শ্রদ্ধা: গাঁধী জয়ন্তী উপলক্ষে সংসদ ভবনে নরেন্দ্র মোদী। পিটিআই
সকালে দিল্লির রাজঘাট, বিকেলে গুজরাতের সাবরমতী আশ্রম। ‘বাপু’র নামে সকলকে দেশের কথা ভেবে ‘এক ব্যক্তি, এক সংকল্প’ নিতে বললেন। টানা এক বছর সেই লক্ষ্যেই এগোতে অনুরোধ করলেন ১৩০ কোটি দেশবাসীকে।
মার্কিন সংবাদপত্রে উত্তর-সম্পাদকীয় লিখে ‘আইনস্টাইন চ্যালেঞ্জ’ নেওয়ার ডাকও দিলেন। গাঁধীর মতো রক্তমাংসের মানুষের অস্তিত্ব ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বিশ্বাস করবে কি না, তা নিয়ে চিন্তিত ছিলেন কিংবদন্তি বিজ্ঞানী। তাই নরেন্দ্র মোদীর ‘চ্যালেঞ্জ’, আগামী প্রজন্ম যাতে গাঁধীর আদর্শ মনে রাখে, তা নিশ্চিত করতে হবে। ‘ভারত ও বিশ্বের কেন গাঁধীকে প্রয়োজন’ শীর্ষক ওই নিবন্ধে প্রধানমন্ত্রী তাই আহ্বান জানিয়েছেন চিন্তাবিদ, উদ্যোগপতি ও প্রযুক্তি সংস্থার কর্ণধারদের— নিজস্ব উদ্ভাবনের মাধ্যমে তাঁরা যেন গাঁধীর ভাবনার বিস্তার ঘটান।
আজ গাঁধীর সার্ধশতবর্ষে এ সবের ফাঁকেই আমদাবাদে মোদীর মঞ্চে দেখা গেল হিউস্টনে তোলা একটি ছবি। ছবিতে তিনি ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যে ছবির সুবাদে নিজের রাজ্যে এক দফা অভিনন্দনও কুড়িয়েছেন মোদী।
‘সেনাপতি’ অমিত শাহ সকালেই দৌড় শুরু করিয়েছেন দিল্লিতে। নিজে হেঁটেছেন। আজ থেকে দলের সব নেতা-কর্মীকে খাদির পোশাক পরে ১৫ দিনে দেড়শো কিলোমিটার হাঁটতে বলেছেন। দেশের নানা প্রান্তে গাঁধীকে নিয়ে ‘মেগা-অনুষ্ঠান’ হচ্ছে। দিল্লিতে ৬৮৪১ জন পড়ুয়া একসঙ্গে সৌর লণ্ঠন জ্বালিয়ে গিনেস রেকর্ড গড়েছে বলে জানিয়েছে অপ্রচলিত শক্তি মন্ত্রক।
‘গাঁধীর আদর্শে এগোচ্ছি’ বলে মাঠে নেমেছেন সঙ্ঘপ্রধান মোহন ভাগবতও।
সঙ্ঘ-বিজেপি পুরোদমে লেগেছে গাঁধীর উত্তরসূরি হতে। আরএসএস থেকে বিজেপিতে আসা এক নেতা বলেই ফেললেন, ‘‘বাপু বেঁচে থাকলে আজ আরএসএসে থাকতেন। গাঁধীদের পরিবারতন্ত্র পছন্দ করতেন না।’’ এর আগে কংগ্রেসের অনেক ‘আইকন’কে কেড়ে নিয়েছেন মোদী। এ বারও নিজেদের গাঁধীর উত্তরসূরি হিসেবে প্রচার করতে মোদী যে বড় আয়োজন করবেন, আগেই তা টের পেয়েছিল কংগ্রেস। লোকসভা ভোটে বিপর্যয়ের পরে কংগ্রেসের ভাঁড়ারের অবস্থা ভাল নয়। তবু কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী নির্দেশ দিয়েছিলেন, পুরোদমে পাল্টা প্রচার হবে গাঁধী-জয়ন্তীর। মাঠে নামতে হবে গোটা দলকে। তাই দেশ জুড়ে যখন বিজেপির ‘গাঁধী সংকল্প যাত্রা’ চলছে, কংগ্রেসও তখন শুরু করেছে ‘গাঁধী সন্দেশ যাত্রা’। রাজধানীতে হেঁটেছেন রাহুল গাঁধী নিজে।
মোদী ক’দিন আগেই ট্রাম্পের মুখ থেকে ‘ভারতের জনক’ তকমা পেয়েছেন। আজ অবশ্য গাঁধীকেই ‘রাষ্ট্রপিতা’ বলেছেন মোদী। কিন্তু সনিয়া ছাড়লেন না। বললেন, ‘‘গাঁধীজির নাম নেওয়া সহজ, তাঁর পথে চলা সহজ নয়। নিজেকে ভারতের ভাগ্যবিধাতা মনে করা ব্যক্তিকে বিনম্র ভাবে বলতে চাই, গাঁধীজি ঘৃণা নয়, ভালবাসার প্রতীক ছিলেন। একচ্ছত্র হয়ে ওঠার নয়, তিনি গণতন্ত্রের প্রতীক। যে যা খুশি করুন, গাঁধীর পথে কংগ্রেসই চলেছে। আর কংগ্রেসই চলবে।’’
ফলে গোটা দিনে একটাই প্রশ্ন ঘুরে-ফিরে এল,‘বাপু’ আসলে কার?
মোদী-সহ তাঁর গোটা টিম আজ ‘বাপু’র স্বপ্ন পূরণ করে নতুন ভারত গড়ার কথা বলেছে। সাবরমতী নদীতীরের অনুষ্ঠানে বালির তৈরি গাঁধীমূর্তির সামনে বিরাট একটি চশমা নিজের হাতে করে রেখে ‘স্বচ্ছ ভারতের’ জয় ঘোষণা করেছেন মোদী। কিন্তু সনিয়ার সাফ কথা, ‘‘যাঁরা অসত্যের রাজনীতি করেন, ক্ষমতার জন্য যে কোনও পর্যায়ে যেতে পারেন, গণতন্ত্রকে নিজের মুঠোয় রাখেন এবং সুযোগ পেলেই নিজেকে সর্বেসর্বা বলার ইচ্ছা রাখেন, তাঁরা গাঁধীর অহিংসা ও নিঃস্বার্থ সেবার মূল্য কী বুঝবেন?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy