Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

লগ্নির পক্ষে সেরা ভারতই, বোঝাতে মরিয়া প্রধানমন্ত্রী

প্রথমে বিশ্ব অর্থনীতির অন্যতম প্রাণকেন্দ্র নিউ ইয়র্কে হিন্দি-ইংরেজি মিশিয়ে মিনিট আঠারোর বক্তৃতা। আর তার পরে মিনিট পনেরোর আলাপচারিতা মার্কিন ধনকুবের মাইকেল ব্লুমবার্গের সঙ্গে।

নিউ ইয়র্কে গ্লোবাল বিজনেস ফোরামে নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই।

নিউ ইয়র্কে গ্লোবাল বিজনেস ফোরামে নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই।

অগ্নি রায় ও ইন্দ্রজিৎ অধিকারী
নিউ ইয়র্ক ও নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৩:১৮
Share: Save:

যেন ‘ভাইব্র্যান্ট ভারত’।

প্রথমে বিশ্ব অর্থনীতির অন্যতম প্রাণকেন্দ্র নিউ ইয়র্কে হিন্দি-ইংরেজি মিশিয়ে মিনিট আঠারোর বক্তৃতা। আর তার পরে মিনিট পনেরোর আলাপচারিতা মার্কিন ধনকুবের মাইকেল ব্লুমবার্গের সঙ্গে। বুধবার এই পুরো সময় জুড়ে শিল্পপতিদের সামনে ভারতকে বিদেশি লগ্নির সব থেকে আকর্ষণীয় গন্তব্য হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করলেন নরেন্দ্র মোদী।

তার জন্য কখনও পাঁচ লক্ষ কোটি ডলারের অর্থনীতি হয়ে ওঠার স্বপ্ন ফেরি করলেন। আবার কখনও বিদেশি লগ্নিকারীদের পুঁজি ঢালার ডাক দিলেন পরিকাঠামোয়। দাবি করলেন, শুধু এই ক্ষেত্রেই লগ্নির চাহিদা ১.৩ লক্ষ কোটি ডলার। তুললেন প্রতিরক্ষায় বিদেশি বিনিয়োগ আসার রাস্তা চওড়া করার প্রসঙ্গ। স্টার্ট-আপ থেকে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ— সব ক্ষেত্রেই লগ্নির কী বিপুল সুযোগ ভারতে রয়েছে, তা তুলে ধরার চেষ্টা করে গেলেন প্রধানমন্ত্রী। ঠিক যে ভাবে গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন সেখানকার শিল্প সম্মেলন ভাইব্র্যান্ট-গুজরাতের মঞ্চকে ব্যবহার করতেন তিনি।

কিন্তু শুধু সম্ভাবনার স্বপ্নে যে লগ্নির চিঁড়ে ভেজে না, তা বিলক্ষণ জানেন মোদী। সেই কারণে তথ্য আর যুক্তির বুনোটে বোঝাতে চাইলেন, কেন ভারতে লগ্নি সুরক্ষিত। কতখানি বিপুল আর সম্ভাবনাময় সেই বাজার। সেখানে দক্ষ কর্মীর জোগান কতখানি। উদ্ভাবন থেকে শুরু করে সহজে ব্যবসা করা (ইজ অব ডুয়িং বিজনেস)— সমস্ত ক্ষেত্রে গত পাঁচ বছরে কতটা এগিয়েছে ভারত। আর্থিক ক্ষেত্রে নিজের জমানার সাফল্যের কথা বলতে গিয়ে তুললেন জিএসটি, দেউলিয়া আইন, জন-ধন প্রকল্প এবং অবশ্যই হালের কর্পোরেট কর ছাঁটাইয়ের কথা। আবার এই সমস্ত কিছু বলেও মনে করিয়ে দিলেন, এ দফায় তাঁর সরকারের বয়স মোটে তিন-চার মাস। সুতরাং ‘এ সব নেহাতই শুরু। আসল কর্মকাণ্ড এখনও বাকি।’

কিন্তু শিল্পমহলের একাংশ-সহ অনেকে বলছেন, মার্কিন মুলুকে দাঁড়িয়ে বিদেশি লগ্নি টানতে প্রধানমন্ত্রী যে দেশকে বিশ্ব অর্থনীতির উজ্জ্বল বিন্দু হিসেবে তুলে ধরবেন, তা প্রত্যাশিত। কিন্তু শিল্পপতিরা তো শুধু মুখের কথায় টাকা ঢালেন না। তাঁরা বিনিয়োগের আগে খুঁটিয়ে দেখেন বাস্তবের পরিসংখ্যান। তাই দেশে ফিরে ঝিমিয়ে পড়া অর্থনীতির হাল ফেরানোয় নাগাড়ে নজর রাখবেন তো মোদী?

এ দিন যেমন প্রধানমন্ত্রী দাবি করেছেন, ভারতে বৃদ্ধির হার ভাল। লোকের কেনার ক্ষমতা বাড়ায় অভাব নেই চাহিদার। বাজারে কমবয়সি কর্মীর জোগান অঢেল। লগ্নি টানতে টানা কর-সংস্কারে মন দিয়েছে সরকার। দেশে গত কয়েক দশকে যা বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে, তার অর্ধেকই এসেছে শেষ পাঁচ বছরে।

কিন্তু প্রশ্ন সেখানেই। তথ্য বলছে, শেষ পরিসংখ্যানে ৫ শতাংশে নেমেছে বৃদ্ধির হার। অর্থনীতি ঝিমিয়ে পড়েছে চাহিদার পালে হাওয়া না-থাকার কারণে। কর্মীর জোগান থাকলেও, উপযুক্ত দক্ষতা বা প্রশিক্ষণ নেই তাঁদের অনেকের। কাফে কফি ডে-র কর্ণধারের অস্বাভাবিক মৃত্যুর পরে কর-সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলেছে শিল্পমহলের একাংশ। আর হালে বিদেশি বিনিয়োগও বাড়ন্ত।

অর্থনীতির এই সমস্ত ভিত নড়বড়ে দেখলে, লগ্নিতে চট করে আগ্রহ দেখান না বিনিয়োগকারীরা। তাই বিদেশি লগ্নি টানতে মরিয়া মোদী সরকার এই সমস্ত সমস্যার সমাধানে দ্রুত কোমর বাঁধবে কি না, সেই দিকে চোখ শিল্পমহলের।

অন্য বিষয়গুলি:

Michael Bloomberg Narendra Modi USA
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy