—ফাইল চিত্র।
কেউ দিচ্ছেন হিন্দু রাষ্ট্রের নামে জয়ধ্বনি। কেউ স্লোগান দিচ্ছেন প্যালেস্টাইনের নামে। আর তা ঘটছে লোকসভার সাংসদদের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে। বর্ষীয়ান সাংসদদের মতে, এত বিচিত্র বিষয়ে স্লোগান অতীতে অন্তত শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে শোনা যায়নি।
ডাক্তারির প্রবেশিকা পরীক্ষা নিট-এর প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে রীতিমতো অস্বস্তিতে নরেন্দ্র মোদী সরকার। আজ শপথগ্রহণে দেখা যায়, পূর্ণিয়ার নির্দল সাংসদ পাপ্পু যাদব বোতাম-খোলা শার্টের নীচে ‘রি-নিট’ লেখা টি-শার্ট পরে এসেছেন। অর্থাৎ তাঁর দাবি, নতুন করে নেওয়া হোক নিট। শপথগ্রহণ শেষে ফের নিট নেওয়ার দাবিতে স্লোগানও দেন তিনি। তাতে শাসক শিবির আপত্তি জানালে পূর্ণিয়ার ওই বাহুবলী নেতাকে রীতিমতো গলা চড়িয়ে বিজেপি সাংসদদের উদ্দেশে বলতে শোনা যায়, ‘‘ছ’বারের সাংসদ আমি। আমাকে শেখাচ্ছেন!’’
বিরোধী শিবিরে আজ রাহুল গান্ধী ছাড়াও আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন ফৈজ়াবাদের এসপি সাংসদ অবধেশ প্রসাদ। অযোধ্যার রাম মন্দির ফৈজ়াবাদ লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত। অবধেশ শপথগ্রহণের জন্য উঠে দাঁড়াতেই বিরোধী বেঞ্চের সাংসদেরা ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি দিতে থাকেন। তখন উল্টো দিকে বিজেপি সাংসদদেরা নীরব। অমেঠী কেন্দ্রে এ বার স্মৃতি ইরানিকে হারিয়ে দিয়েছেন কংগ্রেসের কিশোরীলাল শর্মা। রাহুলের পরেই শপথ নেন কিশোরীলাল। তাঁকে শপথ নিতে উঠে আসতে দেখে রাহুল নিজেই এগিয়ে গিয়ে তাঁর হাতে সংবিধান তুলে দেন। হাতে সংবিধান নিয়ে ও মাথায় গান্ধী টুপি পরে শপথ নেন কিশোরীলাল। উত্তরপ্রদেশে বিজেপির জয়ের রথ এ বার কার্যত একার হাতে রুখে দিয়েছেন এসপি নেতা অখিলেশ যাদব। তিনি শপথগ্রহণের জন্য উঠে দাঁড়াতেই গোটা বিরোধী শিবির উঠে দাঁড়িয়ে তাঁকে অভিনন্দন জানায়। হাতে সংবিধান নিয়ে শপথ নেন অখিলেশও। উত্তরপ্রদেশের বিজেপি সাংসদ জগদম্বিকা পাল ঈশ্বরের নামে শপথ নিতেই বিরোধী বেঞ্চে বসে থাকা তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় বলে ওঠেন, ‘‘আপনি তো অতীতে বামপন্থী ছিলেন। কিন্তু ঈশ্বরের নামে শপথ নিচ্ছেন!’’ সৌগতের হঠাৎ আক্রমণে খেই হারিয়ে ফেলেন জগদম্বিকা।
স্লোগানকে কেন্দ্র করে ঘিরে দফায় দফায় তরজায় জড়িয়ে পড়ে শাসক ও বিরোধী শিবির। আজ বরেলীর বিজেপি সাংসদ ছত্রপাল গঙ্গোয়ার শপথ শেষে ‘হিন্দু রাষ্ট্রের জয়’ বলে ধ্বনি তোলেন। আপত্তি জানায় বিরোধী শিবির। ভারতের মতো ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের সংসদে কী ভাবে ‘হিন্দু রাষ্ট্রের জয়’ বলা যায়, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বিরোধীরা। তাঁরা দাবি জানান, ওই মন্তব্য যেন নথিবদ্ধ না হয়।
হায়দরাবাদের এমআইএম নেতা আসাদ্দুদিন ওয়েইসি আজ শপথের শেষে ‘জয় ভীম’, ‘জয় তেলঙ্গানা’ বলার পরে ‘জয় প্যালেস্টাইন’ বলেও স্লোগান দেন। এই স্লোগান নিয়ে আপত্তি তোলেন বিজেপি সাংসদেরা। সেই সময়ে প্রোটেম স্পিকারের দায়িত্বে থাকা রাধামোহন সিংহ জানান, ওই বক্তব্য নথিবদ্ধ করা হবে না। পরে সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী কিরেন রিজিজু বলেন, ‘‘প্যালেস্টাইন শত্রু রাষ্ট্র নয়। তাই ওই দেশের নামে জয়ধ্বনি দেওয়া নিয়মভঙ্গের মধ্যে পড়ে কি না, তা খতিয়ে দেখা হবে।’’ শাসক-বিরোধীদের যুযুধান চেহারা দেখে দিনের শেষে প্রোটেম স্পিকার ভর্তৃহরি মহতাবের মন্তব্য, ‘‘মনে হচ্ছে সাংসদেরা এখনও নির্বাচনের প্রভাব থেকে মুক্ত হতে পারেননি।’’
ইন্ডিয়া-র সাংসদদের ‘মণিপুর-মণিপুর’ স্লোগানের মধ্যে শপথ নেন সংঘর্ষ-বিধ্বস্ত রাজ্যটি থেকে জিতে আসা দুই কংগ্রেস সাংসদ, আনগোমচা বিমল আকৈজাম এবং অ্যালফ্রেড কাংগাম এস আর্থার। জেএনইউয়ের অধ্যাপক বিমল সংবিধান হাতে নিয়ে মেইতেই ভাষায় শপথ নেন। আর্থার ইংরেজিতে শপথবাক্য পাঠ করার পরে হিন্দিতে বলেন, ‘‘মণিপুরে ন্যায় দিন, দেশ বাঁচান।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy