Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪

হাততালিতে চিন্তা কাটছে না প্রধানমন্ত্রী মোদীর

মুখে সাহসী। মনে ভয়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মুখে আজ ফের বললেন, দেশের স্বার্থে নোট বাতিলের মতো কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে তিনি পিছপা হবেন না। নোট বাতিলে অল্প দিনের যন্ত্রণা হলেও দীর্ঘমেয়াদে লাভই হবে। তিনিই আবার নীতি আয়োগে গিয়ে বৈঠক করতে বসছেন, নোট বাতিলের ফলে অর্থনীতিতে ঠিক কতটা ধাক্কা লেগেছে, তা খতিয়ে দেখতে। মঙ্গলবার হবে ওই বৈঠক

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০১৬ ০২:৩৩
Share: Save:

মুখে সাহসী। মনে ভয়।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মুখে আজ ফের বললেন, দেশের স্বার্থে নোট বাতিলের মতো কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে তিনি পিছপা হবেন না। নোট বাতিলে অল্প দিনের যন্ত্রণা হলেও দীর্ঘমেয়াদে লাভই হবে। তিনিই আবার নীতি আয়োগে গিয়ে বৈঠক করতে বসছেন, নোট বাতিলের ফলে অর্থনীতিতে ঠিক কতটা ধাক্কা লেগেছে, তা খতিয়ে দেখতে। মঙ্গলবার হবে ওই বৈঠক।

মোদী আজ মহারাষ্ট্রে গিয়ে ফের দাবি করেছেন, আমজনতা এখনও তাঁর পাশে। মহারাষ্ট্রের মানুষ পুর-নির্বাচনে বিজেপিকে ভোট দিয়ে নোট বাতিলের সিদ্ধান্তে সিলমোহর বসিয়েছেন। মুম্বইয়ে জনসভায় মোদী যুক্তি দেন, ‘‘দেশের সওয়াশো কোটি লোক এত কষ্ট, এত যন্ত্রণা সহ্য করেও আমার সঙ্গ ছাড়েননি।’’ রায়গড়ে ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব সিকিউরিটিজ ম্যানেজমেন্ট’-এর নতুন ক্যাম্পাসের উদ্বোধনে গিয়ে শিল্পমহলকেও বার্তা দেন মোদী। বলেন, ‘‘দীর্ঘমেয়াদে দেশের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ সুনিশ্চিত করতে এই সরকার ঠিক ও মজবুত সিদ্ধান্ত নিতে থাকবে। স্বল্প মেয়াদে রাজনৈতিক ফায়দা কুড়োতে আমরা কোনও সিদ্ধান্ত নেব না। দেশের স্বার্থে হলে, কঠোর কোনও সিদ্ধান্ত নিতে আমরা পিছপা হব না। নোট বাতিল এর উদাহরণ।’’

এ সব শুনে মুম্বইয়ের জনসভায় ‘মোদী, মোদী’ জয়ধ্বনি তুলেছেন সমর্থকেরা। রায়গড়ের অনুষ্ঠানেও হাততালি পড়েছে মোদীর কথায়। তাতে কিন্তু মোদীর দুশ্চিন্তা দূর হচ্ছে না। তিনি ও তাঁর সরকার নোট বাতিলের ধাক্কাকে সাময়িক বলে দাবি করলেও শিল্পমহল থেকে শুরু করে অর্থনীতিবিদদের একটা বড় অংশের অনেকের আশঙ্কা, ধাক্কা কাটাতে আরও সময় লাগবে। চলতি অর্থ বছরে বৃদ্ধির হার ৮ শতাংশ ছোঁবে বলে আশা করেছিল মোদী সরকার। কিন্তু অনেকেরই আশঙ্কা, বৃদ্ধির হার ৭%-এরও নীচে চলে যেতে পারে। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক মনে করছে, বৃদ্ধির হার ৭.৬% থেকে ৭.১%-এ নেমে যেতে পারে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাঙ্কও ৭.৪% থেকে বৃদ্ধির পূর্বাবাস ৭%-এ নামিয়ে এনেছে। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ বলেছেন, নোট বাতিলের ফলে বৃদ্ধির হার কমবে। গোল্ডম্যান সাক্‌স, মুডি’জ, আইসিআরএ বা ইক্রা-র মতো অর্থনীতির মূল্যায়নকারী সংস্থারও একই আশঙ্কা। গোল্ডম্যানের ভবিষ্যৎবাণী, গত বছরের ৭.৬% বৃদ্ধির হার এ বছর ৬.৮%-এ নেমে আসতে পারে। মুডি’জ, ইক্রা, ক্রিসিল-এর মতো সংস্থাগুলিও মনে করছে, বৃদ্ধির হার ৭% বা তার আশেপাশেই থমকে যাবে। অম্বিত ক্যাপিটালের আশঙ্কা, অর্থ বছরের শেষ ছ’মাসে বৃদ্ধির হার ০.৫%-এ নেমে আসতে পারে। তার ফলে গোটা বছরের বৃদ্ধির হার ৩.৫%-এ নেমে যাবে। আগামী অর্থ বছরেও এর রেশ থাকবে। ফলে বৃদ্ধির হার ৫.৮%-এই থেমে থাকবে।

মোদীর আশা

• দেশের স্বার্থে হলে, কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে আমরা পিছপা হব না

