পরিচয়হীন? নাগরিকত্ব প্রমাণের অপেক্ষায়
ডি-ভোটার ও বিদেশি চিহ্নিত হওয়ায় অসমে প্রচুর ভারতীয়কে দিনের পর দিন ভুগতে হচ্ছে। অভিযোগটা অনেক দিনের। বিধানসভায় পেশ করা রাজ্য সরকারের তথ্যে ফের প্রমাণ মিলল তার। গত কাল শীতকালীন অধিবেশনের প্রথম দিন বিধায়ক আমিনুল ইসলাম, আবদুর রশিদ মণ্ডলের প্রশ্নের জবাবে রাজ্য সরকার জানায়, চলতি বছরে ৩১ জুলাই পর্যন্ত অসমের ১০০টি ফরেনার্স ট্রাইবুনালে ৪,৩৪,৬৫৪টি বিদেশি সংক্রান্ত মামলা দায়ের হয়েছে। তার মধ্যে ২,২০,৮৩৩টিতে রায়দান হয়েছে। ১,৩৪,৮১০ জনকে বিদেশি চিহ্নিত করা হয়েছে। আর ভারতীয় ঘোষিত হয়েছেন ১,১৬,০৩৫ জন। এই লক্ষাধিক ভারতীয়কে সব প্রমাণ থাকা সত্বেও বছরের পর বছর হেনস্থার মুখে পড়তে হয়েছে। লড়তে হয়েছে মামলা। খরচ করতে হয়েছে প্রচুর অর্থ। ভারতীয় হয়েও বিদেশি ‘তকমা’ নিয়ে বেঁচে থাকার মানসিক গ্লানি তো বাড়তি পাওনা।
যাঁরা বিদেশি ঘোষিত হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে ৮১,৯৭১ জনের ক্ষেত্রে একপাক্ষিক রায় ঘোষণা হয়েছে। অর্থাৎ, তাঁরা বিভিন্ন কারণে আদালতে হাজির হয়ে আত্মপক্ষ সমর্থন করতে পারেননি। ফলে ট্রাইবুনাল তাঁদের বিদেশি ঘোষণা করেছে বিনা শুনানিতেই। শুনানিতে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ পেলে এঁদের কত শতাংশ নিজেদের ভারতীয় বলে প্রমাণ করতে পারতেন, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।
রাজ্য সরকার জানাচ্ছে, অসম চুক্তির পর থেকে চলতি বছর জুলাই পর্যন্ত রাজ্যে বিদেশি হিসেবে চিহ্নিত হওয়া মাত্র ২৯,৯৫৯ জনকে ‘বহিষ্কার’ করা গিয়েছে। তার মধ্যে ২৪৪৫ জনকে ‘পুশ ব্যাক’ করা হয়েছে। ঘোষিত বিদেশিদের মধ্যে দু’জন আফগানিস্তানের ঠিকানা দেওয়ায় তাঁদের সে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। পাঁচ জনকে বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে। বাকিদের মধ্যে ১০৫ জন বাংলাদেশের ঠিকানা দিয়েছেন। সেই ঠিকানা যাচাইয়ের কাজ চলছে। বাকিরা ডিটেনশন শিবিরে রয়েছেন বা জামিনে মুক্ত আছেন। কিন্তু তাঁরা বিদেশের কোনও ঠিকানা দেননি।
মানবাধিকার সংগঠনগুলির দাবি, ডিটেনশন শিবিরে বন্দিদের বাংলাদেশি হিসেবে ধরে নিয়ে সরকার তাঁদের ‘নিজের দেশের ঠিকানা’ দিতে বললেও, বংশানুক্রমে বা দীর্ঘদিন ধরে অসমের মাটিতেই বসবাস করা এই মানুষগুলি ভারতেরই বাসিন্দা। তাই তাঁদের পক্ষে কোনও ভাবেই বাংলাদেশের ঠিকানা দেওয়া সম্ভব নয়। আর আদতে বাংলাদেশের বাসিন্দা হলে, কেউই ঠিকানা গোপন করে বছরের পর বছর জেলে পচতে চাইবেন না।
বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনারের দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, সরকারি ভাবে তাঁদের কাছে বন্দি বাংলাদেশিদের যে তালিকা দেওয়া হয়েছিল, তার মধ্যে গত দু’বছরে অধিকাংশ ব্যক্তিরই ঠিকানা যাচাই করে দেশের ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়েছে। আর জনা তিরিশ বাংলাদেশি অসমের ডিটেনশন সেন্টারগুলিতে বন্দি আছেন। প্রশ্ন উঠছে, তা হলে বাকি আট শতাধিক বন্দির পরিচয় কী?
ডি-ভোটার তথা সন্দেহজনক ভোটারের ক্ষেত্রে সরকারি তথ্যে দেখা যাচ্ছে চলতি বছর নভেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন ফরেনার্স ট্রাইবুনাল মোট ৩৮,৬০৩ জনকে বিদেশি ঘোষণা করেছে। ভারতীয় ঘোষিত হয়েছেন ৬৫,২০৩ জন। ফলে এই ইভযোগ আরও জোরালো হল যে, পুলিশের সীমান্ত শাখা যথেচ্ছ ভাবে ভাষিক সংখ্যালঘুদের ডি-ভোটার হিসেবে নোটিস পাঠায়। এবং তাঁদের বেশির ভাগই ভারতীয়। বর্তমানে ডিটেনশন শিবিরে বন্দি আছেন ৮২ জন ডি-ভোটার। সবচেয়ে বেশি ডি-ভোটার, ৪৬ জন আছেন তেজপুর ডিটেনশন শিবিরে। বাকি ডি-ভোটার আছেন বরপেটা, শোণিতপুর ও নগাঁওয়ে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy