মোদী-শাহ।
কাশ্মীরের পরিস্থিতি নিয়ে আজ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠক করলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।
সম্প্রতি উপত্যকায় সেখানকার সংখ্যালঘু হিন্দু ও শিখ সমাজের সদস্যদের হত্যা করে কাশ্মীরে নতুন করে অশান্তি সৃষ্টি করার কৌশল নিয়েছে পাকিস্তানের মদত পাওয়া জঙ্গিরা। যা রুখতে গত কাল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের শীর্ষ কর্তা ও গোয়েন্দা কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন শাহ। সূত্রের মতে, ওই বৈঠকের নির্যাস ও আগামী দিনে উপত্যকায় জঙ্গি সমস্যা মেটানোর রূপরেখা কী হতে চলেছে, তা নিয়ে আজ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেন শাহ। ভারত-পাকিস্তান টি-২০ বিশ্বকাপের ম্যাচ রয়েছে ২৪ অক্টোবর। সরকারের উপরে চাপ বাড়িয়ে সেই ম্যাচ বাতিলের দাবি তুলেছে আসাদুদ্দিন ওয়েইসির এমআইএম থেকে অরবিন্দ কেজরীবালের আম আদমি পার্টি।
বিরোধীদের প্রশ্ন, যে ইসলামাবাদের মদতে জঙ্গিরা কাশ্মীরে নিরীহ ভারতবাসীকে হত্যা করে চলেছে, সেই পাকিস্তানের সঙ্গে কেন ক্রিকেট ম্যাচ খেলবে ভারতীয় দল? শুধু বিরোধীরাই নয়, একই দাবি উঠেছে বিজেপির অন্দরমহলেও। অতীতে ইউপিএ আমলে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ হলেই সন্ত্রাসের দোহাই দিয়ে তা বাতিলের দাবিতে সরব হতেন বিজেপি নেতৃত্ব। এ যাত্রায় বিরোধীরা সেই দাবি তোলায় পাল্টা চাপে নরেন্দ্র মোদী সরকার। ম্যাচ বাতিলের দাবি ওঠায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ চাপে। তেমনই চাপে তাঁর ছেলে জয়, ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড বিসিসিআইয়ের সচিব।
শেষ মুহূর্তে পরিকল্পনা বদল না-হলে, আগামী ২৩-২৫ অক্টোবর তিন দিনের জন্য জম্মু-কাশ্মীর সফরে যাচ্ছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। ২০১৯ সালে জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহারের পরে এটিই হতে চলেছে তাঁর প্রথম সফর। কিন্তু তাঁর সফরের ঠিক আগে যে ভাবে উপত্যকায় নিরীহ মানুষদের হত্যা করে অস্থিরতা তৈরির কৌশল নিয়েছে জঙ্গিরা, তাতে রীতিমতো অস্বস্তিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। গত ১৬ দিনে ১১ জন অ-স্থানীয়কে হত্যা করা হয়েছে। ফলে ভিন্ রাজ্যের মানুষজন তথা পরিযায়ী শ্রমিক-কর্মীরা উপত্যকা ছেড়ে পালাচ্ছেন আতঙ্কে। কী ভাবে এই নতুন সমস্যা মোকাবিলা করা যায়, তা নিয়ে গত কাল বৈঠক ডেকেছিলেন শাহ। সূত্রের মতে, বৈঠকে স্থানীয় পর্যায়ে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জঙ্গিদের ও তাদের সাহায্যকারীদের চিহ্নিত করার উপরে বিশেষ জোর দেওয়া হয়। জনবহুল এলাকায় আরও বেশি নিরাপত্তাবাহিনী মোতায়েনের উপরেও জোর দেওয়া হয়েছে।
তবে কাশ্মীরের সংখ্যালঘুদের নিশানা করার যে কৌশল জঙ্গিরা নিয়েছে, তার মোকাবিলা করাটাকে কঠিন চ্যালেঞ্জ বলেই মনে করছেন গোয়েন্দারা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক কর্তার মতে, ‘‘প্রত্যেক ব্যক্তিকে তো নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব নয়। কাশ্মীরে এখনও দেড়শো জঙ্গি সক্রিয় রয়েছে। তাদের কাছে বন্দুক-গ্রেনেড সব রয়েছে। মাত্র এক জন জঙ্গি জনবহুল এলাকায় গুলি চালিয়ে বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। তাই এ ধরনের ঘটনা রুখতে গোয়েন্দা তথ্যের উপরেই আমাদের নির্ভর করতে হবে।’’
কাশ্মীরের জঙ্গি সমস্যা নিয়ে কোণঠাসা মোদী সরকারকে নতুন করে চাপে ফেলে দিয়েছে আসন্ন ভারত-পাকিস্তান টি-২০ বিশ্বকাপের ম্যাচ। বিরোধী শিবিরে থাকার সময় যে বিজেপি ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের বিরোধিতা করে এসেছে, আজ সেই বিরোধিতার সুর শোনা গিয়েছে ওয়েইসির গলায়। তিনি বলেন, ‘‘সীমান্তে সেনারা মারা যাচ্ছে, উপত্যকায় নিরীহ মানুষদের হত্যা করছে পাক মদতপুষ্ট জঙ্গিরা। যেখানে পাকিস্তান কাশ্মীরের মানুষের জীবন নিয়ে ২০-২০ খেলছে সেখানে আমাদের কি পাকিস্তানের সঙ্গে খেলা উচিত?’’ একই সুরে সরব হয়েছেন আম আদমি পার্টির বিধায়ক অতিশী। তাঁর কথায়, ‘‘বিরোধী দলে থাকাকালীন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে খেলার বিরোধিতা করে সরব হতেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাহলে এখন কেন খেলা হব?’’ কেবল বিরোধীরাই নয়, ম্যাচ বাতিলের দাবি উঠেছে বিজেপির অন্দরেও। দলের বর্ষীয়ান নেতা তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গিরিরাজ সিংহ প্রশ্নে তুলেছেন ওই ম্যাচ খেলার যৌক্তিকতা নিয়ে। তাঁর কথায়, ‘‘দুই দেশের সম্পর্ক আদৌ মধুর নয়। কাশ্মীরে সাধারণ নাগরিককে হত্যা করা হচ্ছে। এই আবহে দু’দেশের মধ্যে ক্রিকেট ম্যাচ হওয়া উচিত কী না তা নিয়ে অবশ্যই ভাবা উচিত।’’
ম্যাচ বাতিলের দাবি ওঠায় সার্বিক চাপের মুখে শাহ পরিবার। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসাবে জঙ্গি তৎপরতা ঠেকাতে শাহের মন্ত্রকের ব্যর্থতায় দু’দেশের ক্রিকেট খেলা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। যা রীতিমতো অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছে অমিত-পুত্র জয় শাহ-সহ ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড কর্তাদের। যা দেখে এক বিরোধী নেতার কটাক্ষ, জঙ্গি হামলা কেবল বাবা অমিতকেই নয়, ছেলে জয়কেও চাপে ফেলে দিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy