ফাইল ছবি
সবে শুনানি শেষ হয়েছে। বিচারক তখনও সিদ্ধান্ত জানাননি। তার আগেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের অধীনস্থ দিল্লি পুলিশ সাংবাদিকদের জানিয়ে দিল, মহম্মদ জ়ুবেরের জামিনের আবেদন খারিজ করেছেন বিচারক। তাঁর ১৪ দিনের বিচারবিভাগীয় হেফাজত হয়েছে। পুলিশকর্তার রায় সংক্রান্ত মন্তব্য ঘিরে বিতর্কের কিছু ক্ষণের মধ্যেই আদালত একই রায় ঘোষণা করল। এর পরেই পুলিশের মন্তব্য ও আদালতের রায়ের যোগসূত্র টেনে অনেকেই অভিযোগ করছেন, জ়ুবের মামলায় ‘প্রভাবশালী’ যোগ রয়েছে।
এই মামলায় দিল্লি পুলিশের অতিরিক্ত তৎপরতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। অনেকের অভিযোগ, নূপুর শর্মার বিরুদ্ধে অভিযোগে সক্রিয়তা দেখা যায়নি। তার জেরে গত কাল দিল্লি পুলিশকে কটাক্ষও করেছে সুপ্রিম কোর্ট। সেই পুলিশই জ়ুবের মামলায় আদালতের থেকেও অধিক ‘তৎপর’।
জ়ুবেরের আইনজীবী সৌতিক বন্দ্যোপাধ্যায় একে কলঙ্কজনক আখ্যা দিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, বিচারকের রায়ের অপেক্ষা না করেই পুলিশ সংবাদমাধ্যমে রায় ঘোষণা করে দিল!
চার বছর পুরনো একটি টুইটে আপত্তিকর বিষয়বস্তু রয়েছে, এই অভিযোগ তুলে গত ২৭ জুন অল্ট নিউজ়ের প্রতিষ্ঠাতা জ়ুবেরকে গ্রেফতার করা হয়। গত পাঁচ দিন ধরেই পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন ওই সাংবাদিক। দিল্লির পাটিয়ালা হাউস কোর্টে জামিনের আবেদন জানিয়েছিলেন জ়ুবের। আজ আদালতে পেশ করা হলে উভয়পক্ষই নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরে আদালতে। শুনানি শেষ হলেও তখনও কোনও সিদ্ধান্ত জানাননি বিচারক। তার আগেই পুলিশের ডেপুটি কমিশনার সাংবাদিকদের জানিয়ে দেন, জ়ুবেরের জামিন খারিজ করেছে আদালত। তাঁকে ১৪ দিনের জন্য বিচারবিভাগীয় হেফাজতে পাঠানো হয়েছে। বিতর্ক তুঙ্গে উঠতেই ডিসিপি কেপিএস মলহোত্রার সাফাই, এক সহকর্মীর থেকে ভুল তথ্য শুনেছিলেন।
পরে অবশ্য আদালতের রায় ঘোষণার সময়ে দেখা যায়, ভুল নয়, মলহোত্র যা জানিয়েছিলেন, বিচারকের রায় তার সঙ্গে হুবহু মিলে গিয়েছে। জামিনের আবেদন খারিজ করে জ়ুবেরকে ১৪ দিনের বিচারবিভাগীয় হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। আর তা নিয়ে ফের প্রশ্ন ওঠে, রায় ঘোষণার আগে বিচারকের সিদ্ধান্ত কী ভাবে জানলেন ডিসিপি?
আজ আদালতে পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, জ়ুবেরের বিরুদ্ধে ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত, অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র, তথ্যপ্রমাণ নষ্টের পাশাপাশি বিদেশি অনুদান (নিয়ন্ত্রণ) আইন বা এফসিআরএ-র বিভিন্ন ধারায় মামলাও যুক্ত করা হয়েছে। আর্থিক নয়ছয়ের অভিযোগে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-ও মামলা রুজু করতে পারে জ়ুবেরের বিরুদ্ধে।
আজ দিল্লি পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, সোশ্যাল মিডিয়া বিশ্লেষণ করে দেখা গিয়েছে, গ্রেফতারির পরে যে সমস্ত টুইটার হ্যান্ডল থেকে জ়ুবেরকে সমর্থন করা হয়েছে, তার অধিকাংশই পাকিস্তান এবং মধ্য এশিয়ার বিভিন্ন দেশের (সংযুক্ত আরব আমিরশাহি,বাহরাইন, কুয়েত)।
এর পাশাপাশি পুলিশ জানিয়েছে, রেজ়রপে পেমেন্ট গেটওয়ের মাধ্যমে যে সমস্ত লেনদেন হয়েছে, তা বিশ্লেষণ করে দেখা গিয়েছে, ফোন নম্বর এবং আইপি অ্যাড্রেস অধিকাংশই ভারতের বাইরের। এর মধ্যে রয়েছে ব্যাঙ্কক, মানামা, নর্থ হল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, ভিক্টোরিয়া, নিউ ইয়র্ক, ইংল্যান্ড, রিয়াধ। এ ছাড়া শারজা, স্টকহলম, আইচি, আবুধাবি, কানসাস, নিউ জার্সি, ওয়াশিংটন ডিসি, অন্টারিয়ো, ক্যালিফর্নিয়া, টেক্সাস, বার্ন, দুবাই, স্কটল্যান্ড, সংযুক্ত আরব আমিরশাহির মধ্য, পশ্চিম ও পূর্ব প্রদেশ।
অল্ট নিউজ়ের নিয়ন্ত্রক সংস্থা প্রভডা মিডিয়া মোট ২ লক্ষ ৩১ হাজার ৯৩৩ টাকা অনুদান পেয়েছিল।
প্রসঙ্গত গত ২০ জুন দিল্লি পুলিশের স্পেশাল সেলের আইএফএসও ইউনিটের এক অফিসার জ়ুবেরের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানান। তার ভিত্তিতেই গ্রেফতার করা হয় ওই সাংবাদিককে।
পুলিশের অভিযোগ, তদন্তে সহযোগিতা করছেন না জ়ুবের। বহু প্রশ্নের সদুত্তর না দিয়ে এড়িয়ে যাওয়ার অভিযোগ তুলেছে পুলিশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy