প্রথমে কেন্দ্রকে তোপ দাগলেন তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিন। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তামিলনাড়ুকে খোঁচা দিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। ফলে ভাষা নিয়ে সরগরম হয়ে উঠল দাক্ষিণাত্য তথা জাতীয় রাজনীতি।
আজ ‘হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার’ অভিযোগ তুলে সমাজমাধ্যমে কেন্দ্রকে নিশানা করেন তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিন। তাঁর দাবি, জাতীয় শিক্ষানীতির মাধ্যমে হিন্দি চাপিয়ে দিতে চাইছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। এ ভাবে তামিলনাড়ুর ভাষাগত পরিচয়কে আঘাত করতে চাইছে বিজেপি। স্ট্যালিনের কথায়, ‘‘কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রীই আমাদের এ নিয়ে চিঠি লিখতে বাধ্য করেছেন। নিজের স্থান ভুলে তিনি একটি গোটা রাজ্যের উপরে হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। তিনি এমন একটা লড়াই শুরু করেছেন যা তিনি কখনওই জিততে পারবেন না। তামিলনাড়ুকে ব্ল্যাকমেল করে আত্মসমর্পণে বাধ্য করা যাবে না।’’ স্ট্যালিনের দাবি, জাতীয় শিক্ষানীতির মাধ্যমে কেন্দ্র যে লক্ষ্যে ২০৩০ সালের মধ্যে পৌঁছতে চাইছে তামিলনাড়ু ইতিমধ্যেই সেই লক্ষ্যে পৌঁছে গিয়েছে। তাঁর কটাক্ষ, ‘‘এ যেন নীচু শ্রেণির ছাত্র পিএইচডি ডিগ্রিধারীকে জ্ঞান দিচ্ছে। দ্রাবিড়ভূমি দিল্লি থেকে নির্দেশ নেয় না। দেশকে পথ দেখায়।’’
জাতীয় শিক্ষানীতিতে তিনটি ভাষার মাধ্যমে শিক্ষাদানের কথা বলা হয়েছে। তবে স্পষ্ট ভাবে জানানো হয়েছে, কোনও রাজ্যের উপরে কোনও ভাষা চাপিয়ে দেওয়া হবে না। কিন্তু তা সত্ত্বেও ওই শিক্ষানীতি গ্রহণ করতে রাজি নয় তামিলনাড়ুর ডিএমকে সরকার। সম্প্রতি তিন ভাষার মাধ্যমে শিক্ষাদানের সমর্থনে তামিলনাড়ুতে স্বাক্ষর অভিযান শুরু করেছে বিজেপি। সেই অভিযানকে কটাক্ষ করে স্ট্যালিনের বক্তব্য, ‘‘তিন ভাষার সমর্থনে বিজেপির স্বাক্ষর অভিযান তামিলনাড়ুতে হাস্যকর বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে এই বিষয়টিকে সামনে রেখে ভোটে যাক বিজেপি। হিন্দি চাপানোর উপরে গণভোট হোক।’’ স্ট্যালিনের বক্তব্য, ‘‘তামিলনাড়ুতে যাঁরা হিন্দি চাপানোর চেষ্টা করেছেন তাঁরা সকলেই প্রতিরোধের মুখে পড়েছেন। হয় তাঁরা অবস্থান বদলেছেন নয় ডিএমকে-র জোটসঙ্গী হয়েছেন।’’ কেন্দ্রীয় প্রকল্পের নামেও অত্যধিক হিন্দি ব্যবহার করা হচ্ছে বলে দাবি স্ট্যালিনের। ২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটের আগে ক্রমশ বিজেপির বিরুদ্ধে সুর চড়াচ্ছেন স্ট্যালিন।
এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ফের ভাষা-বিতর্ক উস্কে দেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। আধাসেনা সিআইএসএফ-এর প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে তামিলনাড়ুর থাক্কোলামে যান তিনি। সেখানে শাহ বলেন, ‘‘কিছু দিন আগে পর্যন্ত আধাসেনার পরীক্ষায় মাতৃভাষার স্থান ছিল না। আপনি বাংলা, কন্নড় বা তামিলে সেই পরীক্ষা দিতে পারতেন না। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী স্থির করেন, সংবিধানের অষ্টম তফসিলে থাকা সব ভাষায় ওই পরীক্ষা নেওয়া হবে। এখন তামিলনাড়ুর যুবকেরা তামিলে ওই পরীক্ষা দিতে পারবেন।’’ তাঁর কটাক্ষ, ‘‘স্ট্যালিন তামিলে মেডিক্যাল ও ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স পড়ার ব্যবস্থা করুন। গত দু’বছর আমি এ নিয়ে অনুরোধ করছি। কিন্তু সেই পদক্ষেপ করা হয়নি।’’
স্ট্যালিনকে জবাব দেন তামিলনাড়ুর বিজেপি সভাপতি কে আন্নামালাইও। তাঁর বক্তব্য, ‘‘তিন ভাষার সমর্থনে আমাদের অনলাইন স্বাক্ষর অভিযানে ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে ২ লক্ষ মানুষ সাড়া দিয়েছেন। মাঠে নেমে স্বাক্ষর সংগ্রহের ক্ষেত্রেও আমরা ভাল সাড়া পাচ্ছি। ফলে তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে আপনি উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছেন।’’
সংবাদ সংস্থা
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)