• ৫০ দিনের পরে সৎ-এর কষ্ট কমবে, অসৎদের কষ্ট বাড়বে

• পুর-ভোটে বিজেপির জয়েই প্রমাণ, মানুষের সায় আছে নোট বাতিলে

অর্থনীতিবিদদের অনেকেরই মত, মোদীর নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের পিছনে কোনও অর্থনৈতিক যুক্তি নেই। উল্টে অর্থনীতিকে তার খেসারত দিতে হচ্ছে। নোট বাতিলের সিদ্ধান্তে ধাক্কা লেগেছে ব্যবসা-বাণিজ্যে।

শিল্পমহলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, সাময়িক এই ধাক্কা অর্থনীতিতে দীর্ঘস্থায়ী মন্দা হয়ে জাঁকিয়ে বসতে পারে। কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের অধীনস্থ সংস্থা দিল্লির ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব পাবলিক ফিনান্স অ্যান্ড পলিসি (এনআইপিএফপি)-র রিপোর্ট অনুযায়ী, নগদের জোগান কমে যাওয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলিতে অর্থনৈতিক কাজ-কারবার হোঁচট খাবে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড কমবে। বাড়বে বেকারি। সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকনমি (সিএমআইই) রিপোর্ট দিয়েছে, নোট বাতিলের ফলে অর্থনীতির অন্তত ১.২৮ লক্ষ কোটি টাকা ক্ষতি হবে। মুখে নোট বাতিলকে সমর্থন করলেও শিল্পমহলের দাবি, সাময়িক ধাক্কার রেশ কাটাতে সুদের হার, করের বোঝা কমানো হোক। বাড়ুক পরিকাঠামোয় ব্যয়।

এই অবস্থায় প্রকাশ্যে মোদী যতই সাহসী মুখ দেখান, কঠোর বাস্তবটা উড়িয়ে দিতে পারছেন না। কার্যত আশঙ্কার ঠান্ডা স্রোত বইছে সরকারের অন্দরে। আগামী মঙ্গলবার নীতি আয়োগের বৈঠক ডাকাটা তারই প্রমাণ বলে মনে করা হচ্ছে সরকারি সূত্রেই। নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত ও নগদের আকাল অর্থনীতিতে কতটা প্রভাব পড়েছে ও আরও পড়বে, তা বুঝতেই নীতি আয়োগের সদস্য, অর্থনীতিবিদ, শিল্প-বাণিজ্য ও অর্থ-সহ বিভিন্ন মন্ত্রকের শীর্ষকর্তাদের সঙ্গে সে দিন বৈঠকে বসবেন মোদী।

সরকারি সূত্রের খবর, অসংগঠিত ক্ষেত্রের মতো যে সব জায়গায় নোট বাতিলের ফলে সব থেকে বেশি ধাক্কা লেগেছে, সেগুলির ক্ষতে মলম লাগানোর উপায়ও খোঁজা হবে ওই বৈঠকে। রাহুল গাঁধী থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, বিরোধীরা সমস্বরে আমজনতার, বিশেষ করে এই অসংগঠিত ক্ষেত্রের ভোগান্তি নিয়েই সমস্বরে নিশানা করছেন মোদীকে। নোট-বাতিলের সিদ্ধান্তকে রাহুল-মমতারা বলছেন সব চেয়ে বড় আর্থিক কেলেঙ্কারি, এমনকী ডাকাতিও। রাজনৈতিক ভাবে এর জবাব দেওয়ার দায়ও রয়েছে মোদীর। রায়গড়ে তিনি আজ বিরোধীদের সমালোচনার জবাব দেওয়ার চেষ্টা করেন। তাঁর দাবি, গত তিন বছরেরও কম সময়ে অর্থনীতির চেহারা বদলে দিয়েছে তাঁর সরকার। রাজকোষ ঘাটতি কমেছে। বেড়েছে সরকারি লগ্নি। বিদেশি মুদ্রার ভাণ্ডারের ছবিটাও ভাল। মূল্যবৃদ্ধির হার ৪%-এর কম। ভারতীয় অর্থনীতি থেকে বিদেশি লগ্নিকারীদের আস্থা চলে গিয়েছিল। এই সব নীতির ফলেই রেকর্ড পরিমাণ বিদেশি লগ্নি এসেছে।

আর মানুষের ভোগান্তির ক্ষতে মলম দিতে মোদী মূল মন্ত্র, সৎ, ইমানদারদের কষ্ট হলেও অসৎ, কালো টাকার কারবারিরা বেশি বিপাকে পড়েছেন। বলেছেন, ‘‘৮ নভেম্বরের পর থেকে পঞ্চাশ দিনের পরে ইমানদারদের কষ্ট কমতে থাকবে। যন্ত্রণা বাড়বে বেইমানদের। এখনও বলছি, সামলে যান, আইন মানুন, সুখ-শান্তির জীবনে নিমন্ত্রণ রইল। এই সরকার কাউকে ফাঁসিতে তুলতে চায় না। কিন্তু গরিবের অধিকার দিতেই হবে। যাঁরা ভাবছেন, আগের মতোই কোনও একটা পথ পেয়ে যাবেন, তাঁরা জেনে নিন, সরকার বদলেছে। মোদীকে ভয় না পেলেও সওয়া’শো কোটি লোকের মেজাজকে ভয় পান।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Demonitisation unconfident
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy