সেটা ২০০১ সাল। সোনাই বিধানসভা আসনে সেবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছিল আনোয়ার হোসেন লস্কর ও কুতুব আহমদ মজুমদারের মধ্যে। আনোয়ার হোসেন ১৯৯৬ সালে অগপ টিকিটে জিতলেও সে বার দাঁড়ান সমাজবাদী পার্টির প্রার্থী হিসেবে। অগপ দাঁড় করায় আমিনুল হক লস্করকে। মূল লড়াইয়ে যে নেই তা শুরু থেকেই স্পষ্ট হওয়ার পরও সাধারণ মানুষের কাছে আমিনুলের প্রার্থীপদ ভিন্ন গুরুত্ব পায়। কারণ ততদিনে তিনি এলাকার মানুষের মনে তিনি ছাপ ফেলেছেন। ভোটে হারুন বা জিতুন, তিনি যে ছেড়ে কথা বলবেন না এটা মানুষ বিশ্বাস করতে শুরু করেছেন। মানুষ বুঝতে পারছেন, তাঁকে ময়দানে রেখে কেউ ছাপ্পা ভোট করিয়ে নেবে, সেটা হবে না।
পরবর্তী সময়ে অগপয় ভাঙন ধরলে ধীরে ধীরে দলের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ে তাঁর। ২০০৬-এর বিধানসভা ভোটে নিজেকে গুটিয়ে রাখেন তিনি। ২০১১ সালে কোনও আসনে প্রার্থী না হয়েও আমিনুলই ছিলেন ভোট-চর্চার কেন্দ্রে। সেবারই সবাইকে অবাক করে তিনি বিজেপিতে যোগ দেন। মনেপ্রাণে কাজ করেন সংগঠনের জন্য। ১৪-র লোকসভা ভোটের সময়, নরেন্দ্র মোদীর সভার জন্য মুসলমান কৃষকদের জমি চাই, কিংবা সংখ্যালঘু এলাকায় এক-দুটো সভা করতে চাই—সব জায়গায় গেরুয়া বাহিনীর ‘মুসকিল আসান’ আমিনুল হক লস্কর। এ বার বিধানসভা নির্বাচনে তাই দলের ঘোষণার আগেই মানুষ নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিলেন, আমিনুল হকই বিজেপি টিকিটে সোনাইয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। করলেনও। আর শুধু করাই নয়, জিতলেনও। বিজেপির একমাত্র মুসলমান প্রার্থী এখন শাসকদলের একমাত্র সংখ্যালঘু মুখ।
সে কারণেই দল সরকারে এলে সম্ভাব্য মন্ত্রী তালিকায় সবাই তাঁকে রেখেছিলেন। রাখেননি শুধু সর্বানন্দ সোনোয়াল। এতে কোনও অন্যায় হয়েছে বলে মনে করেন না আমিনুল হক লস্কর। এমনকী, মন্ত্রিসভায় সংখ্যালঘু প্রতিনিধিত্ব না-থাকাকেও তিনি বিশেষ গুরুত্ব দিতে নারাজ। তাঁর কথায়, ‘‘কাকে মন্ত্রী করা হবে, কাকে হবে না, তা পুরোপুরি মুখ্যমন্ত্রীর এক্তিয়ারভুক্ত। তিনিই স্থির করবেন, কাদের নিয়ে সরকার চালাবেন। এর মধ্যে প্রশ্ন তোলা বা মান-অভিমানের জায়গা নেই।’’ এ ছাড়া, যাঁরা সহানুভূতি জানাতে বা একটু তাতিয়ে দিতে গিয়েছিলেন, আমিনুল তাঁদের সোজাসুজি শুনিয়ে দিয়েছেন, ‘বিজেপিতে বিষয়গুলি পুরোপুরি আলাদা।’ ভোট বিশ্লেষণে ধরা পড়ে, সোনাইয়ে এবার ত্রিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মুসলমান ভোট কংগ্রেস আর এআইইউডিএফে ভাগ হয়ে যায়। হিন্দু ভোট এককাট্টা হয় আমিনুলের পক্ষে। তবু বরাক উপত্যকার মুসলমানদের কাছে স্বস্তির কথা, শাসক শিবিরে তাঁদের অন্তত একজন মানুষ রয়েছেন। তাঁরা বিশ্বাস করেন, আমিনুল হক তাঁদের কথা তুলে ধরবেন। সে কথা বুঝতে পারেন তিনি নিজেও। তাই খোলামেলা বললেন, ভোট যাকেই দিক, মুসলমানদের মধ্যে এখন আর বিজেপি-ভীতি কাজ করে না। অটলবিহারী বাজপেয়ীর ৬ বছরেই তা কেটে গিয়েছে। ২ বছর ধরে মোদী শাসনও দেখতে পাচ্ছেন সবাই। সামগ্রিক উন্নয়নের প্রশ্নে বিজেপির প্রতি তাঁদের আস্থা ক্রমে বাড়ছে। এ থেকেই গড়ে উঠছে প্রকৃত ধর্মনিরপেক্ষতা। তাঁর কথায়, ‘‘কংগ্রেস বা এআইইউডিএফের মেকি ধর্মনিরপেক্ষতা শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারে না। বরং ওই সবের দরুনই সমাজে সমস্যা তীব্রতর হয়।’’
বিজেপির এই হিন্দুত্বের জয়গান, মুসলিমদের সম্পর্কে অপ্রীতিকর মন্তব্য হজম করা কি কষ্টকর নয়? সোনাইয়ের বিজেপি বিধায়কের জবাব, ‘‘কারও কুচকাওয়াজ তো আমার ধর্মপালনে অসুবিধে করছে না। তাহলে সমস্যা কোথায়!’’ তাঁর বক্তব্য, ভারতীয় মুসলিমদের প্রতি বিজেপি শ্রদ্ধাশীল। তাঁর উপস্থিতি সম্প্রীতির বাতাবরণ তৈরি করে বলেই দাবি করেন আমিনুল হক। লাগাতার হিন্দু-মুসলমান নিয়ে কথায় কিছুটা বিরক্ত তিনি। বললেন, ‘‘মূল কথা হল, মানুষ বিধায়ক তৈরি করেন কাজের জন্য। তাই কাজ করতে হবে। নতুন বিধায়ক বলে প্রথম কিছুদিন কেটে যায় জয়ের উচ্ছ্বাস আর কাজ বুঝে নিতে।’’ তাঁর কথায়, সোনাইয়ে সমস্যা কম নয়। রাস্তাঘাট, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ—সেগুলি নিয়ে পরিকল্পিতভাবে এগোতে চান তিনি। সোনাই কৃষিপ্রধান এলাকা বলে কৃষকদের উপকার কী ভাবে করা যায়, তা নিয়ে ভাবছেন তিনি। বিশেষ করে সেচ প্রকল্প, উৎপাদিত সামগ্রীর বিপণন ইত্যাদি নিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীদের সঙ্গে কথা বলছেন বলে জানান আমিনুল। তবে বেশি গুরুত্ব দিতে চান শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায়। তাঁর বক্তব্য, ‘‘যাতে উত্তেজনা না ছড়ায়, সে ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে।’’ আর এ কাজে যে তিনি সফল হবেন, তা নিয়ে আত্মবিশ্বাসী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy