পর্বতারোহী পিয়ালি বসাক। ফাইল চিত্র।
পায়ের চার আঙুলে ফ্রস্টবাইট। আর মাথায় বিপুল ৩৫ লক্ষ টাকার বোঝা। এই অবস্থায় বৃহস্পতিবার নেপাল থেকে কলকাতাগামী উড়ানে উঠতেই পারলেন না পর্বতারোহী পিয়ালি বসাক! ফলে মাকালুর রুদ্ধশ্বাস অভিযান শেষে এ দিন ফেরা হয়নি পিয়ালির। শনিবার তাঁর শহরে ফেরার কথা।
গত ১৭ মে মাকালুর সামিট ছুঁয়ে নেমে আসার সময়ে তাঁকে উদ্ধার করে নীচে নামান শেরপারা। পিয়ালির দাবি, সে সময়েই প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এদিক-ওদিক হয়ে যায়। এ দিন সকালে রুকস্যাক তন্নতন্ন করে খুঁজেও ভোটার-আধার কার্ড, প্যান কার্ড এমনকি পাসপোর্টটিও পাচ্ছিলেন না পিয়ালি। ফলে দেরিতে বিমানবন্দরে পৌঁছলেও নথি না দেখাতে পারায় বিমান ধরতে পারেননি। পিয়ালির কথায়, ‘‘ভেবেছিলাম, মোবাইলে পাসপোর্ট, নথিপত্রের ছবি দেখালে ছেড়ে দেবে। যতক্ষণে রুকস্যাক ঘেঁটে পাসপোর্ট বেরোল, ততক্ষণে বোর্ডিং বন্ধ। শত অনুরোধেও আর বিমানে উঠতে দেয়নি। আবার টিকিট কাটতে হবে।’’
এ দিকে, মাকালু অভিযানের পরে পিয়ালির পায়ের আঙুলে ফ্রস্টবাইট রয়েছে। নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালেও ভর্তি ছিলেন। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, আগামী ছ’মাস আঙুলের যত্ন নিতে হবে তাঁকে। তবে এর চেয়েও পিয়ালির বড় মাথাব্যথা অভিযানের বিপুল খরচ। মাকালু অভিযান, হেলি উদ্ধার, হাসপাতালে চিকিৎসার খরচ— প্রায় সবই বাকি। এ জন্য ৩২ লক্ষ ২৭ হাজার টাকার বিল ধরিয়েছে আয়োজক সংস্থা ‘পায়োনিয়ার অ্যাডভেঞ্চার’। হাসপাতালের খরচ প্রায় ৩ লক্ষ।
এ দিন সকালে ওই সংস্থার কর্ণধার পাসাং শেরপা কাঠমান্ডু থেকে বলেন, ‘‘পিয়ালির মাকালু অভিযানের প্রায় পুরো টাকাটাই বাকি। ওকে তো হাসপাতাল থেকেও ছাড়ছিল না! আমাদের শেরপাদেরও পরিবার রয়েছে, বাচ্চাকাচ্চা রয়েছে। ওদের কষ্টের উপার্জনের টাকা না দিতে পারলে ওদের সংসারই বা চলবে কী ভাবে? বাংলার মানুষ, বাংলার সরকার যদি পিয়ালিকে সাহায্য করেন তা হলে আমাদের শেরপারাও প্রাপ্য পেতে পারে।’’
পাসাং জানিয়েছেন, আগামী এক মাসের মধ্যে বাকি টাকা চুকিয়ে দেওয়ার শর্ত দিয়েছেন পিয়ালিকে। যদিও কোথা থেকে সেই অর্থ আসবে, জানেন না পিয়ালিও। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে মাত্র ১০ হাজার টাকা নিয়ে রওনা হয়েছিলেন প্রাথমিক স্কুলশিক্ষিকা পিয়ালি। বাড়িতে অসুস্থ শয্যাশায়ী বাবা, গৃহবধূ মা।
ছোট বোন তমালি জানাচ্ছেন, জোড়া অভিযান শুরুর আগে পিয়ালিকে সাড়ে সাত লক্ষ টাকা দেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বঢরা। তার পরে অন্নপূর্ণার জন্য খরচের প্রায় পুরোটাই দেওয়া হয়ে গিয়েছে। তবে মাকালুর জন্য মাত্র ৩ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছে (ক্রাউড ফান্ডিং করে)। বাকি টাকার সঙ্গে অন্নপূর্ণার শেরপার ‘সামিট বোনাস’ যুক্ত করে বিল দাঁড়িয়েছে ৩২ লক্ষ ২৭ হাজার। সঙ্গে হাসপাতালের বিল প্রায় ৩ লক্ষ।
ছ’টি আট হাজারি শৃঙ্গ ছুঁলেও এখনও স্পনসরেরা সদয় হননি পিয়ালির প্রতি। এভারেস্ট ছোঁয়ার পরে সরকার প্রদত্ত ৭ লক্ষ টাকাও এখনও পাননি পিয়ালি।
এ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস বলছেন, ‘‘সরকারি অনুদান পেতে হলে সরকারি নিয়মনীতি মেনে চলতে হয়। ছন্দা গায়েনকে উদ্ধারের সময়ে সরকারের ১ কোটি টাকা খরচ হয়েছিল। তার পরেই স্থির হয়, কেউ অভিযানে যাওয়ার আগে তাঁর মেডিক্যাল ইনশিওরেন্স, সরকারি হাসপাতাল থেকে মেডিক্যাল ফিটনেস-সহ প্রয়োজনীয় নথি জমা দিতে হবে। পিয়ালিকে এই সব নথি চেয়ে মেল করা হলেও জবাব আসেনি। কেউ সরকারি নিয়ম, বিধিনিষেধ না মানলে তো সরকার তার দায় ও দায়িত্ব কী করে নেবে? তবে পিয়ালি আর্থিক সাহায্যের আবেদন করলে এ নিয়ে আলোচনা করতে পারি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy