Advertisement
E-Paper

মধ্যবিত্তের লক্ষ্মীলাভ চান মোদী, বাজেটে কত দূর

আর্থিক উপদেষ্টা সংস্থাগুলি মনে করছে, অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন আয়কর ছাড়ের সীমা বাড়াতে পারেন। অথবা, আয়কর হারে কিছু রদবদল করে মধ্যবিত্তকে সুরাহা দিতে পারেন।

গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

প্রেমাংশু চৌধুরী

শেষ আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৭:২৬
Share
Save

আয়করে এ বার ছাড় মিলবে বলে মধ্যবিত্তের প্রত্যাশা এমনিতেই তুঙ্গে। শনিবার সকালে বাজেট পেশের ২৪ ঘণ্টা আগে খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সেই প্রত্যাশাকে আরও বাড়িয়ে দিলেন।

শুক্রবার সকালে সংসদের বাজেট অধিবেশন শুরুর আগে প্রধানমন্ত্রীর ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য, ‘‘আমি মা লক্ষ্মীর কাছে প্রার্থনা করি যে, দেশের গরিব ও মধ্যবিত্তের উপরে যেন তাঁর বিশেষ কৃপা থাকে।’’ তার পরে বাজেট অধিবেশনের গোড়ায় রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু তাঁর বক্তৃতায় বলেছেন, ‘‘মধ্যবিত্তের উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও তা পূরণের সঙ্গে গভীর ভাবে জড়িয়ে রয়েছে দেশের আর্থিক অগ্রগতি।’’

আর্থিক উপদেষ্টা সংস্থাগুলি মনে করছে, অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন আয়কর ছাড়ের সীমা বাড়াতে পারেন। অথবা, আয়কর হারে কিছু রদবদল করে মধ্যবিত্তকে সুরাহা দিতে পারেন। যেমন, নতুন কর ব্যবস্থায় ১২ থেকে ১৮ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়ে আয়করের হার ২০% হতে পারে। অথবা, ১৫ থেকে ২০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়ে আয়করের হার কমিয়ে ২৫% করা হতে পারে। এখন ১২ থেকে ১৫ লক্ষ টাকা আয়ে ২০% ও ১৫ লক্ষ টাকার উপরের আয়ে ৩০% হারে আয়কর দিতে হয়।

গত জুলাই মাসে মোদী সরকার তৃতীয় বার ক্ষমতায় আসার পরে প্রথম বাজেটে অর্থমন্ত্রী আয়কর আইন ঢেলে সাজানোর কথা বলেছিলেন। যাতে আয়কর জমার প্রক্রিয়াকে আরও সহজ করা যায়। সরকারি সূত্রের খবর, বাজেটের পরে আলাদা ভাবে নতুন আয়কর আইনের বিল সংসদে পেশ হতে পারে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, মোদী সরকার ২০১৯-এই কর্পোরেট করের হার কমিয়ে ধনী, উচ্চবিত্তকে সুরাহা দিয়েছে। তার ফল হল, কেন্দ্রীয় সরকার কর্পোরেট সংস্থার তুলনায় সাধারণ মানুষের থেকে বেশি কর আদায় করছে। অন্য দিকে, গরিব মানুষের জন্য বিনামূল্যে রেশন, পিএম-কিসানের মতো আর্থিক সুবিধা পাইয়ে দেওয়া হচ্ছে। ‘বঞ্চিত’ শুধু মধ্যবিত্ত। বাজেট ঘিরে সেই কারণেই মধ্যবিত্তের প্রত্যাশা বেড়েছে। অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে হলেও মধ্যবিত্তকে সুরাহা দেওয়া প্রয়োজন।

কেন? যুক্তি হল, আর্থিক বৃদ্ধির গতি এমনিতেই শ্লথ হয়ে পড়েছে। সরকারি পূর্বাভাসই বলছে, চলতি অর্থ বছরে আর্থিক বৃদ্ধির হার মাত্র ৬.৪ শতাংশে আটকে থাকবে। গত চার বছরে সর্বনিম্ন। গত অর্থ বছরেই আর্থিক বৃদ্ধির হার ৮.২ শতাংশ ছিল। তার সঙ্গে মূল্যবৃদ্ধির জেরেও সাধারণ মানুষ হিমশিম খাচ্ছেন। মানুষের আয় সে ভাবে বাড়েনি। সার্বিক ভাবে মূল্যবৃদ্ধির হার কমলেও খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি থেকে শিক্ষা, স্বাস্থ্য পরিষেবায় খরচ বৃদ্ধি মাত্রাছাড়া। ফলে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষের হাতে খরচ করার মতো টাকা কমেছে। শহরের বাজারে চাহিদা গত এক থেকে দেড় বছর ধরে কমছে। গাড়ি, বাইক, স্কুটার থেকে রোজকার ব্যবহারের সাবান-শ্যাম্পুর বিক্রিও কমছে।

প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের দাবি, ভারত মাঝারি আয়ের দেশের ফাঁদের পথে এগোচ্ছে। মোদী সরকারেরই প্রাক্তন মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা অরবিন্দ সুব্রমণিয়ন মন্তব্য করেছেন, মাঝারি আয়ের শ্রেণির মধ্যেও নীচের স্তর থেকে উপরের স্তরে যাওয়ার রাস্তা খুবই সঙ্কীর্ণ। তাঁর বক্তব্য, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকারকে মেনে নিতে হবে যে, সরকার এত দিন যা করছিল, তাতে কাজ হয়নি।’’

বাজেটের আগে অর্থমন্ত্রীর সামনে চিন্তা হল, বাজারে চাকরির অভাবের সঙ্গে অনিশ্চয়তা যোগ হয়েছে। কৃত্রিম মেধা-র আবির্ভাবের ফলে তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে চাকরিতে কী প্রভাব পড়বে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। এত দিন মধ্যবিত্ত পরিবারের তরুণ-তরুণীরা এই ক্ষেত্রটিতে সুবিধা পেয়ে এসেছেন। অর্থনীতিতে নতুন লগ্নি বা শিল্পমহলের বিনিয়োগেও ধীর গতি দেখা যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে অনিশ্চয়তার ফলে রফতানিও সে ভাবে বাড়ছে না। অর্থাৎ, অর্থনীতির চারটি ইঞ্জিনের মধ্যে তিনটি ইঞ্জিন: বাজারে কেনাকাটা, শিল্পমহলের লগ্নি, রফতানি— ভালভাবে কাজ করছে না। একমাত্র পরিকাঠামো তৈরিতে সরকারি খরচ বাড়িয়ে অর্থনীতির গতি বাড়ানোর চেষ্টা চলছে।

অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, আর্থিক বৃদ্ধির হারকে চাঙ্গা করতে বাজারে কেনাকাটা বাড়ানোর প্রয়োজন। তার জন্য সরকারের সামনে পথ হল, মধ্যবিত্ত মানুষের হাতে কিছুটা বাড়তি নগদ তুলে দেওয়া। এর উপায় হিসেবেই আয়কর ছাঁটাইয়ের কথা ভাবতে পারে মোদী সরকার। মোদী সরকার এত দিন সে রাস্তায় হাঁটেনি। এ বার বাজেটে মোদী সরকার কিছু করবে, না কি ‘মা লক্ষ্মীর কৃপা’-র ভরসাতেই গরিব-মধ্যবিত্তকে ছেড়ে দেওয়া হবে, সেটাই দেখার।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Union Budget 2025 PM Narendra Modi Nirmala Sitharaman Indian Middle Class Indian Economy

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}