Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Kerala

কূটনৈতিক চ্যানেলেই পাচার ২৩০ কেজি সোনা! প্রায় নিশ্চিত গোয়েন্দারা

আমিরশাহির উপ-দূতাবাসের এক কর্মীর দেশে ফিরে যাওয়া ঘিরে কেরলে সোনা পাচার চক্রের তদন্তে নতুন মোড় নিয়েছে।

কেরলে সোনা পাচার কাণ্ডে ধৃত স্বপ্না সুরেশ। —ফাইল চিত্র

কেরলে সোনা পাচার কাণ্ডে ধৃত স্বপ্না সুরেশ। —ফাইল চিত্র

সংবাদ সংস্থা
তিরুঅনন্তপুরম শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০২০ ১৫:৪৬
Share: Save:

কূটনৈতিক রক্ষাকবচের আড়ালে ঠিক কত কেজি সোনা পাচার হয়েছে? সংযুক্ত আরব আমিরাশাহি উপ-দূতাবাসের মাধ্যমে কেরলের তিরুঅনন্তপুরমে পাচার হওয়া সোনার পরিমাণ কি শুধুই ৩০ কেজি? তদন্তকারীদের সূত্রে খবর, পরিমাণটা কয়েক গুণ বেশি। প্রাথমিক ভাবে তদন্তকারীরা প্রায় নিশ্চিত গত এক বছরে অন্তত ২৩০ কেজি সোনা পাচার হয়েছে এই কূটনৈতিক চ্যানেলে। সেই সোনা উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।

এই তদন্ত প্রক্রিয়া চলাকালীনই আমিরশাহির উপ-দূতাবাসের এক কর্মীর দেশে ফিরে যাওয়া ঘিরে কেরলে সোনা পাচার চক্রের তদন্তে নতুন মোড় নিয়েছে। যদিও একটি সূত্রে খবর, ওই ব্যক্তি দুবাইয়ে গ্রেফতার হয়েছেন। তাঁকে শীঘ্রই ভারতে প্রত্যর্পণ করা হতে পারে। পাচারকাণ্ডে ধৃত স্বপ্না সুরেশের মোবাইলের কল লিস্ট থেকে আবার কেরলের এক মন্ত্রীর নামও উঠে এসেছে। ওই মন্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে বলে তদন্তকারীদের সূত্রে খবর।

তদন্তকারীর অফিসারদের দাবি, দীর্ঘ দিন ধরেই এই পাচার চক্র চলছিল। অন্তত ১৩টি এই রকম কনসাইনমেন্ট আমিরশাহী থেকে ভারতে এসেছে এবং কূটনৈতিক রক্ষাকবচ থাকায় সেগুলি চেকিং হয়নি। কয়েকটি ব্যাগে ৭০ কেজি পর্যন্ত সোনা পাচার হয়েছে বলে দাবি তদন্তের সঙ্গে যুক্ত এক আধিকারিকের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই আধিকারিক বলেছেন, ‘‘গত এক বছরে অন্তত ১৩টি এই রকম ব্যাগ এসেছে ভারতে এবং কূটনৈতিক রক্ষাকবচ থাকায় সেগুলি বিমানবন্দরে কোনও চেকিং হয়নি। তার মধ্যে কয়েকটির ওজন ৭০ কেজি পর্যন্ত ছিল।’’

আরও পড়ুন: ভারত-চিন বিরোধের গোড়ায় তিব্বত, তার পরে জল গড়িয়েছে নানা দিকে

তদন্তকারীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, শুধুমাত্র ২৫ জুন থেকে ৩ জুলাইয়ের মধ্যেই তিনটি ব্যাগ এসেছে এই কূটনৈতিক চ্যানেলে। সেগুলি কখনও আমিরশাহির ডেপুটি কনসাল জেনারেলের নামে এসেছে, কখনও বা ওই অফিসের কোনও আধিকারিকের নামে। ফলে ওই ব্যাগগুলির কূটনৈতিক রক্ষাকবচ ছিল। সেই কারণেই ৩০ কেজি সোনা-সহ ধরা পড়া শেষ ব্যাগটি খোলার আগে বিদেশমন্ত্রকের অনুমতিও নেওয়া হয়েছিল। যে সব আধিকারিকের নামে ওই ব্যাগগুলি এসেছিল, তাঁদেরও জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছেন তদন্তাকীর অফিসাররা। খোদ কনসাল জেনারেলকেও একাধিক বার ডাকা হয়েছে তদন্তের জন্য। অন্য দিকে ধৃত দুই অভিযুক্ত সরিত ও স্বপ্না সুরেশকে নিয়ে রবিবার একাধিক জায়গায় তল্লাশি চালিয়েছেন একটি তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকরা।

সংযুক্ত আরব আমিরশাহির দূতাবাসের মাধ্যমে সম্প্রতি ৩০ কেজি সোনা পাচারের ঘটনা সামনে আসতেই তোলপাড় শুরু হয়েছে কেরলের রাজ্য রাজনীতিতে। পাচারের ঘটনায় নাম উঠে আসে মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নের দফতরের এক আধিকারিকের। সরিত নামে ওই আধিকারিককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এম শিবশঙ্কর নামে মুখ্যমন্ত্রীর প্রাক্তন প্রধান সচিবকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি একটি সংস্থার এক প্রভাবশালী মহিলা কর্মী স্বপ্না সুরেশ গ্রেফতার হয়েছেন। তার পরেই তদন্তে নেমেছে কেন্দ্রীয় একাধিক তদন্তকারী সংস্থা। দু’জনই আপাতত পুলিশি হেফাজতে রয়েছেন।

আরও পড়ুন: ধর্ষণ-খুনের হুমকিতে আর চুপ নয়, থানায় গেলেন সুশান্তের বান্ধবী রিয়া

এই সোনা পাচার চক্রে এখনও পর্যন্ত জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ গ্রেফতার করেছে মোট ১৩ জনকে। তাঁরা জানিয়েছন, তদন্তে নেমে যাঁদের নাম সন্দেহের তালিকায় উঠে এসেছে, তাদের সবাইকেই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হবে। অন্য দিকে ফয়সাল ফরিদ নামে আমিরশাহি দূতাবাসের ওই কর্মী কী ভাবে দেশে ফিরে গেল তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। দূতাবাস সূত্রে খবর, গত সপ্তাহেই দিল্লি হয়ে আমিরশাহিতে ফিরে গিয়েছেন ওই আধিকারিক। তবে সম্প্রতি গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, ফয়সাল ফরিদ দুবাইয়ে গ্রেফতার হয়েছেন। তাঁকে শীঘ্রই ভারতে প্রত্যর্পণ করা হবে বলেও গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন। এক তদন্তকারী অফিসার বলেন,‘‘এই সিন্ডিকেটটি কূটনৈতিক রক্ষাকবচের আড়ালে পাচার চক্র চালাচ্ছিল। তাই দূতাবাসের যে কর্মী দেশে ফিরে গিয়েছেন, এই তদন্তের ক্ষেত্রে তিনি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিলেন।’’ ফয়সাল ফরিদের বিরুদ্ধে আগেই ব্লু কর্নার নোটিস জারি করার জন্য ইন্টারপোলকে আর্জি জানিয়েছিল জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)।

কিন্তু সেই সব পাচার হওয়া সোনা কোথায় গেল, সেই বিষয়ে তদন্ত চালাচ্ছেন গোয়েন্দারা। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে চলছে চিরুনি তল্লাশি। রবিবারও ধৃত এই দুই অভিযুক্তকে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালিয়েছেন গোয়েন্দারা। গত কয়েক দিনে স্বপ্না সুরেশের দু'টি ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালিয়েছেন গোয়েন্দারা। এ ছাড়াও বহু জায়গায় অভিযান চালানো হয়েছে। শনিবার কোঝিকোড়ের একটি সোনার দোকান থেকে ১০ কেজি সোনা উদ্ধার হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তাঁরা।

অন্য বিষয়গুলি:

Kerala Thiruvananthapuram Kerala Gold Smuggling
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy