মধ্যরাতে বেনারস স্টেশনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সঙ্গী উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। মঙ্গলবার। ছবি পিটিআই।
এ সেই ‘অলি গলি চলি রাম’-এর কাশী নয়। এ হল ‘নতুন কাশী’, যার আলো ঝলমলে রাস্তায় গত কাল গভীর রাতে যোগী আদিত্যনাথকে নিয়ে হাঁটছিলেন নরেন্দ্র মোদী।
হ্যাকারদের হাত থেকে সদ্য পুনরুদ্ধার করা মোদীর টুইটার হ্যান্ডলেই রয়েছে ছবিগুলো। পোস্টের সময় রাত ১২টা ৫২ থেকে রাত ১টা ২৩ মিনিট। ছবিতে মোদী-যোগী হেঁটে বেড়াচ্ছেন কখনও কাশীর রাজপথে, কখনও রেল স্টেশনে। সেই সব ছবি দেখে কেউ কেউ মোদীকে বলেছেন বাগদাদের খলিফা হারুন অল রশিদ! নগরবাসীর দুঃখ-দুর্দশার খবর নিতে যিনি গভীর রাতে রাস্তায় রাস্তায় হেঁটে বেড়াতেন বলে প্রবাদ।
সকালে গঙ্গায় কোমরজলে দাঁড়িয়ে পুজো করেছেন। নতুন রূপের বিশ্বনাথ ধামের প্রথম পর্যায়ের উদ্বোধন করেছেন। রাতে বৈঠকে বসেছেন বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রী ও উপ-মুখ্যমন্ত্রীদের নিয়ে। সেই বৈঠক শেষ হতে রাত ১২টা ১৯ মিনিটে সকলকে নিয়ে ছবি তুলিয়ে টুইট করেছেন।
দেশের প্রধানমন্ত্রী তথা বারাণসীর সাংসদ মোদী তার পরে বেরিয়েছেন পায়ে হেঁটে শহর ঘুরতে। সঙ্গী উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী। যোগী মাস্ক পরলেও মোদী পরেননি। কোনও ছবিতে তাঁদের দেখা যাচ্ছে বিশ্বনাথ ধাম চত্বরে, কখনও আবার দোকানপাটের বন্ধ শাটারের পাশ দিয়ে যাওয়া কংক্রিট-বাঁধানো রাস্তায়। এসপিজি-র ঘেরাটোপ অবশ্য রয়েছে আগাগোড়াই।
চারটে ছবির ক্যাপশনে মোদী লিখেছেন, ‘‘কাশীর গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন প্রকল্পগুলি খতিয়ে দেখছি। পবিত্র শহরে সম্ভাব্য শ্রেষ্ঠ পরিকাঠামো গড়ে তুলতে আমাদের এই উদ্যোগ।’’ ছবি পোস্টের সময়, রাত ১২টা ৫২।
‘‘নেক্সট স্টপ। বেনারস স্টেশন। রেল যোগাযোগ বাড়াতে এবং পরিচ্ছন্ন, আধুনিক যাত্রীবান্ধব রেল স্টেশন গড়ে তুলতে আমরা কাজ করছি’’— রাত ১টা ২৩ মিনিটে পোস্ট করা আরও তিনটি ছবির ক্যাপশনে লিখেছেন মোদী। একটিতে তিনি আর যোগী সাধারণ পর্যটকের মতোই স্টেশনের বাইরে দাঁড়িয়ে। একটিতে দু’জনেই প্ল্যাটফর্মে হাঁটছেন। আর একটিতে মোদী একা, প্ল্যাটফর্মের ডিজিটাল ঘড়ির নীচে দাঁড়িয়ে। ঘড়ি বলছে, সময় রাত ১টা ১৩। যদিও ওই ছবির নীচেই কোনও এক টুইটার ব্যবহারকারীর মন্তব্য— ‘‘চিত্রনাট্যটা আপনার তৈরি, না এর জন্যও টিম আছে?’’ আর এক জন লিখেছেন, ‘‘নিঃসন্দেহে স্টেশনটা ভাল দেখাচ্ছে। তা এটা আমরা কাকে বিক্রি করছি?’’
মোদীর রাত জাগার ছবি দেখে তাঁর অনেক ভক্তই অবশ্য অভিভূত। কেউ তো এমনও লিখেছেন, ‘‘আপনি ঘুমোন না? আগের জন্মে কিছু পুণ্য করেছিলাম বলে এমন প্রধানমন্ত্রী পেয়েছি।’’ কিন্তু এরই সঙ্গে লেখা হয়েছে, ‘‘না ঘুমোব, না ঘুমোতে দেব।’’ কিংবা, ‘‘নাটক বন্ধ করুন। গঙ্গায় কত লাশ বয়ে গেল, গুনে দেখেছেন?’’ কেউ লিখছেন, ‘‘৪৫ বছরে বেকারত্ব সর্বোচ্চ। চাকরির কী হবে?’’ কারও প্রশ্ন, শহর ঘুরে দেখতে গিয়ে কি পরিযায়ী শ্রমিকদের দুর্দশা টের পেলেন প্রধানমন্ত্রী?
বিরোধী শিবিরে সাম্প্রতিক কালে অনেকটাই স্তিমিত হয়ে পড়া বিএসপি নেত্রী মায়াবতী কিন্তু আজ রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারকে আক্রমণ করতে গিয়ে খোলাখুলিই ‘নাটকবাজি’ শব্দটা বলেছেন। এ-ও বলেছেন, নিছক কয়েকটা ঘোষণা, শিলান্যাস, তড়িঘড়ি শুরু করা প্রকল্প দিয়ে উত্তরপ্রদেশে মোটেই বিজেপির ভিত্তি মজবুত হবে না। নরম হিন্দুত্বের মোড়কে এসপি নেতা অখিলেশ যাদবও নিশানা করেছেন মুখ্যমন্ত্রীকে। বলেছেন, ‘‘যোগী আদিত্যনাথ খুব ভাল করে জানেন, একটি নদীও পরিষ্কার নয়। তাই তিনি মা গঙ্গায় ডুব দেননি।’’
যোগী অবশ্য গঙ্গার কোমরজলে দাঁড়ানো মোদীর ছবি টুইট করে লিখেছেন, ‘‘মা গঙ্গার কোলে নতুন কাশীর স্থপতি।’’ আর নৈশ-সফরে আগাগোড়া যোগীকে সঙ্গে রেখে মোদীও বুঝিয়ে দিয়েছেন, আসন্ন বিধানসভা ভোটে বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীর উপরে আস্থা রয়েছে তাঁর। তবে ভোটের প্রচারে দলের মুখ যোগী নন, স্বয়ং তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy