Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪
NV Ramana

NV Ramana: খয়রাতি বন্ধে অর্থ কমিশনের মত চাইল কোর্ট

রাজ্য সরকারগুলির ঋণের পরিমাণ ৭০ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি। অথচ প্রতিশ্রুতি আর খয়রাতি প্রকল্প চলছেই।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২২ ০৮:৫৬
Share: Save:

ভোটের প্রচারে মন ভোলানো হাজারো প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকেন নেতারা। সেগুলি বাস্তবায়িত করা আদৌ সম্ভব কি না, কিংবা করলেও অর্থনীতির হাল কোথায় পৌঁছবে— তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে ঠিকই। কিন্তু ‘ভোটারদের ঘুষ দেওয়ার’ এমন সব প্রতিশ্রুতি কিংবা খয়রাতি প্রকল্পে লাগাম টানেন না রাজনেতারা। কিন্তু এবার খয়রাতি প্রকল্পগুলি ও তার প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিল সুপ্রিম কোর্ট। সেগুলি বন্ধ করার কোনও রাস্তা রয়েছে কি না— অর্থ কমিশনের থেকে তা জেনে শীর্ষ আদালতকে জানানোর জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালত।

পুরো বিষয়টিকে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ আখ্যা দিয়ে আজ প্রধান বিচারপতি এন ভি রমণার বেঞ্চ এসব নিয়ন্ত্রণের রাস্তা খোঁজার কথা বলেছে। কেন্দ্রীয় সরকারের আইনজীবী, অ্যাডিশনাল সলিসিটর জেনারেল কে এম নটরাজের উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘আপনি স্পষ্ট করে জানান, এই ধরনের মন ভোলানো প্রকল্প চলবে কি চলবে না?’’ নির্বাচন কমিশন এ ব্যাপারে কার্যত হাত উঠিয়ে নিলে প্রধান বিচারপতি আইনজীবী কপিল সিব্বলকে বলেন, ‘‘আপনি তো অভিজ্ঞতাসম্পন্ন সাংসদ আবার আইনজীবীও— বলতে পারেন, কী ভাবে এমন সব প্রতিশ্রুতি বন্ধ করা যায়?’’ সিব্বল অন্য একটি মামলার জন্য আদালতে উপস্থিত ছিলেন। বিচারপতি রমণার প্রশ্ন শুনে বলেন, এটা সত্যিই ভাবার মতো ব্যাপার। তবে রাজ্য স্তরেই সেটা দেখা যেতে পারে। কেন্দ্রীয় সরকারের উপর এর দায়িত্ব দেওয়া ঠিক হবে না। এ বিষয়ে অর্থ কমিশনের মতামত নেওয়ার প্রস্তাব দেন সিব্বল। তাঁর যুক্তি, ‘‘অর্থ কমিশন একটি স্বশাসিত সংস্থা। তারা যখন রাজ্যগুলিকে অর্থ বরাদ্দ করবে, তখন আলাদা আলাদা ভাবে তাদের দেনার ব্যাপারটাও কমিশনের সামনে থাকবে। বোঝা যাবে, মন ভোলানো ওই সব প্রকল্পের রূপায়ণ বাস্তবসম্মত কি না।’’ এর শোনার পরেই বেঞ্চ, নটরাজকে এই পথে এগোতে বলেন। আগামী ৩ অগস্ট মামলার পরবর্তী শুনানি।

বিজেপি নেতা ও আইনজীবী অশ্বিনীকুমার উপাধ্যায় শীর্ষ আদালতে আবেদন জানিয়ে বলেছেন, ভোটারদের মন ভোলানো প্রতিশ্রুতি এবং খয়রাতি প্রকল্পগুলি ঘুষ দেওয়া ছাড়া কিছু নয়। এটা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশকে নষ্ট করছে। রাজ্য সরকারগুলির ঋণের পরিমাণ ৭০ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি। অথচ প্রতিশ্রুতি আর খয়রাতি প্রকল্প চলছেই। এসবে রাশ টানতে আইন কমিশনের পরামর্শ নেওয়া হোক। যে রাজনৈতিক দল ভোটারদের উপহার দিতে চাইবে, বাতিল হোক তাদের প্রতীক, স্বীকৃতি। এ জন্য নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দিক সুপ্রিম কোর্ট। কমিশনের আইনজীবী অবশ্য জানিয়েছেন, নির্বাচনী সাফল্যের নিরিখেই জাতীয় বা রাজ্যভিত্তিক দলের স্বীকৃতি মেলে। আর জনমোহিনী প্রতিশ্রুতি দেওয়ার দায়ে আগেই প্রতীক কেড়ে নিলে দলগুলি তো ভোটেই লড়তে পারবে না। কমিশনের বক্তব্য, কোনও দলের স্বীকৃতি বাতিলের ক্ষেত্রে দেখা হয়, তারা স্বীকৃতি নেওয়ার সময়ে জালিয়াতি করেছে কি না। আবার সংবিধান মেনে না চলার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার তাদের বেআইনি ঘোষণা করলেও স্বীকৃতি বাতিল করা যায়। কিন্তু অবাস্তব, জনমোহিনী আর্থিক প্রতিশ্রুতি দেওয়ার কারণে কোনও দলের স্বীকৃতি বাতিল করা যায় না।

শ্রীলঙ্কার ঘটনার পর খয়রাতি প্রকল্প নিয়ে বিতর্ক ফের নতুন করে সামনে এসেছিল। শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতি থেকে শিক্ষা নিয়ে রাজ্যগুলিকে সতর্ক হতে বলেছিলেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। পশ্চিমবঙ্গ-সহ দশটি রাজ্যে জিডিপি-র তুলনায় ঋণের বোঝা যথেষ্ট বেশি বলে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের একটি রিপোর্টে উঠে এসেছিল। পশ্চিমবঙ্গের কন্যাশ্রী, লক্ষীর ভাণ্ডার, রূপশ্রী, কৃষকবন্ধুর পাশাপাশি পঞ্জাব, হরিয়ানা, অন্ধ্রপ্রদেশ, রাজস্থানের বিভিন্ন অর্থ সাহায্য প্রকল্পকে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক চিহ্নিত করেছিল। কিছুদিন আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও বিনা পয়সায় সুবিধা দেওয়ার রাজনীতি নিয়ে সরব হয়েছিলেন।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE