এনডিএ সরকার। সূত্রের মতে, ভোটে জিতলে আর্থিক ভাতা বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি থাকতে চলেছে গেরুয়া শিবিরের ইস্তাহারে। তার পরেও কংগ্রেসের কৌশল নিয়ে চিন্তায় বিজেপি নেতৃত্ব। কারণ, চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে দলীয় ইস্তাহারে পাঁচ দফা জনমোহিনী নীতির ঘোষণার পরিকল্পনা রয়েছে কংগ্রেসের।

তার আগে খড়্গের ওই সতর্কবার্তা পাল্টা আক্রমণের সুযোগ করে দিয়েছে বিজেপিকে। ভোটমুখী দু’রাজ্যের মানুষকে সতর্ক করে মোদী বলেন, “কর্নাটকে কংগ্রেস দলীয় রাজনীতিক কোন্দল ও লুটে ব্যস্ত। এমনকি, যে প্রকল্পগুলি চলছে, সেগুলি প্রত্যাহার করার কথা ভাবছে কংগ্রেস সরকার। হিমাচল প্রদেশে সরকারি কর্মীরা সময়ে বেতন পাচ্ছেন না।
তেলঙ্গনায় কৃষকেরা ঋণ মকুবের অপেক্ষায় রয়েছেন। অতীতে ছত্তীসগঢ় এবং রাজস্থানে কংগ্রেস সরকার কিছু ভাতা দেওয়ার কথা বলেছিল, যা বাস্তবায়িত হয়নি।”

লোকসভা নির্বাচনে মহারাষ্ট্রে খারাপ ফল করেছে এনডিএ শিবির। ভোটারদের মন ঘোরাতে তাই কংগ্রেসের জনমোহিনী প্রতিশ্রুতি রূপায়ণে ব্যর্থতা, হরিয়ানার নির্বাচনে তাদের ব্যর্থতার উদাহরণ টেনে মোদী বলেন যে, “কংগ্রেসের ভুয়ো প্রতিশ্রুতির বিরুদ্ধে দেশের মানুষকে সতর্ক থাকতে হবে। হরিয়ানার মানুষ কংগ্রেসের মিথ্যাভাষণকে
প্রত্যাখ্যান করে উন্নয়নমুখী সরকারকে বেছে নিয়েছেন।”

আজ খড়্গে পাল্টা প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চেয়েছেন, “আপনি যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, সেগুলির কী হল? মিথ্যা, প্রতারণা, ভুয়ো প্রতিশ্রুতি, লুট এবং প্রচার হল আপনার সরকারের পাঁচটি বিশেষণ। আপনার বছরে দু’কোটি চাকরি, অচ্ছে দিন, বিকশিত ভারত, সব কা সাথ সব কা বিকাশের গ্যারান্টি মানুষের সঙ্গে প্রহসন মাত্র।’

অন্য বিষয়গুলি:

Mallikarjun Kharge Narendra Modi BJP Congress
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE