যমুনার চরে উৎসব মঞ্চে নরেন্দ্র মোদী ও শ্রী শ্রী রবিশঙ্কর। শুক্রবার। ছবি: পিটিআই।
পরিবেশ আদালত প্রশ্ন তুলেছে আগেই। ক্ষতিপূরণের খাঁড়াও ঝুলিয়েছে। আজ অনুষ্ঠান শুরুর ঠিক আগে শিলাবৃষ্টি দেখে মনে হচ্ছিল বাদ সেধেছে আবহাওয়াও। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যমুনার পারে শ্রী শ্রী রবিশঙ্করের অনুষ্ঠানে যোগ দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মঞ্চে কাটিয়ে গেলেন প্রায় আড়াই ঘণ্টা। ভোটের দিকে তাকিয়েই মোদীর এমন পদক্ষেপ বলে দাবি বিরোধীদের।
যমুনা নদীর পারে এই অনুষ্ঠান নিয়ে প্রথম থেকেই দূষণের অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। আদালতও দূষণের বিষয়টি মেনে নিয়ে ক্ষতিপূরণ হিসেবে শ্রী শ্রী রবিশঙ্করের সংস্থা ‘আর্ট অব লিভিং’-কে ৫ কোটি টাকা জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। প্রথমে ক্ষতিপূরণ না দিয়ে জেলে যাওয়ার হুঙ্কার দিয়েছিলেন রবিশঙ্কর। কিন্তু আজ মত বদলে ২৫ লক্ষ টাকা জমা দিয়েছে ‘আর্ট অব লিভিং’। বাকি টাকা জমা দিতে আদালতের কাছে তিন সপ্তাহ সময় চেয়েছে তারা। সেই আর্জি মঞ্জুরও করেছে আদালত।
আজ বিকেল চারটে নাগাদ দিল্লি জুড়ে যে ভাবে বৃষ্টি নেমেছিল তাতে সবাই ভেবে ছিলেন ভেস্তেই গেল ‘আর্ট অব লিভিং’-এর উৎসব। কিন্তু বৃষ্টি মাথায় নিয়েই একে একে ঢুকতে শুরু করেন শিল্পী- দর্শকরা। পৌনে পাঁচটা নাগাদ অনুষ্ঠানস্থলের বেশ কিছুটা অংশে জলও জমে যায়। এতে অনুষ্ঠানের একটু তাল কেটে গেলেও বৃষ্টি ধরতেই জনস্রোত ঢুকতে শুরু করে যমুনার পাড়ে। কিছু ক্ষণের মধ্যেই মাঠের বেশির ভাগ অংশ ভর্তি হয়ে যায়। তত ক্ষণে এক হাজার ফুট চওড়া মঞ্চেও চলে এসেছেন শিল্পীরা।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর আসা নিয়েও অনিশ্চয়তা ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আসারই সিদ্ধান্ত নেন মোদী। সাড়ে পাঁচটা নাগাদ মূল মঞ্চে ঢোকেন তিনি। এর পরেই শুরু হয়ে যায় বেদপাঠ। পাঠে অংশ নেন বিভিন্ন রাজ্য থেকে আসা ১০৫০ পণ্ডিত। মন্ত্রোচ্চারণ শেষ হতেই মূল মঞ্চের সামনে সবুজ কার্পেটে শুরু হয়ে ১৭০০ শিল্পীর কত্থক নৃত্য। তত ক্ষণে মাঠে ভেসে যাচ্ছে নানা রঙের আলোর ঢেউ। বিরজু মহারাজের পরিচালনায় ঝলমলে পোশাকের শিল্পীর পায়ের ছন্দে মুগ্ধ প্রধানমন্ত্রী থেকে বিভিন্ন দেশ থেকে আসা প্রতিনিধিরা। এই অনুষ্ঠান শেষ হতেই এক সঙ্গে শোনা গেল বিভিন্ন রাজ্য থেকে আসা আট হাজারের বেশি যন্ত্রশিল্পীর বাজনা।
এই যন্ত্রশিল্পীদের মধ্যে রয়েছেন কলকাতা থেকে আসা সপ্তর্ষি ভৌমিক, বিশ্বমিত্র ভৌমিক, অর্পিতা শর্মা, দীপান্বিতা শর্মা, এণাক্ষী বন্দ্যোপাধ্যায়, রূপক দে-রা। সকলের মতে, ‘‘এই পর্যায়ের একটি অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার স্মৃতি চিরদিন মনে থাকবে।’’ প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতার আগে অন্য একটি অনুষ্ঠান দর্শকদের নজর কেড়েছে। তা হল দক্ষিণ ভারত থেকে আসা দেড় হাজারেরও বেশি নৃত্যশিল্পীর ভরতনাট্যম। অনুষ্ঠানের শেষে এই নৃত্যানুষ্ঠানের পরিচালককে পুরস্কৃত করেছেন উদ্যোক্তারা। লাতিন সঙ্গীতে মাত করেছেন আর্জেন্টিনা থেকে আসা ৫০০ জন গায়ক।
দেখেশুনে নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, ‘‘৩৫ বছরের অভিজ্ঞতায় বিশ্বের সব দেশকেই আপন করে নিয়েছেন রবিশঙ্কর। এ তো দেখছি সংস্কৃতির কুম্ভমেলা।’’ আর শ্রী শ্রী রবিশঙ্কর জানাচ্ছেন, ‘‘কেউ কেউ বলছেন, এটা আমার নিজের অনুষ্ঠান। কিন্তু আমি বলছি, গোটা বিশ্ব সংসারই আমার। ওয়ান ওয়ার্ল্ড ওয়ান ফ্যামিলি। তবেই শান্তি আসবে।’’
কিন্তু বিতর্কিত ওই অনুষ্ঠানে যাওয়া নিয়ে মোদীকে শান্তি দিতে রাজি নন বিরোধীরা। আজ দুপুরে রাজ্যসভায় ‘আর্ট অব লিভিং’-এর এই অনুষ্ঠান নিয়ে আর এক দফা সরব হয়েছেন তাঁরা। বিরোধীদের প্রশ্ন, ‘‘ওই সংস্থা কি সব কিছুর উপরে? তাদের কি কোনও আইনই মানতে হয় না?’’ বিরোধীদের আরও প্রশ্ন, এত বিতর্কের পরে কী ভাবে কেন্দ্র ওই সংস্থাকে এই অনুষ্ঠানের জন্য আড়াই কোটি টাকা অনুদান দেয়। সংসদীয় প্রতিমন্ত্রী মুখতার আব্বাস নকভি বলেন, ‘‘এটা একটা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। প্রধানমন্ত্রী যাবেন। আমিও যাব। আপনারাও চলুন। গুরুদেব (রবিশঙ্কর) পরিবেশ নিয়ে যথেষ্ট সচেতন। বিষয়টিকে রাজনৈতিক রং দেওয়া ঠিক হবে না।’’
আজ পরিবেশবান্ধব চাষের জন্য পাঁচ জন কৃষককে পুরস্কৃত করেছে ‘আর্ট অব লিভিং’। যা দেখে পরিবেশবিদরা বলছেন, যমুনা দূষণের অভিযোগ ওঠার পরে এখন মুখ বাঁচাতে ওই পদক্ষেপ করা হয়েছে। বিরোধীদের মতে, ‘নরম হিন্দুত্বের’ রাজনীতি করতেই অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। পরিবেশ
বিধি না মেনে ক্ষতিপূরণ দিয়ে অনুষ্ঠান করাকেও সিলমোহর দিয়ে দিলেন তিনি।
বিতর্ক চলছে। কিন্তু আজ বৃষ্টির মধ্যেও ভিড়ের বহর দেখে খুশি উদ্যোক্তারা। শনি-রবিবার ভিড় সামলাতে নয়া রণকৌশল নেওয়ার কথাও ভাবছেন তাঁরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy