পারাপার: মঙ্গলবার বানভাসি মুম্বইয়ের রাস্তায়। পিটিআই
ফের স্তব্ধ বাণিজ্যনগরী।
নাগাড়ে বর্ষণের জেরে মঙ্গলবার কার্যত পঙ্গু হয়ে পড়েছে মুম্বইয়ের জীবনযাত্রা। অধিকাংশ জায়গা জলের তলায়। উত্তর শহরতলির মালাড এলাকায় দেওয়াল ধসে প্রাণ হারিয়েছেন ২১ জন। সব মিলিয়ে এখনও পর্যন্ত মহারাষ্ট্রে মৃতের সংখ্যা ৩৭। গত রবিবার থেকে শুরু হওয়া ভারী বর্ষণে বেসামাল হয়ে পড়েছে রেল, রাস্তা ও আকাশপথে যান চলাচল। বাতিল হচ্ছে একের পর এক ট্রেন ও বিমান। রেলপথকে মুম্বইয়ের অন্যতম ‘লাইফলাইন’ বলা হয়। বিভিন্ন জায়গায় লাইন জলের তলায় থাকায় সে পথও এখন ধুঁকছে।
মঙ্গলবারের বৃষ্টির ফলে শহরে ছুটি ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছে প্রশাসন। বাতিল হয়েছে মুম্বই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএসসি-র পরীক্ষা। মুম্বই সংলগ্ন এলাকাতেও কাজকর্ম এক রকম বন্ধ। খুব প্রয়োজন ছাড়া লোকজনকে বাইরে বেরোতে নিষেধ করা হচ্ছে। তথ্যপ্রযুক্তি কর্মীদের অনেকে বাড়ি থেকে কাজ করছেন। আগামী ৪ ও ৫ জুলাই ঠাণে ও পালঘরে অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। বস্তুত ৩ জুলাই থেকে ৫ জুলাই বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। দিনে গড়ে ২০০ মিলিমিটার বা
তারও বেশি বৃষ্টি হতে পারে বলে পূর্বাভাস রয়েছে।
শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরের বাড়ির বাইরে এখন হাঁটুজল। বান্দ্রার কলানগরে ঠাকরেদের বাংলো ‘মাতশ্রী’র কাছে জল জমায় স্বভাবতই অস্বস্তিতে মুম্বইয়ের পুর প্রশাসনের দায়িত্বে থাকা শিবসেনা। এই নিয়ে শিবসেনা-বিজেপি-র সরকারকে বিঁধতে মাঠে নেমেছে কংগ্রেস। দলের মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালা আজ বলেছেন, ‘‘২৫ বছর ধরে উদ্ধত, দুর্নীতিগ্রস্ত এবং অযোগ্য বিজেপি-শিবসেনা সরকার বৃষ্টির মরসুমে মুম্বইকে পথে বসিয়েছে। ২১ জন মারা গেল। ওরা কি এর দায় নেবে?’’ কংগ্রেস নেতা মিলিন্দ দেওরা টুইটারে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডণবীসের উদ্দেশে লিখেছেন, ‘‘ঝড় ও বন্যা থেকে মুম্বইকে রক্ষা করে ম্যানগ্রোভ। বুলেট ট্রেনের জন্য ৫৪ হাজার ম্যানগ্রোভ ধ্বংস করা হবে। শহর ডুবে গেলে সেই ট্রেন কি মুম্বইকরদের আমদাবাদে নিয়ে যাবে?’’
উত্তর শহরতলির মালাডে পিমপ্রিপড়ায় সোমবার রাত দু’টো নাগাদ তুমুল বৃষ্টিতে একটি দেওয়াল ধসে যায়। যাতে চাপা পড়ে মারা গিয়েছেন ২১ জন। জখম হয়েছেন ৭৮ জন। এঁরা সংলগ্ন কুঁড়েঘরগুলোর বাসিন্দা। মৃতদের পরিবারের জন্য ৫ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে সরকার।
বৃহন্মুম্বই পুরসভা জানিয়েছে, উদ্ধারকারী দল মালাডে দেওয়ালের নীচে চাপা পড়ে থাকা ১৫ বছরের একটি মেয়েকে বার করে আনার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়েছিলেন। স্নিফার ডগ ও আধুনিক যন্ত্রের সাহায্য নিয়ে দমকল বাহিনী শেষ পর্যন্ত তাকে যখন বার করে, দেহে আর প্রাণ নেই। মালাডে জলের মধ্যে এসইউভি-তে আটকে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে দু’জনের। ভিলে পার্লে এলাকায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে এক ব্যক্তি এবং মুলুন্দে দেওয়াল ধসে এক নিরাপত্তা রক্ষীর মৃত্যু হয়েছে। সোমবার রাতে পুণের অম্বেগাঁওয়ে দেওয়াল ধসে ছ’জন শ্রমিক প্রাণ হারিয়েছেন, আহত হয়েছেন তিন জন। ঠাণে জেলার কল্যাণে মঙ্গলবার দেওয়াল ধসে একই ভাবে মারা গিয়েছেন আরও তিন জন। কল্যাণে দুর্গাই ফোর্টের পিছনে গত কাল রাত একটা নাগাদ উর্দু স্কুলের দেওয়াল ভেঙে পড়ে।
মুখ্যমন্ত্রী পুরসভার কন্ট্রোল রুম থেকে পরিস্থিতি সরেজমিনে খতিয়ে দেখেছেন। ফডণবীসের মন্তব্য, ‘‘ভারী বৃষ্টি নিয়ে আবহাওয়া দফতরের সতর্কতার ভিত্তিতে আজ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী দু’দিনও আমাদের সাবধানে থাকতে হবে।’’ এয়ারপোর্ট কলোনি, ভাকোলা জংশন, পোস্টাল কলোনির মতো এলাকা জলমগ্ন। মিঠি নদীর জল বাড়তে থাকায় ক্রান্তি নগর, কুরলা থেকে এক হাজারেরও বেশি মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে
জানিয়েছে প্রশাসন।
কিছু করিডর দিয়ে সেন্ট্রাল রেলওয়ে লোকাল ট্রেন চালানোর কথা ভেবেছে। সিএসএমটি-আন্ধেরি-গোরেগাঁওয়ে ট্রেন চলবে হারবার লাইন ধরে। গত কাল মাঝরাতে ট্রেনে আটকে পড়া হাজারেরও বেশি যাত্রীকে উদ্ধার করেছে সিআরপি। স্টেশনে স্টেশনে চা-বিস্কুট এবং অন্য খাবার দেওয়া হয়েছে তাঁদের। কম সংখ্যায় হলেও ওয়েস্টার্ন রেলওয়ের চার্চগেট এবং বিরারের মধ্যে ট্রেন চলছে। একে তো লাইন জলের তলায়, তার মধ্যে সিগন্যাল ব্যবস্থা কাজ না করায় অনেক ট্রেনই বাতিল করতে বাধ্য হচ্ছেন রেল কর্তৃপক্ষ। দুই লাইনেই দূরপাল্লার ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। আগাম সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy