ফাইল চিত্র।
করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কায় উদ্বিগ্ন গোটা দেশ। টানাটানি টিকা ও ওষুধের। কিন্তু সংক্রমণ আর করোনা-বিধির বিন্দুমাত্র তোয়াক্কা না-করে এখনও পর্যন্ত ২৩ লক্ষ পুণ্যার্থী স্নান সেরেছেন কুম্ভে। সরকারি মতে, কুম্ভ মেলায় আক্রান্ত হয়েছেন দু’হাজার জন। বাস্তব সংখ্যাটা যে তার চেয়ে কত বেশি, তা নিয়ে প্রশ্ন বিস্তর। অতিমারির মধ্যে এই বিপুল সমাবেশ কেন প্রশ্ন উঠছে দেশে-বিদেশে। এই পরিস্থিতিতে, দু’টি শাহি স্নান হয়ে যাওয়ার পরে আজ নড়ে বসলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ‘প্রতীকী’ হিসেবে কুম্ভের বাকি স্নান ও উদ্যাপন সারার ডাক দিলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী আজ জুনা আখাড়ার মহামণ্ডলেশ্বর অবধেশানন্দ গিরিকে ফোন করে সমস্ত সাধুর শারীরিক অবস্থার খোঁজ নেন। কুম্ভ মেলা চলাকালীনই করোনায় মারা গিয়েছেন নির্বাণী আখাড়ার প্রধান কপিলদেব দাস(৬৫)। সব শুনে মোদী আজ অবধেশানন্দ গিরির কাছে আবেদন করেন, কুম্ভকে কেবল ‘প্রতীকী’ ভাবেই রাখা হোক। এর পরে মোদীর টুইট, “আচার্য মহামণ্ডলেশ্বর পূজ্য স্বামী অবধেশানন্দ গিরির সঙ্গে ফোনে কথা হল। সাধুসন্তদের স্বাস্থ্যের খবর নিলাম। সকলেই প্রশাসনের সঙ্গে সহযোগিতা করছেন। তার জন্য সন্তজনদের কৃতজ্ঞতা জানাই। দু’টো শাহি স্নান ইতিমধ্যেই হয়ে গিয়েছে। করোনা সঙ্কটের কথা মাথায় রেখে অনুরোধ জানিয়েছি যে, আপাতত কুম্ভ প্রতীকী রূপেই উদ্যাপন করা হোক, যা এই সঙ্কটের সঙ্গে লড়াইয়ে আমাদের শক্তি জোগাবে।”
অবধেশানন্দ গিরিও উত্তরে টুইট করে জানিয়েছেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে তাঁরা সম্মান করেন। জীবনের সুরক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ তাঁর মতে। ধর্মপরায়ণ মানুষের কাছে ভিড় করে স্নানে না-আসার আহ্বান
জানান তিনি।
কোভিড অতিমারির মধ্যে আদৌ মেলার আয়োজন করা যায় কি না, তা নিয়ে গোড়া থেকেই তীব্র মতবিরোধ ছিল। মেলা বন্ধের দাবিও জানিয়েছিলেন অনেকে। কিন্তু উত্তরাখণ্ড প্রশাসন জানায়, সব নিয়ম মেনেই কুম্ভের আয়োজন করা হবে। কিন্তু বাস্তবে দূরত্ববিধি বা মাস্ক কোভিড রোখার কোনও বিধিনিষেধেরই তোয়াক্কা না-করে হাজার হাজার মানুষকে শাহি স্নানে অংশ নিতে দেখা গিয়েছে দিনের পর দিন।
এত দিন পরে দেশ জুড়ে প্রবল সমালোচনার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী ডাক দিলেন ‘প্রতীকী’ কুম্ভ স্নানের! বিরোধী শিবির মনে করে, এটা ‘চোর পালানোর পরে বোধদয়’। কুম্ভমেলা থেকে গোটা দেশের বিশাল অংশে করোনা প্রবল ভাবে ছড়িয়ে পড়ার পর এখন তিনি বিপদ সামলানোর কথা বলছেন! কংগ্রেসের জয়রাম রমেশ টুইট করেছেন, “প্রবল ঔদ্ধত্য এবং প্রবল অপদার্থতার ফল এই মারাত্মক সংক্রমণ।” কংগ্রেসের পি চিদম্বরমের কথায়, “কুম্ভ শুরু হয়েছে অনেক দিন। এখন ঘোড়া পালিয়ে যাওয়ার পর আস্তাবলের দরজায় তালা দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে।”
নভেল করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কায় দেশে দৈনিক সংক্রমণ ইতিমধ্যেই ২ লক্ষ পেরিয়ে গিয়েছে। হরিদ্বারে কুম্ভ মেলা ঘিরে উন্মাদনা নিয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় উঠলেও নিরুত্তাপ ছিল উত্তরাখণ্ড সরকার। বরং গত বছর তবলিগি জামাতের সদর দফতর দিল্লির নিজামউদ্দিন মরকজের সঙ্গে তুলনা উঠলে, উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী তীরথ সিংহ রাওয়ত যুক্তি দেন, মরকজে একটি বদ্ধ ঘরে অনেকে জড়ো হয়েছিলেন। কেউ জানত না কী ঘটছে সেখানে। কুম্ভ মেলা চলছে খোলা আকাশের নীচে। মরকজে যাঁরা এসেছিলেন, তাঁরা ‘বাইরের লোক’, কুম্ভের সকলে ‘নিজের লোক’ বলেও মন্তব্য করেন তীরথ। স্বাস্থ্য গুরুত্বপূর্ণ হলেও ধর্মকে অবহেলা করা যায় না বলেও মন্তব্য করেন তিনি। আজ অবশ্য প্রধানমন্ত্রীর টুইটের পর সুর পাল্টে উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুণ্যার্থীদের করোনাভাইরাস মোকাবিলা করা এবং সমস্ত বিধিনিষেধ পালনের আহ্বান জানিয়েছেন।
কুম্ভে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকায় কয়েক দিন ধরেই প্রশ্ন উঠেছিল প্রশাসনের নজরদারির উপরে। যদিও কুম্ভ মেলা আয়োজন কমিটির সদস্য সিদ্ধার্থ চক্রপাণি সংবাদ সংস্থাকে বলেছিলেন, ‘‘আমাদের কাছে বিশ্বাস সব থেকে বড়। মা গঙ্গার উপর মানুষের বিশ্বাস রয়েছে বলেই তো এত মানুষ এখানে স্নান করতে এসেছেন। তাঁরা বিশ্বাস করেন, মা গঙ্গা তাঁদের এই অতিমারির হাত থেকে বাঁচাবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy