Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Narendra Modi

তিস্তার অঙ্গীকার মোদী-হাসিনার যৌথ বিবৃতিতে

গত বছর অগস্ট মাসে নাগরিকত্ব (সংশোধনী) আইন চালু হওয়ার পরে দু’দেশের সম্পর্কে টানাপড়েন শুরু হয়েছিল।

ছবি: পিটিআই।

ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০২০ ০৪:৩২
Share: Save:

পৌষ পার্বণের শুভেচ্ছা এবং বিজয় দিবসে অভিনন্দন জানিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্প্রতি ফিকে হয়ে যাওয়া ‘সোনালী অধ্যায়’-এ আবার রং ফেরানোর কাজ শুরু করল ভারত। আজ চলতি বছরের একেবারে শেষ মাসে, বছরে প্রথম বার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিয়ো মাধ্যমে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করলেন। ‘প্রতিবেশী প্রথম’ নীতির গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হিসাবে বাংলাদেশকে চিহ্নিত করলেন মোদী আজ তাঁর প্রারম্ভিক বক্তৃতায়। শুধু বক্তৃতাই নয়, বাংলাদেশের প্রধান দু’টি উদ্বেগ তিস্তা চুক্তির বাস্তবায়ন এবং রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পুনর্বাসনের জন্য ভারতের উদ্যোগ বিশেষ ভাবে উল্লেখ করা হল যৌথ ঘোষণাপত্রে।

গত বছর অগস্ট মাসে নাগরিকত্ব (সংশোধনী) আইন চালু হওয়ার পরে দু’দেশের সম্পর্কে টানাপড়েন শুরু হয়েছিল। অনুপ্রবেশ বিতর্কের পাশাপাশি করোনা আবহে ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করায় প্রকাশ্যে ক্ষোভ জানিয়েছিল ঢাকা। গত জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশ দু’জন মন্ত্রীর ভারত সফর শেষ মুহূর্তে বাতিল করে বার্তা দেয়। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ‘উইপোকা’ মন্তব্য যে ঢাকার মনকে প্রবল ভাবে বিচলিত করেছে সে কথা বহু বার ঘরোয়া ভাবে জানিয়েছেন বাংলাদেশের মন্ত্রী-আমলারা। কিন্তু চিন ও পাকিস্তানের মতো দুই প্রতিবেশীকে নিয়ে প্রবল চাপে থাকা সাউথ ব্লকের কাছে বাংলাদেশকে পাশে পাওয়া যে অত্যাবশ্যক, সে কথা কখনওই অস্বীকার করেনি সাউথ ব্লক।

আজ প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতাতেও সেই সুরেরই প্রতিফলন ঘটেছে। পর্দার ও পারে বঙ্গবন্ধু কন্যাকে মুজিব বর্ষের জন্য অভিনন্দন জানিয়ে মোদী বলেছেন, আগামী বছর মার্চ মাসে বাংলাদেশ সরকারের আমন্ত্রণ স্বীকার করে তিনি ঢাকা যাবেন। তাঁর মতে, শেখ হাসিনার সঙ্গে একত্রে শেখ মুজিবুর রহমানকে সম্মান জানাতে পেরে তিনি গর্বিত। এর পরেই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশ ‘প্রতিবেশী প্রথম’ কূটনীতিতে একটি প্রধান স্তম্ভ। প্রথম দিন থেকেই বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক শক্তিশালী করা এবং উন্নতি ঘটানো আমার কাছে বিশেষ অগ্রাধিকার পেয়ে এসেছে।” কোভিডের এই কঠিন সময়ে ভারত এবং বাংলাদেশ যে চমৎকার সমন্বয় রেখে চলেছে, সে কথাও উল্লেখ করেছেন প্রধানমন্ত্রী।

বৈঠকের পর আজ ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে যে যৌথ বিবৃতি প্রকাশিত হয়েছে, তাতে জলসম্পদ সহযোগিতা নিয়ে একটি পৃথক অনুচ্ছেদ রাখা হয়েছে। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে তাতে বলা হয়েছে, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজকের আলোচনায় তিস্তা জলবণ্টন চুক্তি দ্রুত সম্পন্ন করার বিষয়টিতে জোর দিয়েছেন। ২০১১ সালে দু’দেশের সরকারের মধ্যে এ ব্যাপারে ঐকমত্য হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ফের জানিয়েছেন, ভারত এ ব্যাপারে বাংলাদেশের কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই চুক্তি বাস্তবায়নে ভারত সরকার নিরলস চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।’ তিস্তার প্রসঙ্গটি গুরুত্ব দিয়ে রাখার পাশাপাশি দু’দেশের মধ্যে দিয়ে বয়ে যাওয়া আরও ছ’টি (খোয়াই, দুধকুমার, মনু ইত্যাদি) নদীর অন্তর্বর্তী চুক্তির ফ্রেমওয়ার্ক তৈরির কথাও উল্লেখ করা হয়েছে আজকের বিবৃতিতে। মায়ানমারের উপর কূটনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ভারত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বাংলাদেশ থেকে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য চেষ্টা করছে না— এই অভিযোগ অতীতে শোনা গিয়েছে ঢাকার রাজনৈতিক নেতৃত্বের কাছ থেকে। দ্ব্যর্থহীন ভাবে এই বিষয়টি আজ বিবৃতিতে স্থান পেয়েছে। বলা হয়েছে, ‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জানিয়েছেন যে ভাবে বাংলাদেশ দশ লক্ষেরও বেশি শরণার্থীকে মানবিকতা দেখিয়ে আশ্রয় দিয়েছেন তা প্রশংসার যোগ্য। দুই প্রধানমন্ত্রীই এই শরণার্থীদের দ্রুত নিরাপদ এবং স্থায়ী প্রত্যাবর্তনের গুরুত্বের কথা তুলে ধরেছেন। শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে মায়নমারে ফেরানোর ক্ষেত্রে ভারতের সহায়তা তিনি আশা করছেন। এ ব্যাপারে রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য হিসাবে ভারতের দায়িত্বের কথাও মোদীকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন হাসিনা।

মোদী-হাসিনা বৈঠকের পরে বৃহস্পতিবার দু’দেশের মধ্যে ৭টি দ্বিপাক্ষিক সমঝোতা চুক্তি সই হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে বাণিজ্য, কৃষি, হাইড্রোকার্বন এবং সীমান্তে হাতি চলাচলের করিডোরগুলোর সুরক্ষা সংক্রান্ত চুক্তি।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy