নরেন্দ্র মোদী। সোমবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: পিটিআই।
তুমুল হাততালি।
নরেন্দ্র মোদী এই সবে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী নয়, পড়ুয়াদের পরিবারের এক জন হিসেবে কথা বলতে চান তিনি। প্রযুক্তিপ্রিয় নতুন প্রজন্মের নাড়ি টিপে তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমার সঙ্গে কথা হোক হ্যাশট্যাগ উইদাউট ফিল্টার।’’ অর্থাৎ, নির্দিষ্ট বিষয়ে কিন্তু কোনও রাখঢাক না-রেখে। সোমবার তালকাটোরা স্টেডিয়ামে ‘পরীক্ষা পে চর্চা’ অনুষ্ঠানে হাততালির ঝড়। কার্যত আপ্লুত, মন্ত্রমুগ্ধ বোর্ড পরীক্ষার দিকে পা বাড়ানো হাজার দুয়েক পড়ুয়া।
কিন্তু ওই একই কথায় আজ যেন আকাশ থেকে পড়লেন শৌর্য সুদ। শরীরের বিদ্রোহে হুইলচেয়ারে বন্দি। তবু যন্তরমন্তরে জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) বিরোধী মিছিলে শামিল হতে দ্বারকা থেকে এসেছেন দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের এই স্নাতকোত্তর। মোদী এমনটা বলেছেন শুনে তাঁর প্রশ্ন, ‘‘গত কয়েক মাস ধরে শুধু এইটুকুই তো চেয়ে আসছেন জেএনইউ, জামিয়া, আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পড়ুয়ারা! তা হলে তাঁদের পুলিশের লাঠি খেতে হল কেন?’’
মান্ডি হাউস থেকে যে প্রতিবাদী পড়ুয়ারা আজ মিছিলে পা মেলালেন, তাঁদের অনেকেরই জিজ্ঞাসা, সত্যিই কি খোলা মনে পড়ুয়াদের সঙ্গে এক বার আলোচনার টেবিলে বসতে পারেন না প্রধানমন্ত্রী বা তাঁর কোনও প্রতিনিধি? জানতে চাইতে পারেন না যে, কোন ক্ষোভে এত উত্তাল সমস্ত ক্যাম্পাস? ছাত্র সংগঠন এআইএসএ-র প্রেসিডেন্ট এন সাই বালাজির কটাক্ষ, ‘‘আসলে আগে থেকে ঠিক করে রাখা নির্বিষ প্রশ্নেই একমাত্র স্বচ্ছন্দ প্রধানমন্ত্রী। সত্যিকারের প্রশ্ন তুললে বরাদ্দ থাকবে লাঠিই।’’
অনুষ্ঠানে কোনও পড়ুয়া প্রশ্ন করেছেন, ‘‘রাত জেগে নাকি ভোরবেলা, কোন সময়ে পড়া ভাল?’’ কেউ জানতে চেয়েছেন, ‘‘পরীক্ষার টেনশন কাটাব কী ভাবে?’’ কোনও পড়ুয়া জানতে চেয়েছেন বাবা-মায়ের প্রত্যাশা সামলানোর টোটকা, তো কেউ জানতে চেয়েছেন ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সাজাবেন কী ভাবে?
আরও পড়ুন: ‘ছাত্রজীবন কাটালে তো ছাত্রদের বুঝবেন!’
উত্তরে কখনও নিজের ছোটবেলায় কানে নিমকাঠি পরার গল্প টেনে এনেছেন মোদী। কখনও কঠিন পরিস্থিতিতেও হাল না-ছাড়ার উদাহরণ দিতে গিয়ে বলেছেন ভাঙা চোয়ালে ব্যান্ডেজ নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজে অনিল কুম্বলের ম্যাচের মোড় ঘোরানো বোলিং কিংবা ইডেনে প্রায় নিশ্চিত হারতে বসা ম্যাচে রাহুল দ্রাবিড় এবং ভি ভি এস লক্ষ্ণণের অমর জুটির কথা।
সিএএ ও এনআরসির প্রতিবাদে যন্তরমন্তরে শৌর্য সুদ। নিজস্ব চিত্র
সে কথা শুনে প্রতিবাদী ভিড় প্রশ্ন তুলেছে, তা হলে সংবিধান বাঁচাতে যে পড়ুয়ারা নাছোড় লড়াই পণ করেছেন, আওয়াজ তুলেছেন ধর্মের ভিত্তিতে শরণার্থী বাছাইয়ের নতুন নাগরিকত্ব আইন (সিএএ)-এর বিরুদ্ধে, তাঁদের উপরে মোদী সরকার এমন খড়্গহস্ত কেন? কেনই বা প্রযুক্তিতে এমন সড়গড় প্রধানমন্ত্রীর সরকারের অধীনে থাকা দিল্লি পুলিশ হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে বিস্তর সূত্র পেয়েও জেএনইউয়ে তাণ্ডব চালানো এক জনকেও ধরতে পারেনি এত দিনে?
আরও পড়ুন: নড্ডাকে হেঁচকা টানে আসনে বসালেন অমিত
জেএনইউয়েরই ছাত্রী দোলন সামন্তের অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী মহড়া দিয়ে, পছন্দের প্রশ্নের উত্তর হয়তো দিয়েছেন, কিন্তু কাশ্মীর এত দিন পরেও কেন কার্যত বিচ্ছিন্ন, তার উত্তর কে দেবেন? কে বলবেন যে, অর্থনীতির এই বেহাল দশায় চাকরিপ্রার্থীরা কাজ খুঁজবেন কোথায়? জেএনইউয়ের মতো সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার খরচ বাড়িয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাস্তা মসৃণ করা হচ্ছে কেন, সে জবাবই বা মিলবে কার কাছে?
আরও পড়ুন: দেশি জিনিসই কেনো, মোদীর বার্তা পড়ুয়াদের
এ দিন অভিভাবকদের উদ্দেশে মোদী বলেছেন, সন্তান বড় হলেও যেন ছোটবেলার মতো করেই পাশে থাকেন তাঁরা। প্রধানমন্ত্রীর কথায়, ‘‘নতুন হাঁটতে শেখা বাচ্চা চলার সময়ে পড়ে গেলেও, মা তাকে বকেন না। বরং উৎসাহ জোগাতে হাততালি দেন। ছেলে-মেয়ে বড় হওয়ার পরে ব্যর্থতা এলেও একই ভাবে পাশে থাকুন।’’
শৌর্যর আক্ষেপ, নিজের বেলা শুধু এটুকুই যদি মনে রাখতেন মোদী! তাঁর কথায়, ‘‘পড়ুয়াদের গলায় প্রতিবাদের সুর তো উঠতেই পারে। কেন্দ্র যদি তা যুক্তিহীনও মনে করে, তবু সেই কণ্ঠকে স্তব্ধ করার বদলে এক বার কথা শোনার চেষ্টা করা যায় না কি?’’
মোদী শুনিয়েছেন, কী ভাবে অত কাছে গিয়েও চন্দ্রযান প্রকল্প ব্যর্থ হওয়ায় রাতভর ঘুমোতে পারেননি তিনি। হোটেলে ফিরেও অস্থির ভাবে পায়চারি করেছেন নিজের ঘরে। তা শুনে এ দিন মিছিল থেকে পাল্টা প্রশ্ন এল, ‘‘সন্তানসম পড়ুয়াদের রক্ত ঝরার খবর পেয়ে তা হলে এমন প্রধানমন্ত্রী নিশ্চিন্তে শুতে পারেন কি?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy