Advertisement
১৩ নভেম্বর ২০২৪
Nilesh Mohit

‘টাকা নয়, কাজ চাই!’ রতন টাটার সাহায্য ফিরিয়ে নজর কাড়লেন ঝুপড়ির শিল্পী

এখন মাসে একটি বা দু’টি আঁকা বিক্রি হয়। কোনওটি ১৬ হাজার, তো কোনওটি আবার ৫০ হাজারেও। তবে নীলেশ বলেন, “আমি এখনও কাজ পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছি।”

রতন টাটার সঙ্গে নীলেশ মোহিত। ফাইল চিত্র।

রতন টাটার সঙ্গে নীলেশ মোহিত। ফাইল চিত্র।

সংবাদ সংস্থা
মুম্বই শেষ আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০২২ ১১:৪৮
Share: Save:

সাল ২০০৯। কাজের খোঁজে মহারাষ্ট্রের রায়গড় থেকে মুম্বইয়ে চলে এসেছিলেন। বাবা মত্ত। নিত্যদিন মায়ের সঙ্গে ঝামেলা হত। তাই মা আর বোনকে নিয়ে কোলাবার একটি ঝুপড়িতে ওঠেন নীলেশ মোহিত। বাবাকে ছেড়ে চলে আসার পর সংসার চালানোর দায়িত্ব তাঁর কাঁধে এসে পড়ে। নীলেশ তখন নবম শ্রেণির ছাত্র। কিন্তু সংসারের বোঝা টানতে গিয়ে ওখানেই পড়াশোনায় ইতি টানতে হয়েছিল।

নীলেশের মা-ও সংসার চালাতে পরিচারিকার কাজ শুরু করেন। দিনরাত খাটুনির ফলে তাঁর শরীরের উপর প্রভাব পড়তে শুরু করে। একটা সময় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। চিকিৎসকরা জানিয়ে দেন, পরিচারিকার কাজ করা যাবে না। ফলে সংসারের পুরো দায়িত্বই ছোট্ট নীলেশকে নিতে হয়। পড়াশোনা ছাড়তে হলেও নীলেশের শখ ছিল ছবি আঁকা। স্কুলের ব্ল্যাকবোর্ডে ছবি এঁকে বন্ধুদের মন জয় করেছিলেন। কখনও স্কুল কামাই করে বিভিন্ন চিত্র প্রদর্শনীতে হাজির হতেন। এক বার মুম্বইয়ের জহাঙ্গির আর্ট গ্যালারিতে বিখ্যাত শিল্পী এমএফ হুসেনের চিত্র প্রদর্শনী দেখে ছবি আঁকার প্রতি আরও টান বেড়ে যায় নীলেশের।

দিনে আংশিক ভাবে দু’জায়গায় কাজ করা শুরু করেছিলেন নীলেশ। একটি অফিসে পিওনের কাজ সেরে অন্য একটি অফিসে নিরাপত্তারক্ষীর কাজ করতেন। কয়েক জনের পরামর্শে ফের পড়াশোনা শুরু করেন। ইতিমধ্যে আগের কাজ ছেড়ে একটি হোটেলে ওয়েটারের চাকরি শুরু করেন নীলেশ। কাজের ফাঁকে ছবি আঁকতেন।

‘দৈনিক ভাস্কর’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নীলেশ বলেন, “এক দিন হোটেলে এক গ্রাহককে চা দেওয়ার পর ট্রে-তে থাকা ন্যাপকিন পেপারে ওই গ্রাহকেরই ছবি আঁকছিলাম। গ্রাহকের সামনে বসে থাকতে দেখে সুপারভাইজার ধমক দেন। কিন্তু তাঁর চোখ যখন আমার আঁকার উপর পড়ে, তিনি চমকে ওঠেন। এর পরই বলেন, তোমাকে কয়েক জন নামী ব্যক্তিদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেব। আরও ভাল ছবি আঁকতে পারবে। সেই ছবি বিক্রিও করতে পারবে।”

এখান থেকেই নীলেশের জীবন মোড় নেওয়া শুরু করে। বিভিন্ন রাজা-মহারাজা, খ্যাতনামী ব্যক্তিদের ছবি এঁকে সেগুলি বিক্রি করা শুরু করেন। তাঁদের মধ্যে রতন টাটারও বেশ কিছু ছবি এঁকেছিলেন নীলেশ। তাঁর কথায়, “রতন টাটা আমার কাছে অনুপ্রেরণা। ওঁর সঙ্গে দেখা করার জন্য ছবি নিয়ে বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থাকতাম। কিন্তু কোনও দিন সরাসরি সাক্ষাতের সুযোগ হয়নি। এক পরিচিতের সাহায্যে ২০১৮ সালে টাটার জন্মদিনে যাওয়ার সুযোগ মিলেছিল। তার আগে রতন টাটার বিশাল বড়ো একটি ছবি এঁকেছিলাম উপহার দেওয়ার জন্য।”

সাক্ষাতের পর রতন টাটা জানতে পারেন নীলেশের আঁকা এবং শখ সম্পর্কে। তখনই নীলেশ বলেছিলেন রতন টাটাকে, “আপনার যত বড় ছবি এঁকেছি, তার থেকে ছোট ঘরে আমি থাকি। ফলে ছবি আঁকলেও রাখার জায়গা থাকে না। এই কথা শুনে রতন টাটা একটি বন্ধ খামে চেক লিখে দিয়েছিলেন। সঙ্গে বলেছিলেন, এই টাকা দিয়ে মুম্বইয়ে যেন একটা বাড়ি কিনে নিই। এবং আরও বেশি করে যেন ছবি আঁকি।”

কিন্তু নীলেশ জানান, রতন টাটার দেওয়া সেই টাকা নিতে তিনি অস্বীকার করেন। তার পরিবর্তে কাজ দেওয়ার আর্জি জানিয়েছিলেন। নীলেশের কথায়, “রতন টাটাকে বলেছিলাম, যদি আপনার কিছু দিতে ইচ্ছা হয়, তা হলে আমাকে কাজ দিন। সংসার চালানো জরুরি। এই কথা শুনে টাটা স্মিত হসে বলেছিলেন, আপনার যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ পেলে ঠিক খবর দেব।”

এখন মাসে একটি বা দু’টি আঁকা বিক্রি হয়। কোনওটি ১৬ হাজার, তো কোনওটি আবার ৫০ হাজারেও। তবে নীলেশ বলেন, “আমি এখনও কাজ পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছি।”

অন্য বিষয়গুলি:

Nilesh Mohit Mumbai Slum artist Ratan Tata
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE