আলোচনা: সমাজকর্মীদের গ্রেফতারির প্রতিবাদে সাংবাদিক বৈঠকের আগে অরুণা রায়, অরুন্ধতী রায় এবং জিগ্নেশ মেবাণী। নয়াদিল্লিতে। ছবি: এপি।
ভিড়ে ঠাসা দিল্লির প্রেস ক্লাবে ছুড়ে দেওয়া হল প্রশ্নটা— ‘‘হাত তুলে বলুন, এখানে কে কে শহুরে মাওবাদী?’’ হাত তুললেন সাহিত্যিক অরুন্ধতী রায়, হাত তুললেন গুজরাতের দলিত বিধায়ক জিগ্নেশ মেবাণী। হাত তুলল ছাত্র-ছাত্রী, আইনজীবী, সমাজকর্মী, সাংবাদিকদের ভিড়টাও।
প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার ষড়যন্ত্র ও মাওবাদীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার অভিযোগে পাঁচ সমাজকর্মীকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে প্রেস ক্লাবে আজ সাংবাদিক বৈঠক ডেকেছিলেন অরুন্ধতী, জিগ্নেশ, আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ, সমাজকর্মী অরুণা রায়-রা। সেখানেই আজ তাঁরা অভিযোগ করলেন, ভোটের মুখে নিজেদের যাবতীয় ব্যর্থতা থেকে নজর ঘোরাতে ‘ডাইভার্ট অ্যান্ড রুল’ নীতি নিয়ে চলছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। এক ধাপ এগিয়ে জিগ্নেশের দাবি, মোদী জমানার গুজরাতের মতোই হত্যার ষড়যন্ত্রের গল্প ফেঁদে সহানুভূতি উস্কে দেওয়ার ছক কষছে বিজেপি।
ধৃত সমাজকর্মীদের এবং তাঁদের প্রতি সহানুভূতিশীলদের ‘শহুরে মাওবাদী’ বা ‘আরবান নকশাল’ তকমা দিচ্ছেন কেউ কেউ। বুকার-জয়ী সাহিত্যিক আজ তাঁর বক্তৃতার শুরুতেই বলেন, ‘‘আমি অরুন্ধতী রায় এবং হ্যাশট্যাগ-মিটু-আরবান নকশাল।’’ তাঁর মতে, কয়েক জন সমাজকর্মীকে গ্রেফতার করে
আসলে লক্ষ লক্ষ মানুষকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে সরকার।
রাফাল দুর্নীতি, নোট বাতিল, জিএসটি, বেকারত্ব, দলিত ও সংখ্যালঘুদের উপর হামলা, কৃষকদের অসন্তোষ, গৌরী লঙ্কেশের খুনের ঘটনায় হিন্দু সংগঠন সনাতন সংস্থার দিকে আঙুল ওঠা— মোদী সরকারের বিরুদ্ধে অসন্তোষের কারণ যথেষ্টই। অরুন্ধতীর কথায়, ‘‘বিজেপি ও প্রধানমন্ত্রীর জনপ্রিয়তা যে ‘বিপজ্জনক গতিতে’ নামছে, বিভিন্ন সমীক্ষাতেই তা স্পষ্ট। পাঁচ সমাজকর্মীকে গ্রেফতার করলে যে প্রতিক্রিয়া হবে, সরকার তা জানত। তারা চেয়েছিল, এটা হোক।’’
গত জানুয়ারিতে মহারাষ্ট্রের ভীমা-কোরেগাঁওতে দলিত বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান-পরবর্তী হিংসার তদন্তের সূত্রেই শুরু হয়েছিল ধড়পাকড়। দলিতদের সেই অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন জিগ্নেশ। তিনি বলেন, ‘‘এই গ্রেফতারের পিছনে তিনটি বিষয়ের মিশ্রণ দেখছি। ফ্যাসিবাদ, জরুরি অবস্থা এবং গুজরাত মডেল।’’
কেন গুজরাত মডেল? রাজস্থানে ভোটের প্রচারের ফাঁকে দিল্লিতে আসা জিগ্নেশের ব্যাখ্যা, ‘‘গুজরাতের মতো এখানেও আন্দোলনকারীদের উপরে হামলা করেছে রাষ্ট্র। আসল উদ্দেশ্য, মোদীর জন্য সহানুভূতি জাগিয়ে তোলা। প্রতি বছরই কোনও না কোনও জেহাদি মোদীজিকে ‘খুনের’ জন্য গুজরাতে আসত। ভুয়ো সংঘর্ষে সে মারা যেত। মোদী এবং অমিত শাহের নির্দেশেই এ বারের গল্পটা সাজিয়েছে মহারাষ্ট্র পুলিশ।’’
রাহুল গাঁধীর সুরেই অরুন্ধতীর যুক্তি, ‘‘নোট বাতিলে আর্থিক বৃদ্ধির হার ১.৫ শতাংশ কমেছে। ফলে ১৫ লক্ষ লোক চাকরি হারিয়েছেন। আর বিজেপি সব থেকে ধনী দল হয়েছে। নীরব মোদী-বিজয় মাল্যেরা টাকা লুঠ করে পালিয়েছেন। সরকার কিছুই দেখেনি। আসল ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ হল নতুন রাফাল চুক্তি। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বদলে অনিল অম্বানীকে বরাত দেওয়া হয়েছে। যৌথ সংসদীয় কমিটির তদন্তের দাবি উঠেছে। আবার শিক্ষার বেসরকারিকরণ করে সংরক্ষণে আঘাত করা হচ্ছে।’’ জিগ্নেশের অভিযোগ, দলিতদের ‘অম্বেডকর-বাদ’-কে মাওবাদের তকমা দেওয়া হচ্ছে। যাঁরা সঙ্ঘ-পরিবারের বিরুদ্ধে লড়ছেন, তাঁদেরই ভয় দেখানো হচ্ছে। তিনি জানান, ৫ সেপ্টেম্বর দেশ জুড়ে রাস্তায় প্রতিবাদে নামবেন দলিতরা। ১৫ সেপ্টেম্বর কুড়িটি রাজ্যে বিক্ষোভ দেখাবে ভীমা-কোরেগাঁওয়ের আয়োজক এলগার পরিষদ। অরুণা রায়, প্রশান্ত ভূষণরা যুক্তি দেন, যে সমাজকর্মীরা গরিবদের জন্য কাজ করছেন, তাঁদেরই জেলে ভরা হচ্ছে। ভূষণ বলেন, ‘‘যা হচ্ছে, তা জরুরি অবস্থার থেকেও খারাপ।’’
আজ যন্তর মন্তরের বিক্ষোভ জমায়েতেও উপচে পড়ে ভিড়। দাবি ওঠে, ইউএপিএ আইন প্রত্যাহার করা হোক। পুণের মামলা তুলে নিয়ে ধৃতদের ল্যাপটপ, মোবাইল ফিরিয়ে দেওয়া হোক। অরুন্ধতীর আশঙ্কা, যত ভোট এগিয়ে আসবে, ততই এই ধরনের ঘটনা বাড়বে। গৌরী লঙ্কেশের খুনে সনাতন সংস্থার নাম দেখিয়ে দিয়েছে, হিন্দু সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের হিট-লিস্ট, গোপন আস্তানা, অস্ত্র-বোমা সব মজুত। তিনি বলেন, ‘‘ভোটের আগে এদের কী পরিকল্পনা রয়েছে, জানে না কেউ। কাশ্মীর, না কুম্ভমেলা, নাকি অযোধ্যা— কোথায় হামলা হবে, কেউ জানে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy