ছবি: রয়টার্স
কেন্দ্রের পথে হেঁটেই বিভিন্ন রাজ্য জানিয়ে দিল, অক্সিজেনের অভাবে সেখানে কোনও কোভিড রোগীর মৃত্যু হয়নি। সূত্রের দাবি, এখনও পর্যন্ত ১৩টি রাজ্য এই বিষয়ে কেন্দ্রের প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে। তাদের মধ্যে একমাত্র পঞ্জাব জানিয়েছে, সেই রাজ্যে ‘সম্ভবত’ এক জন কোভিড রোগীর অক্সিজেনের অভাবে মৃত্যু হয়েছিল। তবে পশ্চিমবঙ্গ-সহ অনেক রাজ্য এখনও কেন্দ্রকে কোনও উত্তর দেয়নি। কেন্দ্র ও রাজ্যগুলির জবাব দেখে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, গত এপ্রিল-মে মাসে অক্সিজেনের ঘাটতি নিয়ে গোটা দেশে যে হাহাকার পড়েছিল, তা হলে তা কিসের জন্য!
গত এপ্রিল-মে মাসে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়েছিল ভারতে। সেই সময়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অক্সিজেনের অভাবে মৃত্যুর ঘটনা সামনে আসতে শুরু করে। অক্সিজেনের ঘাটতি মেটাতে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় হাসপাতালগুলি। পরিস্থিতি দেখে শিল্প ক্ষেত্রে কয়েক সপ্তাহের জন্য অক্সিজেনের ব্যবহার বন্ধ রাখে কেন্দ্র। সেই সময়ে দেশে অক্সিজেনের অভাবে ঠিক কত জনের মৃত্যু হয়েছিল, তা বাদল অধিবেশনে কেন্দ্রের কাছে জানতে চান বিরোধী সাংসদেরা। জবাবে কেন্দ্র জানিয়েছিল, অক্সিজেনের অভাবে কত জন কোভিড রোগীর মৃত্যু হয়েছে, তাদের কাছে সেই তথ্য নেই। কেন্দ্রের যুক্তি ছিল, কোনও কোভিড রোগী কী কারণে মারা গিয়েছেন, সেই তথ্য রাজ্যের কাছে থাকে। রাজ্য অক্সিজেনের অভাবে কোনও মৃত্যুর তথ্য কেন্দ্রকে জানায়নি। তাই কেন্দ্রের কাছে এ বিষয়ে কোনও পরিসংখ্যান নেই। কেন্দ্রের ওই উত্তরে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয় রাজনৈতিক মহলে।
পরে বিষয়টি নিয়ে ধোঁয়াশা এড়াতে তৎপর হয় সরকার। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময়ে অক্সিজেনের অভাবে কত জন কোভিড রোগী মারা গিয়েছেন, সেই তথ্য জানতে চেয়ে রাজ্যগুলির মুখ্যসচিবদের চিঠি দেয় কেন্দ্র। আজ এই প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য মন্ত্রকের যুগ্মসচিব লব আগরওয়াল বলেন, ‘‘মৃত্যু সংক্রান্ত যে প্রশ্ন সংসদে করা হয়েছিল, রাজ্যগুলিকেও সেই প্রশ্ন পাঠানো হয়েছিল। জানতে চাওয়া হয়েছিল, দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময়ে কত জন করোনা রোগী অক্সিজেনের অভাবে মারা গিয়েছিলেন। এখন পর্যন্ত যা উত্তর এসেছে, তাতে অক্সিজেনের অভাবে মৃত্যুর কথা জানায়নি কোনও রাজ্যই। কেবল একটি রাজ্য জানিয়েছে, সেখানে সম্ভবত এক জন অক্সিজেনের অভাবে দ্বিতীয় ঢেউয়ে মারা গিয়েছিলেন।’’ ঠিক কতগুলি রাজ্য ওই উত্তর এখনও পর্যন্ত দিয়েছে, তা অবশ্য স্পষ্ট করেননি স্বাস্থ্য কর্তা। যদিও সূত্রের মতে, এখন পর্যন্ত ১৩টি রাজ্য কেন্দ্রকে চিঠি দিয়ে তাদের জবাব পাঠিয়েছে। তাদের মধ্যে কেবল পঞ্জাব ‘সম্ভবত’ একটি মৃত্যুর কথা জানিয়েছে। বাকিরা এ প্রসঙ্গে নীরব। পশ্চিমবঙ্গও এখনও উত্তর দেয়নি বলেই জানা গিয়েছে।
কেন্দ্র যখন জানিয়েছিল অক্সিজেন সংক্রান্ত মৃত্যুর তথ্য তাদের কাছে নেই, তখন এ নিয়ে সরব হয়েছিলেন বিরোধী-শাসিত রাজ্যের নেতা-নেত্রীরা। প্রশ্ন উঠেছে এখন কেন নিজেদের তথ্য কেন্দ্রকে জানাচ্ছে না রাজ্যগুলি? স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, সবই দায় এড়ানোর চেষ্টা। স্বাস্থ্য আসলে রাজ্যের বিষয়। এ ক্ষেত্রে একটি মৃত্যুও অক্সিজেনের অভাবে হলে তার দায় এসে পড়বে রাজ্য প্রশাসনের উপরে। পরে সেই তথ্যকে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের বিরুদ্ধে প্রচারে ব্যবহার করতে পারে কেন্দ্রের শাসক দল। নিজেদের ত্রুটি যাতে সামনে না আসে, তাই কেন্দ্রকে অক্সিজেনের অভাবে মৃত্যুর তথ্য দেওয়ার বিষয়টি এড়িয়ে যেতে চেয়েছে রাজ্যগুলি। এতে আখেরে লাভ হল কেন্দ্রেরই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy