যাবতীয় কৃতিত্ব এত দিন একাই পেয়ে আসছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে সেনার ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’-এর সেই কৃতিত্ব এ বার সঙ্ঘকেও তুলে দিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পর্রীকর। আজ তিনি বলেছেন, এই ‘সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা’র পিছনে রয়েছে আরএসএস-এর শিক্ষা।
মোদীর রাজ্য গুজরাতেই আজ এক অনুষ্ঠানে প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য, ‘‘মহাত্মা গাঁধীর গ্রাম থেকে আসা একজন প্রধানমন্ত্রী, গোয়া থেকে আসা প্রতিরক্ষামন্ত্রী, আর সার্জিক্যাল স্ট্রাইক— একেবারে অন্য রকম জমায়েত। কিন্তু মিল রয়েছে গভীরে আরএসএসের শিক্ষায়।’’
পর্রীকরের এই মন্তব্যের পরে কংগ্রেস মুখপাত্র মণীশ তিওয়ারির কটাক্ষ, ‘‘সেনা অভিযানের কৃতিত্ব প্রতিরক্ষামন্ত্রী যে ভাবে আরএসএস-কে দিচ্ছেন, তা থেকে দু’টি সিদ্ধান্তে পৌঁছনো যায়। এক, দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জাতীয় অস্বস্তির কারণ। দুই, উনি প্রতিরক্ষামন্ত্রী হওয়ারই যোগ্য নন।’’ তিওয়ারির আরও প্রশ্ন, ১৯৬৫-র ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের নেতৃত্ব দেওয়া প্রধানমন্ত্রী লালবাহাদুর শাস্ত্রী, প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওয়াই ভি চহ্বাণ, ১৯৭১-এর বাংলাদেশ যুদ্ধের নেতৃত্বে থাকা প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গাঁধী, প্রতিরক্ষামন্ত্রী বাবু জগজীবন রাম, ফিল্ডমার্শাল শ্যাম মানেকশ— এঁরাও কি আরএসএস-এর শিষ্য ছিলেন?
কংগ্রেসের আক্রমণ স্বাভাবিক। গোড়া থেকেই তাদের যুক্তি হল, অভিযানটা চালাল সেনাবাহিনী। অথচ রাজনৈতিক স্তরে বিজেপি তার পুরো কৃতিত্বই মোদীকেই দিচ্ছে। ঘটনা হল, ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’-এর নামেই বিজেপি জোরদার প্রচারে নেমে পড়েছে ভোটমুখী উত্তরপ্রদেশে। মোদীকে রাম সাজিয়ে, পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে রাবণ সাজিয়ে সেনা-অভিযানের প্রচারে পোস্টার-ব্যানারও পড়েছে সেখানে। বিজেপির এ কৌশলের মুখে মোদীর বিরুদ্ধে জওয়ানদের ‘রক্তের দালালি’র অভিযোগ তুলেছেন রাহুল গাঁধী। তাতে বিজেপিও পাল্টা আক্রমণ করেছে তাঁকে। কংগ্রেস নেতা তথা প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম দাবি করেছেন, দু’তিন বছর আগে নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে এ ধরনের অভিযান হয়। কিন্তু তার রাজনৈতিক ফায়দা তোলার চেষ্টা হয়নি।
তবু আজ পর্রীকর স্পষ্ট করে দিয়েছেন, সমালোচনা হলেও সেনা অভিযানের রাজনৈতিক কৃতিত্ব নেওয়ার রাস্তা থেকে সরছে না বিজেপি তথা মোদী সরকার। অনেকের মতে, আরএসএস থেকে উঠে আসা, সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবতের প্রিয়পাত্র পর্রীকর এই কারণেই এক কদম এগিয়ে কৃতিত্ব দিয়েছেন সঙ্ঘের শিক্ষাকে। বোঝাতে চেয়েছেন, আরএসএস লাঠিখেলা শেখানো থেকে জাতীয়তাবাদের শিক্ষার মাধ্যমে যে সাহস, শৌর্য, সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা, মানসিক দৃঢ়তার শিক্ষা দেয়, তা থেকেই মোদী সরকার এই সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছে।
এখানেই কংগ্রেস নেতাদের অভিযোগ, সেনা জওয়ানদের ‘হাতের পুতুল’ হিসেবে দেখাতে চাইছে মোদী সরকার। পর্রীকর এর আগে সেনাকে তুলনা করেছিলেন রামায়ণের হনুমানের সঙ্গে। তাঁর যুক্তি ছিল, হনুমানের সাগর পাড়ি দেওয়ার ক্ষমতা থাকলেও তাঁর নিজেরই সেই ক্ষমতার কথা জানা ছিল না। জাম্বুবান হনুমানকে সেই কথা জানিয়েছিলেন। একই ভাবে সেনারও নিজের শক্তি, ক্ষমতা, অভিযানের প্রক্রিয়ার কথা জানা ছিল না। পর্রীকরের দাবি, আগে সংঘর্ষবিরতি চুক্তি ভেঙে পাকিস্তানের দিক থেকে গুলি চালানো হতো। এখন যেটা বদলেছে, তা হল, সেই গুলির জোরালো জবাব দেওয়া হচ্ছে।
মঙ্গলবার রয়েছে বিদেশ মন্ত্রকের স্থায়ী কমিটির বৈঠক। সেখানে সেনা অভিযান নিয়ে বিরোধী সাংসদদের প্রশ্ন তোলার সম্ভাবনা রয়েছে। অবশ্য বৈঠকে এ নিয়ে বলার কথা রয়েছে প্রতিরক্ষাসচিব, ডিজিএমও-র। আজ পর্রীকর বলেছেন, ‘‘অভিযান থেকে আজ পর্যন্ত, কিছু রাজনীতিক প্রমাণ চাইছেন। যখন ভারতীয় সেনা কিছু বলে, আমাদের উচিত তা বিশ্বাস করা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy