‘ম্যান ভার্সাস ওয়াইল্ড’-এর সেই বহুবিজ্ঞাপিত পর্ব। ছবি: এএফপি।
উত্তরাখণ্ডের জিম করবেট জাতীয় উদ্যানে নরেন্দ্র মোদী যখন শুটিং করছিলেন, তখনই হামলা হয়েছিল পুলওয়ামায়। তা নিয়ে বিতর্ক কম হয়নি। আর আজ, একটি চ্যানেলে যখন দেখানো হল ‘ম্যান ভার্সাস ওয়াইল্ড’-এর সেই বহুবিজ্ঞাপিত পর্ব, তখন জম্মু-কাশ্মীর নিয়ে উদ্বেগে তাঁর সরকার। এবং বাকি দেশ, আজ রাত ৯টা থেকে টিভির পর্দায় এক ঘণ্টা চোখ রাখলেও বাদ ছিল উপত্যকা। কারণ, সেখানে বন্ধ টেলিভিশন সম্প্রচার।
কী দেখা গেল ব্রিটেনের সেনাবাহিনীর প্রাক্তন সদস্য বেয়ার গ্রিলস এবং প্রধানমন্ত্রী মোদীর ‘শো’-এ? সোশ্যাল মিডিয়ায় কেউ কেউ যেটিকে বলেছেন ‘বন কি বাত’! দেখা গেল, হেলিকপ্টার থেকে নেমে গ্রিলসের (তিনি তত ক্ষণে হাতির শুকনো মলের গন্ধ শুঁকে নিয়েছেন) সঙ্গে হাঁটতে হাঁটতে, গল্প করতে করতে মোদী এগোলেন জঙ্গলের পথ ধরে। নদী পেরোলেন বাঁশ, কাঠকুটো আর প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি ভেলায় চেপে। নদী পেরিয়ে, সামান্য চা সেবন। গল্পগুজব এবং নিমপাতা নিয়ে চর্চার পরে বেয়ার প্রধানমন্ত্রীকে তুলে দিলেন ‘সিক্রেট সার্ভিস’-এর লোকজনের হাতে। বেয়ার কিছু ক্ষণ পরে পরই বাঘের ভয়, বাঘের ভয় বলে ভয়ঙ্কর রোমাঞ্চকর পরিবেশ তৈরি করার চেষ্টা চালিয়েছেন বটে। তবে বুঝতে কারও অসুবিধে হয়নি যে, গোটা সফরে ওই সিক্রেট সার্ভিসের লোকজনই ছিলেন সফরসঙ্গী। তবে ক্যামেরার ফ্রেমের বাইরে।
প্রধানমন্ত্রী অবশ্য অকুতোভয়। বেয়ার সাহেব যতই বলুন বাঘের হাত থেকে প্রধানমন্ত্রীকে বাঁচানোই তাঁর চিন্তা, মোদী শুনিয়ে দিয়েছেন, ছোটবেলায় বাড়ির কাছের হ্রদ থেকে কুমিরছানা ধরে আনার গল্প। বলেছেন, ‘‘জীবনের সব কিছুর মধ্যেই ভাল কিছু আছে বলে মনে করি। তাই যা-ই ঘটুক, নার্ভাসনেস কখনও প্রকাশ পায় না।’’ বেয়ার যখন হাতে বল্লম ধরিয়ে দিয়েছেন বাঘ এলে কাজ লাগবে বলে, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘যে সংস্কৃতিতে বড় হয়েছি, কাউকে মারতে পারব না।’’ এ কথা শুনে বেয়ার যখন বল্লমটি ফেরত নিতে চেয়েছেন, মোদী বলেছেন, ‘‘আমি আপনার হয়ে এটা নিজের হাতেই রাখছি।’’
‘শো’-এর সম্প্রচার শেষ হতে না হতেই মোদীর সেনাপতি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের টুইট, ‘‘সমৃদ্ধ বন্যপ্রাণের সঙ্গে সহাবস্থান, তাদের সুরক্ষা এবং প্রকৃতির সংরক্ষণে ভারতীয় ঐতিহ্যের কথা বিশ্বের সামনে তুলে ধরলেন প্রধানমন্ত্রী। গর্বের মুহূর্ত।’’
যদিও সব দেখেশুনে বন্যপ্রাণ সংরক্ষণে পদ্মশ্রী, প্রজেক্ট টাইগারের প্রাক্তন অধিকর্তা প্রশান্তকুমার সেন বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর এই অনুষ্ঠান নিছকই পর্যটনের প্রচার। এর সঙ্গে বন, বন্যপ্রাণ সংরক্ষণের সম্পর্ক আছে বলে মনে হয় না।’’ আর বাঘ বিশেষজ্ঞ বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরীর মন্তব্য, ‘‘এর সঙ্গে না বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ, না অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজম, কোনও কিছুরই স্পষ্ট সংযোগ আছে বলে মনে হল না। লোকলস্কর নিয়ে হেলিকপ্টারে উড়ে গিয়ে বাঘের দেশে বনের নির্বিঘ্নতাই ক্ষুণ্ণ হল খানিক।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy