সেনাপ্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী। —ফাইল ছবি।
মণিপুর সরকার, ওই রাজ্যে মোতায়েন আধাসেনা এবং সেনাবাহিনীর প্রাপ্ত তথ্যে যে গরমিল রয়েছে, তা আজ স্পষ্ট হয়ে গেল সেনাপ্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদীর কথায়। মণিপুরের পরিস্থিতিকে ‘স্থিতিশীল হলেও উদ্বেগজনক’ বলে মন্তব্য করে সেনাপ্রধান বলেছেন, রাজ্যটিতে সংঘর্ষ ঘিরে নানা কাহিনি ভেসে বেড়াচ্ছে, যা পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করে তুলেছে।
সম্প্রতি ড্রোনের মাধ্যমে মণিপুরে বোমা ফেলা হয়েছিল বলে দাবি করেছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নিয়োগ করা নিরাপত্তা উপদেষ্টা কুলদীপ সিংহ। মায়ানমার সীমান্ত পেরিয়ে অন্তত ৯০০ কুকি জঙ্গির মণিপুরে অনুপ্রবেশের খবরও উড়িয়ে দেননি তিনি। কিন্তু আজ সেনাপ্রধান দাবি করেছেন, ড্রোনবাহিত বোমার খবর ভিত্তিহীন। ৯০০ জঙ্গির অনুপ্রবেশের বিষয়েও কোনও তথ্য অন্তত সেনার কাছে নেই। মায়ানমারের সঙ্গে মণিপুরের সীমান্ত থাকা এবং সেখানে অনুপ্রবেশের সমস্যা পরিস্থিতি ঘোরালো করে তুলেছে বলে অবশ্য মেনে নেন সেনাপ্রধান। তাঁর কথায়, ‘‘মায়ানমারে জুন্টা সেনাবাহিনীর সঙ্গে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর লড়াই চলছে। তার ফলে সশস্ত্র অনুপ্রবেশ ঘটছে ভারতে। এ যেন একের সঙ্গে আর এক সমস্যা বিনামূল্যে পাওয়া।’’ কিন্তু ৯০০ জঙ্গির অনুপ্রবেশের তত্ত্ব মানেননি তিনি। সেনাপ্রধান বলেন, ‘‘এই বিষয়ে অনুসন্ধান করে কিছুই পাওয়া যায়নি। ড্রোনের মাধ্যমে মণিপুরের উপদ্রুত এলাকায় বোমা ফেলার যে দাবি উঠেছিল, তা-ও ভিত্তিহীন বলে জানা গিয়েছে।’’ বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, উপেন্দ্রের বক্তব্য থেকেই স্পষ্ট, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এবং সেনার কাছে পরস্পরবিরোধী তথ্য রয়েছে। এমন হলে সেনা-আধাসেনার সমন্বয় ধাক্কা খেতে পারে।
আজ ভারতীয় সেনা আয়োজিত দ্বিতীয় ‘চাণক্য প্রতিরক্ষা আলোচনা’য় বক্তব্য রাখতে গিয়ে সেনাপ্রধান জানান, মণিপুরের পরিস্থিতি উত্তপ্ত হওয়ার পিছনে গুজবের হাত ছিল। তাঁর কথায়, ‘‘গত বছর মে মাসে গুজব ওঠে ‘অ্যাংলো-কুকি ওয়ার সেন্টিনারি গেট’ পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তা ঝামেলা শুরুর অন্যতম কারণ। বাস্তবে তেমন কিছুই হয়নি। কিন্তু ওই গুজবের ফলে শুরু হওয়া সংঘর্ষ এখনও জারি। তাই ভাষ্যের উপরে নিয়ন্ত্রণ আনা সব থেকে জরুরি।’’
মণিপুরের কাংপোকপি জেলায় কুকি জঙ্গি সংগঠন ইউনাইটেড কুকি ন্যাশনাল আর্মির কমান্ডার থংমিনলিয়েন হাওকিপকে নিজের বাড়িতেই এক দেহরক্ষী গুলি করে খুন করেছে। এ দিকে, সেনার নিয়োগ পরীক্ষা দিতে গিয়ে পথ হারিয়ে কুকিদের হাতে বন্দি হওয়া দুই মেইতেই যুবক ওইনাম থৈথৈ সিংহ ও থকচম থৈথৈবা সিংহকে ছাড়েনি জঙ্গিরা। তাঁদের মুক্তির বিনিময়ে এনআইএ হেফাজতে থাকা কেএনএফ মিলিটারি কাউন্সিলের কমান্ডার মার্ক টি হাওকিপের মুক্তি ও ইম্ফলে কারাবন্দি ১৫ কুকিকে চূড়াচাঁদপুরে স্থানান্তরের দাবি জানিয়েছে কুকি জঙ্গিরা। তাদের সঙ্গে বোঝাপড়ার জন্য চূড়াচাঁদপুরে গিয়েছেন ডিজিপি রাজীব সিংহ। পুলিশ সূত্রে খবর, দু’জন শীঘ্রই ছাড়া পেতে পারেন।
শাসক শিবির মণিপুর সমস্যা নিয়ে সে ভাবে মুখ খুলতে আগ্রহী নয়। গত কাল কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গের মন্তব্যকে ঘিরে বিজেপি ও কংগ্রেসের মধ্যে যে বাগ্যুদ্ধ হয়, তাতে কংগ্রেস মুখপাত্র জয়রাম রমেশ বলেছিলেন, খড়্গের শারীরিক অবস্থা নিয়ে প্রশ্ন না করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের উচিত আগে মণিপুরে শান্তি ফেরাতে তৎপর হওয়া। কংগ্রেসের প্রতিটি ক্ষেত্রে মণিপুরের ছবি তুলে ধরার এই কৌশলে শাসক দল যে অস্বস্তিতে, তা বিজেপি সাংসদ রবিশঙ্কর প্রসাদের বক্তব্যেই স্পষ্ট। তিনি বলেন, ‘‘কংগ্রেসের মণিপুরের বাইরেও কিছু ভাবা উচিত। বিষয়টি স্পর্শকাতর এবং আমাদের একসঙ্গে কাজ করা উচিত। কংগ্রেস মণিপুরের সংঘর্ষে ইন্ধন জোগানো বন্ধ করুক।’’ সিপিএমের সদ্যসমাপ্ত কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকেও মণিপুরের প্রসঙ্গ উঠেছে। ওই রাজ্য ও কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের পরিস্থিতি মোকাবিলার পদ্ধতির এবং এখনও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সেখানে না যাওয়ার কড়া নিন্দা করেছে সিপিএম। তোলা হয়েছে মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংহের অপসারণের দাবিও। রবিশঙ্করের যদিও প্রশ্ন, প্রধানমন্ত্রীর সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে একজোট হয়ে লড়ার আহ্বানকে কি কংগ্রেস সমর্থন করেছিল? জম্মু-কাশ্মীরে কংগ্রেস যে দলের (ন্যাশনাল কনফারেন্স) সঙ্গে হাত মিলিয়ে লড়ছে, তারা বিশেষ মর্যাদা ফিরিয়ে আনার দাবিতে সরব। ফলে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করুক কংগ্রেস।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy