প্রতীকী ছবি।
বাংলাদেশের এনআরবি গ্লোবাল ব্যাঙ্কের ঋণ কেলেঙ্কারির তদন্তে শনিবার এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) হাতে গ্রেফতার হলেন ঘটনার মূল অভিযুক্ত প্রশান্তকুমার হালদার ওরফে পি কে। তিনি ছিলেন ওই ব্যাঙ্কের ম্যানেজিং ডিরেক্টর। প্রশান্ত ছাড়াও ধরা পড়েছেন পৃথ্বীশ হালদার, তাঁর স্ত্রী সুস্মিতা-সহ ৬ জন। এ দিনও রাজ্যের নানা প্রান্তে তল্লাশি চালিয়েছে ইডি।
পি কে-র গ্রেফতারির বিষয়টি তাঁরা বিভিন্ন মাধ্যমে জেনেছেন বলে শনিবার মন্তব্য করেন বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। বাংলাদেশের একটি সংবাদ মাধ্যমকে তিনি জানান, যে হেতু এ দেশে পি কে-র বিরুদ্ধে মামলা আছে, ফলে তাঁকে ফিরিয়ে আনা হবে। পি কে-র বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের প্রায় তিন ডজন মামলা ঝুলছে, প্রত্যেকটিতে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি রয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান কৌঁসুলি খুরশিদ আলম খান। পি কে-কে দেশে ফেরানোর প্রক্রিয়া নিয়ে তাঁর প্রতিক্রিয়া, “আমাদের সঙ্গে ভারতের যে প্রত্যর্পণ চুক্তি রয়েছে, তার আওতায় ওঁকে বাংলাদেশে ফেরানো হবে।” পি কে-র গ্রেফতারি নিয়ে ইডি এখনও তাঁদের সরকারি ভাবে কিছু জানায়নি বলে বাংলাদেশ প্রশাসনের একটি সূত্রে দাবি করা হয়েছে। বিষয়টি জানার পরেই পি কে-কে ফিরে পেতে আইনি প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে জানাচ্ছে ওই সূত্র।
বাংলাদেশের ওই ব্যাঙ্কের প্রায় চার হাজার কোটি টাকা হাওয়ালার মাধ্যমে পাচার হয়েছে বলে তদন্তে উঠে এসেছে। টাকার একটা বড় অংশ এ দেশেও বিভিন্ন সম্পত্তিতে বিনিয়োগ করা হয়েছে বলে ইডি-র কাছে অভিযোগ দায়ের হয়। তদন্তকারীরা জানতে পারছেন, এ দেশের টাকাও হাওয়ালা মারফত বাংলাদেশে পাচার হয়েছিল। সেখানে নানা ভুয়ো অ্যাকাউন্টে তা জমা পড়ে। ইডি-র একটি সূত্র জানাচ্ছে, মাস দুয়েক আগে বাংলাদেশের আর্থিক অপরাধ দমন শাখার তরফে বিষয়টি তাদের জানানো হয়।
এই ঘটনায় বাংলাদেশে আগেই ধরা পড়েছিল সে দেশের নাগরিক সুকুমার মৃধা। উত্তর ২৪ পরগনার অশোকনগর-সহ নানা এলাকায় সম্পত্তি আছে সুকুমারের। তদন্তে নেমে তার সঙ্গে পি কে-র ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের কথা জানতে পারে ইডি। অশোকনগরে পি কে-রও বাড়ি রয়েছে। সুকুমার এই জালিয়াতির অন্যতম বড় মাথা বলে দাবি বাংলাদেশের আর্থিক অপরাধ দমন শাখার গোয়েন্দাদের।
শুক্রবার সকাল থেকে অশোকনগরে সুকমারের বাড়ি ও কলকাতা-সহ একাধিক জায়গায় তাঁর অফিসে তল্লাশি চালায় ইডি। অশোকনগরের বাড়িটি ‘সিল’ করে দেওয়া হয়। তাঁর বিভিন্ন অফিস থেকে পাওয়া গুরুত্বপূর্ণ কিছু নথি যাচাইয়ের পরে গ্রেফতার হয়েছেন পি কে-সহ ছ’জন। অশোকনগরে সুকুমারের আরও একটি সম্পত্তির খোঁজ পেয়েছে ইডি। মানিকতলা এলাকায় যশোর রোডের পাশে ২০০৮ সালে ২৪ লক্ষ টাকার বিনিময়ে চার কাঠা জমি কিনেছিলেন তিনি।
তদন্তকারীদের দাবি, উত্তর ২৪ পরগনার এক প্রভাবশালী নেতা-সহ একাধিক নেতার সঙ্গে সুকুমারের ঘনিষ্ঠতা ছিল। ২০১১ সালের পর থেকে গরু পাচারের লভ্যাংশের একটা বড় অংশ বাংলাদেশে পাচার করা হয়েছে। গরু পাচারের লভ্যাংশের একটি বড় অংশ উত্তর ২৪ পরগনার একাধিক প্রভাবশালী নেতার কাছেও পৌঁছত বলে তদন্তে উঠে এসেছে। সুকুমার মারফত টাকা হাওয়ালা হয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যাঙ্কেও জমা হত। যা নানা সম্পত্তিতে বিনিয়োগ করা হয়ে থাকতে পারে বলে অনুমান তদন্তকারীদের।
অশোকনগরে প্রথমে তিনটি বাড়িতে তল্লাশি করে ইডি। রাতে আরও একটি বাড়িতে তল্লাশি হয়। ধৃত স্বপন মিত্র সুকুমারের আত্মীয়। তার বাড়িতে প্রায় ১৮ ঘণ্টা ধরে তল্লাশি চালিয়ে বেশ কিছু নথি সংগ্রহ করেছে ইডি। আর এক অভিযুক্ত প্রণব হালদারের বাড়িতে ইডি ঘণ্টা চারেক তল্লাশি চালিয়েছে। সুকুমারের মেয়ে অনিন্দিতাও এই চক্রের অংশ হিসেবে বাংলাদেশে গ্রেফতার হয়েছেন। অনিন্দিতার স্বামী সঞ্জীব হালদারের বাড়িতে শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে প্রায় ৭ ঘণ্টা তল্লাশি চালায় ইডি। তাঁর মোবাইল-সহ বেশ কিছু নথি বাজেয়াপ্ত করেছেন তদন্তকারীরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy