Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
nagaland

Nagaland Firing: গণতন্ত্রে বিশ্বাসী হলে শাহ ইস্তফা দিতেন: শর্মিলা

ভিডিয়ো কলে বেঙ্গালুরু থেকে ৪৯ বছরের তরুণী বলেন, ‘‘আফস্পা (সশস্ত্র বাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা আইন) প্রত্যাহার করা জরুরি।

শর্মিলা চানু।

শর্মিলা চানু। নিজস্ব চিত্র।

চৈতালি বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০২১ ০৭:১১
Share: Save:

নাগাল্যান্ডে নিরস্ত্র গ্রামবাসীর উপর সেনার গুলিচালনার ঘটনা শর্মিলাকে ফিরিয়ে নিয়ে গিয়েছে আফস্পা-দিনের স্মৃতিতে। যেখানে তিনি নিজের রাজ্যে মণিপুরের ইম্ফলে একটি সেতুর উপরে সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছেন। উল্টো দিক থেকে আসছে সেনা-ট্রাক। সামনের সিটে তিন সেনা। গাড়ি থামে। এক সেনা নেমে আসেন বেত হাতে। সেতুর পাশে দাঁড়ানো এক রিকশাচালকের পিঠে পড়ে সেই বেত।

শর্মিলা বলেন, ‘‘সে দিন কী ভাবে বাড়ি ফিরে এসেছিলাম, মনে নেই। ঘটনাটা দেখে হাত-পা নিথর হয়ে গিয়েছিল।’’ তাঁর এই অভিজ্ঞতা একটি কবিতায় লিপিবদ্ধও করেছেন শর্মিলা।

ভিডিয়ো কলে বেঙ্গালুরু থেকে ৪৯ বছরের তরুণী বলেন, ‘‘আফস্পা (সশস্ত্র বাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা আইন) প্রত্যাহার করা জরুরি। এই দাবির জন্য আমার অর্ধেক জীবন লড়াই করে কেটে গিয়েছে। আজ আমার সন্তান, পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছি। অথচ, ভাবনাটা ছাড়তে পারি না কখনও।’’

মণিপুরের মেয়ে যে ইরম শর্মিলা চানুকে চেনে দেশ, তাঁর ১৬ বছর অনশন আফস্পা প্রত্যাহারের দাবিতেই। উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিতে নাগরিকের অধিকার আদায়ে মায়ের থেকে দূরে থেকেছেন শর্মিলা। শেষ অবধি পণরক্ষা হয়নি। মায়ের সঙ্গে দেখাও নয়। ২০১৬ সালে অনশন ছেড়ে নিজের মানুষের থেকে দূরে চলে গিয়েছেন ইম্ফলের মেয়ে। ঘরের মেয়ের অনশন ভেঙে স্বাভাবিক দিনযাপন সহজ চোখে দেখেনি মণিপুর। বিধানসভা নির্বাচনে দাঁড়িয়েও হেরে গিয়েছেন শোচনীয় ভাবে। শর্মিলা বলেন, ‘‘আমি কখনওই আন্দোলনের মুখ বা নেত্রী হতে চাইনি। আমি চেয়েছিলাম মানুষের অধিকারের লড়াই জিতে ফিরতে। কিন্তু সিস্টেম সহজে ছেড়ে আসতে চায় না কেউ। তাই নির্বাচনে আমি মণিপুরের মানুষকে পাশে পাইনি। তবে আমার লড়াইয়ের জেদ, আমার ত্যাগ কতটা ছিল, তা আমিই জানি।’’

নাগাল্যান্ডের ঘটনার পর আফস্পা প্রত্যাহারের দাবি জোরালো হয়েছে। এই প্রসঙ্গে শর্মিলা বলছেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যদি আফস্পা প্রত্যাহার করেন, আমি নিজে ওঁকে নোবেল শান্তি পুরস্কারে মনোনীত করার জন্য প্রচার করব, কথা দিলাম। দেশের নাগরিক জানার সুযোগ পাক, প্রকৃত গণতন্ত্র কী? বিশেষ ক্ষমতা আইন প্রয়োগ করে মানুষকে যখন-তখন জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তুলে
নিয়ে যাওয়া বা গুলি করে মারা মানবাধিকার লঙ্ঘন।’’

‘লৌহকন্যা’ শর্মিলা আবেগেরই নাম। তাই ভিডিয়ো কলে সাক্ষাৎকার দিতে বসেও চোখ ভিজে যায় তাঁর। তিনি বলে চলেন, ‘‘ভারতীয় সেনা কোনও প্রতিরোধ ছাড়াই ছয় খনি শ্রমিককে গুলি চালিয়ে হত্যা করল। এর পর যখন স্থানীয় গ্রামবাসীরা আত্মরক্ষার জন্য প্রতিরোধের চেষ্টা করছিল, তখন তারা আরও সাত জন নাগরিককে হত্যা করল এবং আরও দু’জন জখম হল। ভারতীয় সেনার কাছে এটি সফল সামরিক অভিযান!’’ তার পরেই শর্মিলার ক্ষোভ, ‘‘মাননীয় অমিত শাহ শুধুমাত্র ক্ষমা চেয়েছেন। সত্যিকারের গণতন্ত্রে বিশ্বাসী হলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এর দায় নিয়ে পদত্যাগ করতেন এবং ওই সেনাদের সরাসরি নাগরিক খুন করার দায়ে গ্রেফতার করা হত। এই বিষয়ে আমার মতামত জানতে চেয়ে কী লাভ! এই রাষ্ট্র সত্যিই কি দেশের কোনও নাগরিককে মূল্য দেয়?’’

শর্মিলার ভেজা চোখ কঠিন হয়। বলেন, ‘‘সংবাদমাধ্যমেও কিন্তু আমাদের, উত্তর-পূর্বের মানুষদের ভারতীয় নাগরিক বলা হয় না। আমাদের ডাকা হবে, নাগা, কুকি, মেটেই বোডো ইত্যাদি জনজাতির নাম ধরে!’’ তার পরেই বলেন, ‘‘হ্যাঁ। আমরা ক্রুদ্ধ। আমার জানতে ইচ্ছা হয়, দেশের বাকি নাগরিকেরা রেগে যাচ্ছেন না কেন! আসলে আমরা আবার সব কিছু ভুলে যাব। এবং কোনও কিছু না বদলালেও পাশে থাকার ভান করব।’’

অন্য বিষয়গুলি:

nagaland BSF Amit Shah
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy