Memory of the youngest Indian martyr Baji Rout has resurfaced with Sehwag’s Moving Post dgtl
Baji Rout
১২ বছরে বুক ফুঁড়েছিল ব্রিটিশদের গুলি, সহবাগের টুইটে ফের চর্চায় ‘দেশের সর্বকনিষ্ঠ শহিদ’
স্ত্রী-সন্তানদের আরও অকূল পাথারে ফেলে চোখ বুজলেন নীলকণ্ঠপুর ঘাটের মাঝি। অপটু হাতে বৈঠা ধরা ছাড়া আর কোনও উপায় থাকল না বাজির কাছে। শুধু নদীঘাটের নয়, ভাইবোনদের মধ্যে সবথেকে ছোট বাজি-ই হয়ে উঠল সংসারের মূল কান্ডারি-ও।
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০১৯ ১৮:২১
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৩
আশ্বিনের রাতে মৃদুমন্দ বাতাসে নৌকোর ভিতরে চোখ লেগে এসেছিল ১২ বছরের ছেলেটার। আচমকা চাপা চিৎকারে ধড়মড়িয়ে উঠল। সামনে দাঁড়িয়ে ব্রিটিশ সাহেব এবং গোরা পল্টন। হুকুম, পার করিয়ে দিতে হবে ব্রাহ্মণী নদী!
০২১৩
কিন্তু সে ছেলে অনড়। হাজারো চোখরাঙানিতে কাজ হল না। অত্যাচারী ব্রিটিশ শাসকদের কাউকে সে নদী পার করিয়ে দেবে না। মুহূর্তের মধ্যে নৌকোতেই লুটিয়ে পড়ল তার নিথর দেহ। প্রথমে মাথায় বেয়োনেটের আঘাত। তারপর গুলিতে ঝাঁঝরা ছোট্ট দেহ। পড়ে রইল ১২ বছরের বাজি রাউত, পরাধীন ভারতের সর্বকনিষ্ঠ শহিদ। ১৯৩৮ সালের ১১ অক্টোবর।
০৩১৩
অকালমৃত্যুর দিনকয়েক আগেই ছিল বাজির জন্মদিন। তবে, নামেই ‘জন্মদিন’, অভাবের সংসারে এর কোনও আলাদা অর্থ বিশেষ ছিল না। বাজির মা দিনভর পড়শিদের বাড়িতে ঢেঁকি পাড়তেন। তবেই ঘরে আসত সামান্য খুদকুঁড়ো।
০৪১৩
ওড়িশার ঢেঙ্কানল জেলার প্রত্যন্ত গ্রাম ভুবনের এক হতদরিদ্র পরিবারে ১৯২৬ সালের ৫ অক্টোবর জন্ম হয়েছিল বাজি-র। তার বাবা ছিলেন নীলকণ্ঠপুর ঘাটের মাঝি। ব্রাহ্মণী নদী পারাপার করত তাঁর নৌকো। পারানি যা পেতেন, সংসারের অভাব দূর হত না।
০৫১৩
স্ত্রী-সন্তানদের আরও অকূল পাথারে ফেলে চোখ বুজলেন নীলকণ্ঠপুর ঘাটের মাঝি। অপটু হাতে বৈঠা ধরা ছাড়া আর কোনও উপায় থাকল না বাজির কাছে। শুধু নদীঘাটের নয়, ভাইবোনদের মধ্যে সবথেকে ছোট বাজি-ই হয়ে উঠল সংসারের মূল কান্ডারি-ও।
০৬১৩
সে সময় ঢেঙ্কানলের দেশীয় রাজা ছিলেন শঙ্করপ্রতাপ সিংহদেও। তাঁর অত্যাচারে খাজনা যোগান দিতে গিয়ে নাভিশ্বাস উঠত সাধারণ প্রজাদের। ধীরে ধীরে তাঁর বিরুদ্ধে ক্ষোভ পুঞ্জীভূত হচ্ছিল।
০৭১৩
সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়াতে এগিয়ে এলেন মার্ক্সবাদের আদর্শে দীক্ষিত ঢেঙ্কানলের বৈষ্ণবচরণ পট্টনায়ক। হরমোহন পট্টনায়কের সঙ্গে মিলে তিনি তৈরি করলেন ‘প্রজামণ্ডল আন্দোলন’। তার অংশ হিসেবে এল ‘বানরসেনা’। স্থানীয় বালক ও কিশোরদের নিয়ে তৈরি সেই সংগঠনের কাজ ছিল নজরদারি। সংগঠনের সদস্য ছিল বাজি রাউতও।
০৮১৩
আন্দোলনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়তে লাগল শাসকের অত্যাচারও। জারি হল রাজভক্ত কর। যারা দিত না, হাতির পায়ের তলায় গুঁড়িয়ে দেওয়া হত তাঁদের কাঁচাবাড়ি। অত্যাচার আরও নির্মম করতে ঢেঙ্কানলের শাসকের সঙ্গে যোগ দিলেন স্থানীয় আরও কিছু শাসক। কলকাতা থেকে ২৫০ বন্দুকধারী সেনা পাঠাল ব্রিটিশ সরকার।
০৯১৩
ভুবন গ্রামে শুরু হল পাগলের মতো তল্লাশি। হরমোহন পট্টনায়কের সন্ধানে। ঘরে ঘরে জেরা, তথ্য চাই তাঁর সম্বন্ধে। কিন্তু নির্যাতনের মুখেও গ্রামবাসীদের মুখে কুলুপ। ব্রিটিশদের কাছে খবর ছিল, গ্রামেই লুকিয়ে আছেন হরমোহন। বৈষ্ণবচরণ ছিলেন রেলকর্মী। তিনিও ব্রিটিশদের কাছে অধরা ছিলেন।
১০১৩
ব্রিটিশদের কাছে খবর এল, ব্রাহ্মণী নদী পেরিয়ে পালিয়েছেন হরমোহন। সেইমতো নীলকণ্ঠপুর ঘাটে বাঁধা বাজির নৌকোর কাছে পৌঁছল তারা। বাজির উপর দায়িত্ব ছিল ঘাটের চারপাশে নজরদারি। সে নদী পার করানোর বদলে মৃত্যুবরণ করল। মৃত্যুর আগে শেষ প্রাণবিন্দু অবধি সে চিৎকার করে গ্রামবাসীদের সতর্ক করেছিল, যে নদীর ঘাট অবধি পৌঁছে গিয়েছে ব্রিটিশ সেনা।
১১১৩
বাজির চিৎকারে ভিড় জমতে দেরি হল না। তাদের ছত্রভঙ্গ করতে আবারও গুলিবৃষ্টি করল ব্রিটিশ সেনা। তাতে মারা যান আরও চারজন। বাজি-সহ সবার দেহ পাঠানো হয়েছিল কটকে। ময়নাতদন্তের পরে কটকের রাস্তায় শোকযাত্রার পরে সম্পন্ন হয়েছিল শেষকৃত্য। হাজারো জনতা সমবেত হয়েছিলেন, বাজি ও বাকি শহিদদের শ্রদ্ধা জানাতে।
১২১৩
প্রতি বছর উৎকল দিবসে দেওয়া হয় ‘বাজি রাউত সম্মান’। বিভিন্ন দিকে প্রতিভাবান ওড়িশার কিশোরদের দেওয়া হয় এই সম্মান। বাজিকে নিয়ে রচিত হয়েছে কবিতাও।
১৩১৩
শিশু দিবসে বাজিকে সম্মান জানিয়ে টুইট করেছেন বীরেন্দ্র সহবাগ। প্রাক্তন ওপেনারের ইনস্টাগ্রাম পোস্টে বিস্মৃতির পর্দা সরিয়ে নতুন করে আলোচনায় দেশের কনিষ্ঠতম শহিদ, ওড়িশার ঢেঙ্কানলের বাজি রাউত।