Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪

আফগানিস্তান নিয়ে ট্রাম্পকে বলবেন মোদী

স্বাভাবিক ভাবেই কাবুল নিয়ে আমেরিকার ভিতরের এই অভ্যন্তরীণ চাপ মোদীর হাত কিছুটা শক্ত করছে বলেই মনে করছেন কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। ভারতের উদ্বেগের কারণ, পাকিস্তান যদি ফের আফগানিস্তান-নীতির কেন্দ্রে চলে আসে, তা হলে তার প্রভাব সীমান্ত ছাড়িয়ে গোটা অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়বে। সে দেশে শান্তি প্রক্রিয়া ফেরানোর নাম করে আফ-পাক তালিবান সংযোগ বাড়বে, জিহাদের নিশানা তীব্র করা হবে ভারতের বিরুদ্ধেও।

অগ্নি রায়
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০১৭ ০৩:৫৮
Share: Save:

মার্কিন ‘উদাসীনতায়’ ফের রণক্ষেত্র হয়ে উঠছে আফগানিস্তান। সেই সুযোগে তালিবানের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের সূত্রপথ খুলছে রাশিয়া। আর এই সব কিছুর জেরে গোটা অঞ্চলে ফের কর্তৃত্ব ফলাতে শুরু করেছে পাকিস্তান।

বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের খবর, এই বিষয়ে একটি সবিস্তার রিপোর্ট তৈরি করতে সংশ্লিষ্ট দফতর এবং র’কে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এ বিষয়ে প্রামাণ্য তথ্য পকেটে নিয়েই আগামী ২৪ তারিখ ওয়াশিংটনগামী উড়ানে উঠতে চাইছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর লক্ষ্য, ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে প্রথম সাক্ষাতেই (২৬ জুন) পাকিস্তানের তালিবান-সংযোগের বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ স্পষ্ট করা। পাশাপাশি, গোটা অঞ্চল তথা আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ রোধে আরও বেশি করে আমেরিকা আফগানিস্তানে নজর দিক, এমন অনুরোধও মার্কিন প্রশাসনকে জানাবে ভারত। ভারতে আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসের সঙ্গে আফ-পাক তালিবানের বাড়বাড়ন্তের যোগসূত্রটিও আসন্ন সফরে গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরতে চাইছেন ভারতীয় শীর্ষ কর্তারা।

তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে মোদীর মার্কিন সফরের ঠিক আগে, গতকাল আমেরিকার প্রতিরক্ষা সচিব জেমস ম্যাটিস কার্যত স্বীকার করে নিয়েছেন আফগানিস্তানে ১৬ বছর ধরে লড়াই করেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেননি তাঁরা। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা আফগানিস্তানে জিততে পারিনি। পরিস্থিতি শুধরোতে হবে।’’ মার্কিন কংগ্রেসের মধ্যেও আফগানিস্তান নীতি নিয়ে প্রবল সমালোচনার শুরু হয়েছে। বলা হচ্ছে, ট্রাম্প প্রশাসনের ৬ মাস হয়ে গেল কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোনও নতুন কৌশল তৈরি করে উঠতে পারা গেল না।

স্বাভাবিক ভাবেই কাবুল নিয়ে আমেরিকার ভিতরের এই অভ্যন্তরীণ চাপ মোদীর হাত কিছুটা শক্ত করছে বলেই মনে করছেন কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। ভারতের উদ্বেগের কারণ, পাকিস্তান যদি ফের আফগানিস্তান-নীতির কেন্দ্রে চলে আসে, তা হলে তার প্রভাব সীমান্ত ছাড়িয়ে গোটা অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়বে। সে দেশে শান্তি প্রক্রিয়া ফেরানোর নাম করে আফ-পাক তালিবান সংযোগ বাড়বে, জিহাদের নিশানা তীব্র করা হবে ভারতের বিরুদ্ধেও।

এই মুহূর্তে নামমাত্র মার্কিন সেনার (সাড়ে আট হাজার) উপস্থিতি রয়েছে আফগানিস্তানে। এটা স্পষ্ট যে ট্রাম্প প্রশাসনের লক্ষ্যে এই মুহূর্তে রয়েছে পশ্চিম এশিয়া এবং আইএস সন্ত্রাসের মোকাবিলা, কাবুল নয়। তবে আফগানিস্তানের পার্বত্য এলাকায় তালিবানের সঙ্গে ইসলামিক স্টেটের জোর সংঘর্ষ চলছে। তোরা বোরার মতো তালিবান ঘাঁটির অনেকটাই নিজেদের কবলে নিয়ে নিতে পেরেছে আইএস। এই পরিস্থিতিতে শুধু তালিবান দমন নয়, পাক-আফগান অঞ্চলে সামগ্রিক ভাবে সন্ত্রাস দমন করতে নতুন ভাবে ভাবনা-চিন্তা করতে হবে ট্রাম্প প্রশাসনকে।

এ দিকে, রাশিয়া-চিন-পাকিস্তান একটি নতুন অক্ষ গড়া হচ্ছে আফগানিস্তানে। সম্প্রতি রাশিয়া স্বীকারও করেছে যে বেজিং এবং ইসলামাবাদকে সঙ্গে নিয়ে ইতিমধ্যেই তারা তালিবানের সঙ্গে কথাবার্তা শুরু করে দিয়েছে। আমেরিকা অথবা ন্যাটো যে আলোচনার ধারেকাছেও নেই। বিষয়টি নিয়ে আফগানিস্তান সরকার যদিও কিছুটা আপত্তি তুলে জানিয়েছে, এই শান্তি-আলোচনায় আঞ্চলিক রাষ্ট্রগুলোকেও (ভারত, ইরান) সামিল করা দরকার। কিন্তু সেই আপত্তিকে আমল দেওয়া হচ্ছে না। কূটনৈতিক সূত্র জানাচ্ছে, আফগানিস্তানে দুর্বল সরকারি নেতৃত্ব (সরকারের শরিক দলনেতা আবদুল্লা আবদুল্লা-ই প্রকাশ্যে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেছেন প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানির বিরুদ্ধে!) এই মুহূর্তে সে দেশে একের পর এক ঘটে যাওয়া সন্ত্রাসের তাণ্ডব বন্ধ করার মতো পরিস্থিতিতে নেই। গত মাসের ৩১ তারিখ কাবুলে ফিদাইন আক্রমণে নিহত হয়েছেন ১৫০ জন। তার ঠিক এক সপ্তাহ পর কাবুলের ভারতীয় দূতাবাস লক্ষ করে রকেট ছোড়া হয়েছে। এই সব ঘটনার পিছনে পাকিস্তানের মদতপ্রাপ্ত তালিবানের হাত রয়েছে, এই আশঙ্কার কথা মার্কিন প্রশাসনকে জানাবে ভারত।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy