বন্যা-বিধ্বস্ত উত্তরাখণ্ডের টনকপুর থেকে উদ্ধার শিশুকে। বুধবার। ছবি: পিটিআই।
বৃষ্টি-প্লাবন-ধসে বিপর্যস্ত উত্তরাখণ্ড। বিধ্বস্ত নৈনিতাল। বিচ্ছিন্ন আলমোরা, রানিখেত। প্রাকৃতিক দুর্যোগে এখনও পর্যন্ত ৫২ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিখোঁজ বহু। এই পাহাড়ি রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় শয়ে শয়ে পর্যটক আটকে পড়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিংহ ধামি জানিয়েছেন, দুর্যোগে রাজ্যে ‘ভয়ঙ্কর ক্ষতি’ হয়েছে এবং যা স্বাভাবিক হতে বহু দিন সময় লাগবে।
অসময়ের বৃষ্টিতে গোটা উত্তরাখণ্ডের পরিস্থিতি ভয়াবহ। গত কাল মেঘ ভাঙা বৃষ্টি নামে কুমায়ুনের শৈল শহর নৈনিতালে। বৃষ্টি এবং ধসে শহরে প্রবেশের প্রধান তিনটি রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর কর্মীরা আজ একটি রাস্তা খুলেছেন বটে, কিন্তু তার এমনই দশা যে গাড়ি চলাচল শুরু হতে অনেক সময় লাগবে। গোটা রাজ্য থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল নৈনিতাল। ভেসে গিয়েছে নৈনি হ্রদ। ওই জলাশয় লাগোয়া মল রোড প্লাবিত। নৈনিদেবী মন্দির চত্বর এখনও জলের নীচে।
গোটা রাজ্য থেকে বিচ্ছিন্ন রানিখেত এবং আলমোরা। কোনও জ্বালানি পাওয়া যাচ্ছে না। যতটুকু মিলছে তা-ও জরুরি পরিষেবায় ব্যবহৃত হচ্ছে। বিদ্যুৎ সরবরাহ ২৪ ঘণ্টা পরে ফিরলেও ভোল্টেজ খুবই কম। অবস্থা করুণ আলমোরারও। গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে সাত জন প্রাণ হারিয়েছেন। বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর কর্মীরা ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে উদ্ধার কাজ শুরু করেছেন। আলমোরায় প্লাবিত হয়েছে কোশী নদী। বেশ কয়েকটি বাঁধের গেট খুলে দেওয়া হয়েছে। কুমায়ুনের উধম সিংহ নগরের নানক সাগর বাঁধের দু’টি গেট খুলে দেওয়ায় অনেক গ্রাম প্লাবিত। চামোলি জেলার পরিস্থিতিও বেশ খারাপ। জেলাশাসক হিমাংশু সিংহ জানিয়েছেন, ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে উদ্ধারের কাজ শুরু করেছে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী।
প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, এখনও পর্যন্ত উধম সিংহ নগর ও নৈনিতাল থেকে আটকে পড়া ১৩০০ মানুষকে উদ্ধার করেছে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। উত্তরকাশী, চামোলি, দেহরাদূন, পিথোরাগড়, হরিদ্বারে ত্রাণ ও উদ্ধার কাজ চলছে জোরকদমে। পরিবহণ ব্যবস্থা কার্যত ভেঙে পড়ায় আটকে পড়েছেন পর্যটকেরা। নৈনিতালে এই সময় বহু মানুষ বেড়াতে যান। স্থানীয় প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় শুধু নৈনিতালেই কয়েকশো পর্যটক আটকে পড়েছেন। রামনগর-রানিখেত এলাকায় লাগোয়া লেমন ট্রি রিসর্টেই আটকে অন্তত ২০০ জন পর্যটক। রিসর্ট চত্বরে গলা সমান জল। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ছবিগুলিতে দেখা গিয়েছে, রিসর্টের সামনে গাড়িগুলি জলে ডুবে রয়েছে।
সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, দুর্যোগের কারণে দুর্ঘটনায় গত ২৪ ঘণ্টায় ৪২ জনের মৃত্যু হয়েছে। সব ক’টি দুর্ঘটনাই ঘটেছে কুমায়ুন অঞ্চলে। মৃতদের মধ্যে ২৮ জনই নৈনিতালের বাসিন্দা। এ ছাড়া আলমোরা এবং চম্পাওয়াতে ছ’জন করে মোট ১২ জন, পিথোরাগড় এবং উধম সিংহ নগরে এক জন করে মোট দু’জনের মৃত্যু হয়েছে।এই কুমায়ুনের দু’টি আবহাওয়া কেন্দ্রে গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বকালীন রেকর্ড বৃষ্টি হয়েছে। ২৪ ঘণ্টায় মুক্তেশ্বরে ৩৪০.৮ মিলিমিটার এবং ৪০৩.২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে পন্থনগরে। আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা বিক্রম সিংহ জানিয়েছেন, গত ৫০ বছরে এত বৃষ্টিপাত এই রাজ্যে হয়নি। হাওয়া অফিসের পূর্বাভাস, আগামিকাল থেকে আবহাওয়ার উন্নতি হতে পারে।
দুর্যোগে কতটা ক্ষতি হয়েছে তা আজ সরেজমিনে খতিয়ে দেখেন মুখ্যমন্ত্রী ধামি। বৃষ্টিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত কুমায়ুন অঞ্চল আকাশপথে ঘুরে দেখেন তিনি। পরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘ভয়ঙ্কর ক্ষতি হয়েছে। এই ক্ষতি মেরামতে অনেক সময় লাগবে। রাস্তাগুলি ভেঙে গিয়েছে। কয়েকটি নদী গতিপথ পাল্টানোয় গ্রামগুলি দারুণ ক্ষতির মুখে পড়েছে।’’ দুর্যোগে ভেঙে গিয়েছে বহু বাড়ি। এাণের কাজে প্রত্যেক জেলাকে ১০ কোটি করে টাকা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি ঘোষণা করেছেন, দুর্যোগে মৃত ব্যক্তিদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৪ লক্ষ টাকা করে দেওয়া হবে। ধামি জানিয়েছেন, রাজ্যের পরিস্থিতির কথা প্রধানমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানিয়েছেন তিনি। উত্তরাখণ্ডের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগপ্রকাশ করেছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধী। ত্রাণ ও উদ্ধারের কাজে কংগ্রেস কর্মীদের শামিল হওয়ার আবেদন জানিয়েছেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy