Advertisement
৩০ জানুয়ারি ২০২৫
Manmohan Singh

‘গুরু’ ছিলেন মনমোহনই

আমেরিকা আজ কৃতজ্ঞ চিত্তে স্মরণ করেছে মনমোহনকে। সে দেশের বিদেশসচিব অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন, “ভারত-আমেরিকা কৌশলগত সম্পর্কের অন্যতম বড় রূপকার হলেন মনমোহন সিংহ।”

মনমোহন সিংহ।

মনমোহন সিংহ। —ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৬:১০
Share: Save:

আজ ‘বিশ্বগুরু’ অবতারে বর্তমান সরকার বিশ্বে যে দাপিয়ে প্রচার চালাচ্ছে, তার নেপথ্যে ছিল প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের অনমনীয় মানসিকতা। আজকের ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ভারতকে ভারসাম্যের কূটনীতিতে প্রতিষ্ঠাও করেছিল তাঁর শাসনকালের বিদেশনীতি। তাঁর প্রয়াণের পরে এই মর্মেই সরব কূটনৈতিক বিশ্ব। সেই সঙ্গে বার বার উঠে আসছে সরকার পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি নিয়েও আমেরিকার সঙ্গে ভারতের অসামরিক পরমাণু চুক্তি সম্পন্ন করার পিছনে মনমোহনের লড়াইয়ের কথা।

আমেরিকা আজ কৃতজ্ঞ চিত্তে স্মরণ করেছে মনমোহনকে। সে দেশের বিদেশসচিব অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন, “ভারত-আমেরিকা কৌশলগত সম্পর্কের অন্যতম বড় রূপকার হলেন মনমোহন সিংহ। গত দু’দশকে এই দু’টি দেশ যেখানে পৌঁছতে পেরেছে, তার ভিত গড়েছিল তাঁর কাজ।” ভারত আমেরিকা অসামরিক পরমাণু চুক্তিকে বাস্তবায়িত করতে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকার কথা স্মরণ করিয়ে ব্লিঙ্কেন বলেন, “দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে সেটি ছিল তাৎপর্যপূর্ণ এক বিনিয়োগ।” তাঁর কথায়, “ভারতে তাঁকে মনে রাখা হবে অর্থনীতির সংস্কারক হিসাবে যিনি দেশের অর্থনৈতিক বৃদ্ধিতে নির্ণায়ক ভূমিকা নিয়েছিলেন। আমরা সর্বদা মনে রাখব ভারত এবং আমেরিকাকে কাছে আনার জন্য তাঁর অবদানকে।”

কূটনৈতিক শিবিরের মতে, আমেরিকার সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়তে গিয়ে সে সময় রাশিয়ার বন্ধুত্বও হারাতে হয়নি ভারতকে। সব মিলিয়ে ওই চুক্তি ভারতকে এমন এক জায়গায় পৌঁছে দিয়েছিল, যেখান থেকে বিশ্ব কূটনীতির সব অক্ষের সঙ্গেই সুসম্পর্কের ভিত্তি তৈরি হয়ে যায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যাকে আজও কাজে লাগাতে পারছেন নরেন্দ্র মোদী।

একই সঙ্গে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনমোহনের প্রয়াণের পরে মনে করিয়ে দিচ্ছেন সাম্প্রতিক ইতিহাসকে। পোখরানে সফল পরমাণু পরীক্ষার পর পশ্চিমি দুনিয়ার চক্ষুশূল হয় ভারত। আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার নিষেধাজ্ঞা, পশ্চিমি দুনিয়ার 'বয়কট', আমেরিকা-সহ অন্যান্য পরমাণু শক্তিধর দেশগুলির রক্তচক্ষু। বিরোধী শিবিরে থাকা মনমোহন সিংহ রাজ্যসভার একাধিক বক্তৃতায় সে দিন ব্যাখ্যা করেছিলেন, দেশকে অর্থনৈতিক ভাবে সুদৃঢ় করতে এবং ভূরাজনীতিতে ভারতের গুরুত্ব বাড়াতে, পশ্চিম-সহ গোটা বিশ্বের দরজা ভারতের জন্য খুলে দেওয়া কতটা জরুরি। ইউপিএ সরকারের প্রথম দিন থেকেই সেই লক্ষ্যে স্থির থাকেন মনমোহন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন কাজটা ছিল খুবই কঠিন। আমেরিকা তখন পাকিস্তানের 'বন্ধু'। আর ভারত-বন্ধু রাশিয়া বরাবরই আমেরিকা-বিরোধী। তাই আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্কের দরজা খুলতে চাইলে রাশিয়ার রোষে পড়ার সমূহ সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু সে সব আশঙ্কার মধ্যেই মনমোহন তৎকালীন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন। তিনি বুঝেছিলেন, আমেরিকার সঙ্গে অসামরিক পরমাণু চুক্তি করতে পারলে সেটা যে শুধু ভারতের শক্তি চাহিদা পূরণ করবে, তাই নয়। একই সঙ্গে পরমাণু শক্তিধর দেশগুলির মধ্যে তথা পশ্চিমী দুনিয়ার নজরে ভারতের 'অচ্ছুৎ' তকমাটাও কেটে যাবে। তিনি আমেরিকাকে সফল ভাবে বোঝাতে সক্ষম হয়েছিলেন, ভারতের বাজার আমেরিকাকে আর্থিক ভাবে বিরাট ফায়দা দিতে পারবে।

আমেরিকার সঙ্গে পরমাণু চুক্তি চূড়ান্ত হওয়ার আগে বিরোধিতা শুরু করেছিল প্রকাশ কারাট-সীতারাম ইয়েচুরিদের বামফ্রন্ট। সেই ইউপিএ সরকারের প্রধান শরিক ছিল বামেরা। কোনও ভাবেই পরমাণু চুক্তি করা যাবে না, এই দাবিতে সরকারের থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে নিলেন কারাটরা। অবধারিত ভাবে সরকার পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা। একই সঙ্গে প্রশ্নের মুখে পরমাণু চুক্তির ভবিষ্যৎ। কিন্তু চমকপ্রদ ভাবে সমাজবাদী পার্টির সমর্থনে সে সময় সরকার বেঁচে যায়। সব বাধা পেরিয়ে পরমাণু চুক্তি চূড়ান্ত করেন মনমোহন। এর পর বদলে যায় আমেরিকা এবং ইউরোপের অন্য দেশের সঙ্গে ভারতের ভূকৌশলগত সম্পর্কের মেজাজ।

অন্য বিষয়গুলি:

manmohan singh dr. manmohan singh Foreign Policy Former Prime Minister of India Politician Death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy